Exclusive: ‘দাদি ভরসা দেওয়ার পরেও বাদ পড়লাম!’ ফের বিস্ফোরক Wriddhiman Saha
রাজনীতির শিকার হলেন ঋদ্ধিমান সাহা।
সব্যসাচী বাগচী: যে মানুষটা আজীবন বিতর্ক থেকে দূরে থেকেছেন, সেই লোকটা কিনা কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে গেলেন! তাঁকে জড়িয়ে ফেলা হল। লেখা ভাল রাজনীতির শিকার হলেন ঋদ্ধিমান সাহা। ফলে না চাইলেও তাঁর জীবনের গত কয়েকটা দিন একের পর এক বিতর্ক যোগ হল। তাই আর ‘ভাল ছেলে’ হয়ে না থেকে কথার বিস্ফোরণ ঘটালেন এই বঙ্গ উইকেটকিপার।
ঋদ্ধির দাবি তাঁর প্রিয় ‘দাদি’ (পড়ুন বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) নিজের কথা রাখেননি। ঋদ্ধির আরও দাবি টিম ইন্ডিয়ার হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় তাঁকে পরোক্ষভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেই অপমানের কথা টেলিফোনে ২৪ ঘণ্টাকে শোনালেন ‘সুপারম্যান’।
প্রশ্ন: আপনাকে কী কথা দিয়েছিলেন বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়?
ঋদ্ধি: কানপুর টেস্টের আগে আমার কাঁধে অস্ত্রোপচার হওয়ার জন্য আমি প্রথম একাদশে ছিলাম না। ঋষভ পন্থ একবাগাড়ে খেলে যাচ্ছিল। কিন্তু ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে বিশ্রামে যেতেই আমি সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিলাম। কানপুর টেস্টে ঘাড়ে ব্যথা নিয়ে ৬১ রান করার পর দাদি নিজে থেকে হোয়াটসঅ্যাপ করে বলেছিল ‘ওয়েল প্লেইড’। সঙ্গে লিখেছিল, ‘যতদিন আমি আছি, তোকে কিছু ভাবতে হবে না।‘ দাদির কথা শুনে খুব স্বাভাবিক ভাবেই মনোবল বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের শেষে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে পুরো ছবিটা বদলে গেল!মাত্র একটা সিরিজের মাঝে আমার বয়স অনেকটা বেড়ে গেল নাকি!
প্রশ্ন: রাহুল দ্রাবিড় কী আপনাকে কোনও বার্তা দিয়েছিলেন?
ঋদ্ধি: দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ হারের পর রাহুল ভাই আমাকে আলাদা ভাবে একটা ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। সেই সময় আমি ভেবেছিলাম সেই সিরিজে খেলাতে পারেনি বলে কিছু হয়তো বলবেন। কিন্তু ওঁর কথা শোনার পর আমি তো আকাশ থেকে পড়েছিলাম।
প্রশ্ন: রাহুল দ্রাবিড় কী আপনাকে অবসর নেওয়ার কথা সরাসরি বলেছিলেন?
ঋদ্ধি: রাহুল ভাই বলেছিল, ‘কীভাবে তোমাকে কথাটা বলব বুঝতে পারছি না। জাতীয় নির্বাচকরা অনেকদিন ধরেই নতুন উইকেটকিপারকে দলে নেওয়ার চিন্তা করছিল। তোমার অভিজ্ঞতা রয়েছে, বয়স কিংবা ফিটনেস কোনও ইস্যু নয়। ৪০টি টেস্ট খেলার পরেও তোমাকে বসে থাকতে হচ্ছে। এটা দেখে খারাপ লাগে। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট নতুন রক্ত চাইছে। তাই শ্রীলঙ্কা সিরিজে তুমি দলে না থাকলে প্লিজ মন খারাপ করো না। বরং চাইলে অন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারো!’
প্রশ্ন: অন্য রকম সিদ্ধান্ত মানে?
ঋদ্ধি: রাহুল ভাই তো ভদ্রলোক। ওঁ আমাকে ঘুরিয়ে অবসর নেওয়ার কথা বলেছিল। ওঁ কথাটা সরাসরি না বললেও আমার বুঝতে অসুবিধা হয়নি। কারণ আমিও তো অনেকগুলো বছর কাটিয়ে দিলাম।
প্রশ্ন: সেই পরিস্থিতিতে আপনি কী জবাব দিয়েছিলেন?
ঋদ্ধি: অবসর নেওয়া একেবারে আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। যত দিন শরীর দেবে, খেলব। কারণ ছোটবেলা থেকে আনন্দের জন্য ক্রিকেট খেলেছি। তাই ভারতীয় দলে সুযোগ না পেলেও খেলা চালিয়ে যাব। কারণ আইপিএল, রাজ্য দল ও ক্লাব ক্রিকেট আছে। তবে আমাদের দলেই শিখর ধওয়ান, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো একাধিক ক্রিকেটার আছে যারা আমার বয়সী। তারা তো অনায়াসে খেলে যাচ্ছে। নির্বাচকদের হয়তো আমাকে আর ভাল লাগেনি। তাই আমাকে বাদ দিয়ে নতুন প্রতিভা দেখে নিতে চাইছে।
প্রশ্ন: পারফরম্যান্স, ফিটনেস না বয়স? কোন কারণে আপনি বাদ যাচ্ছেন, সেটা জানতে ইচ্ছা হয়নি?
