FIFA World Cup 2022, POR vs KOR: শেষ মুহূর্তের থ্রিলারে ফের ইতিহাস! ছন্দহীন রোনাল্ডোর পর্তুগালকে হারিয়ে নক আউটে দক্ষিণ কোরিয়া
ঘানার বিরুদ্ধে ৮৮ মিনিট। উরুগুয়ের বিরুদ্ধে ৮২ মিনিট। আর এবার দক্ষিণ কোরিয়া বিরুদ্ধে ৬৬ মিনিট। এখনও পর্যন্ত চলতি বিশ্বকাপে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ম্যাচ টাইম মোট ২৩৬ মিনিট।
সব্যসাচী বাগচী
দক্ষিণ কোরিয়া: ২ ('২৭ কিম ইউং ওন, '৯১ ওয়াং হি চ্যান)
পর্তুগাল: ১ ('৫ রিকার্ডো হোর্তা)
উরুগুয়েকে (Uruguay) ২-০ গোলে হারিয়ে আগেই প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গিয়েছিল পর্তুগাল (Portugal)। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korea) বিরুদ্ধে এই ম্যাচটা ছিল নিয়মরক্ষার। তবে যারা ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে ভালোবাসেন, তাঁরা দুই দলের লড়াইয়ের নেপথ্যে বদলার গন্ধও পেয়েছিলেন। ২০ বছর আগে এশিয়ার এই দলের কাছে লজ্জাজনক পরাজয় হজম করেছিল তারকাখচিত পর্তুগাল। এরমধ্যে আবার পর্তুগীজ অধিনায়ক ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo) মাঠে নেমেছিলেন। ফলে পর্তুগীজ সমর্থকরা সেই বদলার সঙ্গে তাঁদের ইষ্টদেবতার শাসন দেখতে চেয়েছিল। সেটা আর দেখা গেল না। বরং সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে একেবারে শেষ মুহূর্তে গোল দেগে ২-১ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নিল 'রেড ড্রাগন'-রা। ৩ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে পরের রাউন্ডে গেল পর্তুগাল। কিন্তু মন ভরাতে পারল না। বরং শেষ মুহূর্তে ওয়াং হি চ্যানের (Hwang Hee-chan) গোলে লিড নিয়ে 'এইচ' গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় দল হিসেবে নক আউটে জায়গা করে নিল দক্ষিণ কোরিয়া।
ঘানার বিরুদ্ধে ৮৮ মিনিট। উরুগুয়ের বিরুদ্ধে ৮২ মিনিট। আর এবার দক্ষিণ কোরিয়া বিরুদ্ধে ৬৬ মিনিট। এখনও পর্যন্ত চলতি বিশ্বকাপে (FIFA World Cup 2022) রোনাল্ডোর ম্যাচ টাইম মোট ২৩৬ মিনিট। ঘানার বিরুদ্ধে পেনাল্টি থেকে গোল করার পরে বিশ্বকাপে গোলের সংখ্যা হয়েছিল ৮। অর্থাৎ আর এক গোল করলেই ছুঁয়ে ফেলবেন ইউসেবিওকে (Eusebio)। কিন্তু তিনি নিজের স্তরের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না পাঁচ বারের ব্যালন ডি'ওর জয়ী। তাই তো বাধ্য হয়ে তাঁকে মাঠ তুলে নিচ্ছেন কোচ ফের্নান্দো স্যান্টোস (Fernando Santos)। এহেন মহাতারকার খারাপ ফর্ম দলের খেলায় ও স্কোরলাইনে প্রতিফলিত হচ্ছে।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। সেটা বজায় রেখেই যে দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে পর্তুগীজদের উপর ফের একবার এশিয়ার 'রেড ড্রাগন'-রা দাপট দেখা গেল। এই ম্যাচটার আগে দুই গোলার্ধের দুই দেশ মাত্র একবার ৯০ মিনিটের যুদ্ধে লড়েছিল। সেবার ১-০ ব্যবধানে জিতে মাঠ ছেড়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এবারও স্কোরলাইন এশিয়ার দলের নামে অনেক লেখা থাকতেই পারত। কিন্তু অফ সাইডের জন্য গোল বাতিল করে দেন রেফারি। এরপর সমতা ফেরালেও লিড পাচ্ছিল না পাওলো বেন্টোর (Paulo Bento) ছেলেরা। তবে ৯১ মিনিটে ওয়াং হি চ্যানের গোলে ২-১ ব্যবধানে জিতে গেল দক্ষিণ কোরিয়া। আর এই জয়ের ফলে পর্তুগীজদের বিরুদ্ধে লিড বেড়ে হল ২-০।
