৬২-এর অপেক্ষায় দেশের হাত এখন জড়ো, শেষ টেস্টে সচিন ডনের রাস্তায় হাঁটলেন না
শেষ টেস্টে ডন ব্র্যাডম্যানের যেটা হয়েছিল, সেই দুর্বলতা কাছে ঘেঁষতে দিলেন না সচিন তেন্ডুলকর। শেষ টেস্টে খেলতে নামার সময় চোখে জল এসে গিয়েছিল ডন ব্র্যাডম্যানের , সেই চোখের জলের জন্য নাকি হোলিসের বলটা দেখতে পাননি। আর তাই ওভালে সেই টেস্টে শূন্য রানের ফিরে যেতে হয়েছিল ব্র্যাডম্যানকে। সচিনের ক্ষেত্রে কিন্তু তেমন কিছু হল না।
পার্থ প্রতিম চন্দ্র
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ১৮২। ভারত-১৫৭/২ (সচিন ৩৮ অপ)। ভারত ২৫ রানে পিছিয়ে
শেষ টেস্টে ডন ব্র্যাডম্যানের যেটা হয়েছিল, সেই দুর্বলতা কাছে ঘেঁষতে দিলেন না সচিন তেন্ডুলকর। শেষ টেস্টে খেলতে নামার সময় চোখে জল এসে গিয়েছিল ডন ব্র্যাডম্যানের , সেই চোখের জলের জন্য নাকি হোলিসের বলটা দেখতে পাননি। আর তাই ওভালে সেই টেস্টে শূন্য রানের ফিরে যেতে হয়েছিল ব্র্যাডম্যানকে। সচিনের ক্ষেত্রে কিন্তু তেমন কিছু হল না।
দেশজুড়ে, ক্রিকেট বিশ্ব জুড়ে আবেগের মাঝে, ২৪ বছর ধরে খেলার পর ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাটাও বিন্দুমাত্র টলাতে পারল না সচিন তেন্ডুলকরকে। শেষ টেস্টে শত আবেগ, হাজারও কান্নার শব্দেও তিনি থাকলেন সেই সচিনেই। মহান মানুষদের নিজেদের ক্ষেত্রে জীবনের শেষটা ভাল হয় না এই মিথটা সচিন তেন্ডুলকরের ক্ষেত্রে সত্যি হচ্ছে। ঘটনায় ভরা ওয়াংখেড়ের প্রথম দিনের শেষে সচিন অপরাজিত থাকলেন ৩৮ রানে। দেশের সবচয়ে বড় প্রশ্ন, প্রার্থনা এখন একটাই শতরান হবে তো!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং প্রমাণ করে দিল সচিন তেন্ডুলকর আর দ্বিতীয় ইনিংসে নামার সুযোগ পাচ্ছেন না। তার মানে দাঁড়াল একটাই। আগামিকাল শুক্রবার ব্যাটসম্যান সচিনের জীবনে দাঁড়ি পড়তে চলেছে।
আজ সচিনকে নিয়ে ওয়াংখেড়েতে যা হল তাতে একটা বিষয় পরিষ্কার। বিদায় মঞ্চে আবেগ কত দূর যেতে পারে তার একটা বড় মাইলস্টোন হয়ে থাকল মুম্বই। শ্রীনিবাসনের উপহার তুলে দেওয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের দারুণ একটা উপহার, গোটা স্টেডিয়ামের সচিন সচিন চিত্কার নয়। এই আবেগের ফলক গাঁথা থাকল অনেক গভীরে। আমির খান যে অবসরের মঞ্চে এসে প্রায় আবেগে স্তব্ধ হয়ে গেলেন। সচিনের মা যখন ছেলের পোস্টার হাতে নিলেন। ছোটবেলার কোচ রমাকান্ত আচরেকর যখন ছাত্র চার মারতেই হাততালি দিয়ে উঠলেন। সারাদিনে সচিন আবেগের যত ছবি উঠল তা মজুত রাখতে কত জিবি-র পেন ড্রাইভ লাগবে তার ঠিক নেই। আসলে বোধহয় এত আবেগের ছবি হয় না।
শুধু মুম্বই ভারত নয় সচিন বন্দনায় যোগ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। ওবামা বললেন, "আমি ক্রিকেট বুঝি না ঠিকই , কিন্তু সচিন ব্যাট করলে টিভিতে অবশ্যই দেখি। এবার বুঝতে পারছি আজ আমাদের দেশের আউটপুট ২ শতাংশ কমে গেল কেন।" কোনও একজন ক্রিকেটার তো বটেই কোনও ক্রীড়াবিদের অবসর নিয়ে এত বড় মাপের এক রাষ্ট্রনেতার মুখে এত বড় মাপের প্রশংসা শুনেছেন কি!