ঋদ্ধি: রাহুল ভাইকে সেই সময়ই জিজ্ঞেস করেছিলাম। ওঁ আমার পারফরম্যান্স, ফিটনেস ও বয়স নিয়ে একটা প্রশ্নও তোলেননি। শুধু বলেছিলেন, ‘আমরা তরুণ প্রজন্মকে দেখে নিতে চাই’।
প্রশ্ন: রাহুল দ্রাবিড় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে আপনার জন্য টেস্ট দলের দরজা চিরতরে বন্ধ। তাহলে চেতন শর্মা আপনাকে ফোন করে রঞ্জি খেলার কথা কেন জানতে চাইলেন?
ঋদ্ধি: বাংলার রঞ্জি দল নির্বাচনের ঠিক দুই দিন আগে চেতন ভাই ফোন করে জিজ্ঞেস করে যে, ‘ঋদ্ধি তুই রঞ্জি খেলছিস?’ তখন আমি রঞ্জি না খেলার কারণ জানিয়ে দিয়েছিলাম। আমার কথা শুনে চেতন ভাই হুবহু রাহুল ভাইয়ের বুলি আউরে যান। এবং যোগ করেন যে শুধু শ্রীলঙ্কা সিরিজ নয়, আমাকে আর কোনওদিন টেস্ট দলের জন্য ভাবনাচিন্তা করা হবে না। নতুন কোনও কিপারকে সুযোগ দেওয়া হবে।
প্রশ্ন: কিন্তু শনিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে চেতন শর্মা তো একেবারে উল্টো কথা বলেছেন। তাঁর বক্তব্য জাতীয় দলে জায়গা করতে হলে রঞ্জি খেলা আবশ্যিক।
ঋদ্ধি: চেতন ভাই সাংবাদিক সম্মেলনে যাই বলে থাকুক আমার কিছু যায় আসে না। আমার জন্য যে টেস্ট দলের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেটা আমি স্পষ্ট শুনেছি। সেই সময় মোবাইলের স্পিকার অন করা ছিল। দেবারতিও কথাটা শুনেছে। তাই জাতীয় দল থেকে ছাঁটাই হওয়া ক্রিকেটারের রঞ্জি খেলা নিয়ে প্রশ্ন করা খেজুরে গল্প ছাড়া কিছুই নয়। আমার ধারণা চেতন ভাই-কে কেউ ফোন করিয়েছিল।
প্রশ্ন: অনেকের ধারণা রঞ্জি না খেলে আপনি নিজের বিপদ ডেকে আনলেন। আপনি কি সেটা মানেন?
ঋদ্ধি: একেবারেই মানি না। কারণ আমার আন্তর্জাতিক কেরিয়ার থামিয়ে দেওয়ার মঞ্চ তো দক্ষিণ আফ্রিকায় গড়া হয়ে গিয়েছিল। টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে হিসেবের মধ্যেই রাখতে চায়নি। এরপর আমি রঞ্জি খেলি না ঘরে বসে থাকি তাতে জাতীয় দল কিংবা জাতীয় নির্বাচকদের কি যায় আসে! মনে করুন এরপরেও আমি রঞ্জি খেলতে নেমে পরপর দুটি শতরান করলাম। কিংবা দারুণ কয়েকটা ক্যাচ ধরলাম। এরপরেও আমাকে দলে ফেরানো হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না! এত বছর পর পারফর্ম করার পরেও আমি রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থেকেছি। এখন আর আমার কথা ভেবে কি লাভ!
প্রশ্ন: কোনটা বেশি আঘাত দিয়েছে? সৌরভের কথা না রাখতে পারা? না রাহুলের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া?
ঋদ্ধি: অবশ্যই দাদির ব্যাপারটা বেশি আঘাত দিয়েছে। কারণ দাদি নিজের উদ্যোগে মেসেজ করেছিল। কিন্তু এরপরেও এমন ব্যবহার পেলাম। আজীবন কেউ খেলবে না। কিন্তু কাউকে বিদায় জানানোর একটা পদ্ধতি তো আছে। আমি এতটাও খারাপ পারফরম্যান্স করিনি যে আমাকে একেবারে তাড়িয়ে দেবে!
প্রশ্ন: এখন তাহলে নিজের কেরিয়ার কীভাবে দেখছেন?
ঋদ্ধি: আমি তো আজীবন খেলব না! তবে আপাতত আইপএল নিয়ে ভাবছি। তাছাড়া বাংলার হয়ে মাঠে নামতে পারি। ক্লাব ক্রিকেট তো আছেই। দেশের হয়ে টেস্ট খেলেও তো অনেকবার ক্লাব ম্যাচ খেলেছি। বাকি সময়টা আনন্দের সঙ্গে খেলতে চাই।
প্রশ্ন: আপনি কি এরপরেও এই মরশুমে রঞ্জি খেলবেন?
ঋদ্ধি: এই মুহূর্তে পরিবার ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। বাংলা যদি নক-আউটে কোয়ালিফাই করে তখন ভাবনাচিন্তা করা যাবে।
আরও পড়ুন: বাদ যাওয়া Wriddhiman Saha-র কামব্যাক নিয়ে অদ্ভুত যুক্তি দিল BCCI
আরও পড়ুন: INDvsSL: Virat Kohli পরবর্তী যুগে টেস্ট দলের নতুন নেতা Rohit Sharma