ঠিক ২০ বছর আগের কথা। তারিখ ১৪ জুন। দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবল ইতিহাসে সেটা ছিল 'রেড লেটার ডে'। ২০০২ সালের বিশ্বকাপ জাপানের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। সেবারও পর্তুগালের বিরুদ্ধে লিগ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে ইনচিয়ন স্টেডিয়ামে খেলতে নেমেছিল এশিয়ার এই দল। ডাচ কোচ গাস হিন্ডিকের তত্বাবধানে। লুইস ফিগো, পাউলেতা, পেতিত, নুনো গোমেজের মতো একাধিক তারকা থাকলেও লাভ হয়নি। জোড়া লাল কার্ডের জন্য ন'জন হয়ে যাওয়া ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল 'রেড ড্রাগন'। গোলদাতা ছিলেন পার্ক জি সাং।
সেটা তো ইতিহাসের কথা। বাস্তবের সঙ্গে যে ইতিহাসের সবসময় মিল থাকে না। তাই তো ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যায় পর্তুগাল। ৫ মিনিটে রিকার্ডো হোর্তার (Ricardo Horta) গোলে। রিকার্ডো হোর্তা ক্লোজ রেঞ্জ থেকে সূক্ষ্ম ভলিতে এগিয়ে দেন পর্তুগালকে। দিয়োগো দালত অবশ্য এই গোলটি তৈরি করার প্রধান কারিগর। তিনি লম্বা পাস যেভাবে ধরেছেন এবং বলটিকে টেনে নিয়ে গিয়ে, হোর্তাকে গোলের সামনে পাস বাড়িয়েছেন, তা অতুলনীয়। এক কথায় চোখের শান্তি। হোর্তাও জালে বল জড়াতে কোনও ভুল করেননি। এগিয়ে যায় রোনাল্ডোর দল।
গোল খেয়ে দক্ষিণ কোরিয়াও সবুজ ঘাসে গতির ঝড় তুলছিল। ১৭ মিনিটে পর্তুগালের রক্ষণ ও গোলকিপার দিয়োগো কোস্তাকে বোকা বানিয়ে গোল করেন কিম-জিন-সু। কিন্তু অফসাইডের জন্য সেই গোল বাতিল হয়ে যায়। তবে থেমে থাকেনি এশিয়ার জায়ান্টরা। ২৭ দুরন্ত গোল করলেন কিম ইউং ওন (Kim Young-gwon)। পর্তুগালের মহাতারকা রোনাল্ডোর ভুলে গোল হজম করল তাঁর দল। বাঁ দিক থেকে উড়ে আসা বল রোনাল্ডোর পিঠে লেগে গোল লাইনের সামনে পড়ে। এতটুকু সময় নষ্ট না করে কিম ইউং ওন টোকা দিয়ে জালে জড়ান।
এমনিতেই চলতি কাপ যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত 'সি আর সেভেন'-কে আগুনে ফর্মে দেখা যাচ্ছে না। গত দুই ম্যাচে 'প্লে-অ্যাক্টিং' করার দায়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও বিপক্ষ দলগুলোর কাছে প্রবলভাবে সমালোচিত হচ্ছেন। এই ম্যাচটার আগে দু'দিন অনুশীলন করেননি। শোনা যাচ্ছিল তাঁর নাকি হালকা চোট রয়েছে। দলের অধিনায়ককে খেলানো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন খোদ কোচ ফের্নান্দো স্যান্টোস।
উরুগুয়ের বিরুদ্ধে ব্রুনো ফার্নান্ডেজের গোলের পর রোনাল্ডো যেন কেমন গুটিয়ে গিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর গোল করার আকুতি বারবার ধরা পড়ছিল। নিজের ভুলে গোল হজম করার পর প্রথমার্ধেই দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু বিপক্ষের গোলকিপার ভিনিথাকে টপকে বলকে জালে জড়াতে পারলেন না। বারবার আটকে গেলেন পর্তুগীজ অধিনায়ক। স্বভাবতই হেরে গেল তাঁর দল। তবুও নক আউটে যেতে সমস্যা হল না। কারণ আগেই যে রোনাল্ডোর দল ঘানা ও উরুগুয়েকে হারিয়েছিল। আর শেষ মুহূর্তের থ্রিলারে গোল করে এবং লিড নিয়ে নক আউটে জায়গা করে নিল দক্ষিণ কোরিয়া।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)