যাই হোক ম্যাচের কথায় আসা যাক। টসে জিতে ধোনি যখন বল করার সিদ্দান্ত নিলেন অনেকেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছিলেন, একটু চাপা সমালোচনাও হয়েছিল। কিন্তু প্রজ্ঞান ওঝার পাঁচ উইকেট, অশ্বিনের তিন উইকেট, আর সামির গেইল ঝটকাতে সব চাপা পড়ে গেল। ১৮২ রানে অলআউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
জবাবে শুরুটা দারুণ করেছিলেন শিখর ধাওয়ান, মুরলি বিজয়। কিন্তু ইডেনে ভারতীদের পা কাঁপিয়ে দেওয়া সিলিংফোর্ড আক্রমণে আসতেই ধাওয়ান (৩৩), বিজয় (৪৩) আউট হয়ে গেলেন। মুরলি বিজয় আউট হওয়ার পরই দলের স্কোর যখন ৭৭ রানে দুই উইকেট তখন নামলেন সচিন।
হয়তো শেষবার...বিপক্ষের গার্ড অফ অনার নিয়ে নামলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁকে খালি হাতে ফেরাতে তৈরি থাকলেন স্যামি, গেইল, সিলিংফোর্ডরা। তাঁকে আটকাতে তাঁর সামনে রাখা হল পাঁচ ফিল্ডার। চতুর্থ বল খেলার পর শূন্যর গণ্ডি টপকালেন। সেই শুরু...কাট, অফ ড্রাইভ, ফ্লিক, স্ট্রেট ড্রাইভে জীবনের বিদায়ী টেস্টে রাঙিয়ে দিলেন...বুঝিয়ে দিলেন আবেগে চোখে জল আসা নয় দৃঢ়তা আসায় বিশ্বাসী তিনি। আজ মারলেন ৬ টা বাউন্ডারি। আধ ডজন বাউন্ডারিতে গোটা ওয়াংখেড়েতে যত আওয়াজ হল তা গোটা কলকাতায় কালীপুজোয় এত শব্দের বাজি ফাটেনি।
কমেন্ট্রি বক্সে বসে শেন ওয়ার্ন তো বলছিলেন, তিনি নাকি আওয়াজের চোটে কিছু শুনতেই পেলেন না। তবে একটা আওয়াজ শেন হয়তো শুনতে পাননি.. ১২০ কোটির দেশের হূদয়ের আওয়াজ। যে মানুষটা ২৪ বছর ধরে এতগুলো লোকের প্রত্যাশার চাপ বয়ে গিয়েছে, তিনি এবার বাইশ গজে ছেড়ে চলে যাবেন। এমন সময়ে দেশের তো কাঁদার কথা.. কিন্তু না ভারত আজ প্রার্থনায় ব্যস্ত। বিদায়, ফেয়ারওয়েল, কান্না ওসব কালকের জন্য তোলা থাক। আজ শুধু শতরানের প্রার্থনা থাকুক। এতগুলো বছরের অভ্যাস তো শেষের দিনগুলোতেও যাচ্ছে না।
উপসংহার-আজ পর্যন্ত টেস্টে ক্রিকেটের এতদিনের ইতিহাসে শেষ টেস্ট ম্যাচে শতরান করার কৃতিত্ব আছে মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যানের। তাঁর হলেন গ্রেগ চ্যাপেল, বিজয় মঞ্জেরেকর, বিজয় মার্চেন্ট। সচিন সেই ক্লাবের সদস্য হবেন কি?
গ্যালারিতে সচিন তেন্ডুলকরের মা