U19 World Cup, INDU19vsENGU19: স্যর ভিভের মাঠে ‘ভারত উদয়’, দাদুর মতোই সাহেব সংহার করলেন Raj Bawa
পঞ্চমবার যুব বিশ্বকাপ জিতল ভারত।
সব্যসাচী বাগচী: ছেলেটার লড়াকু মনোভাব পারিবারিক সুত্রে পাওয়া। ওঁর ঠাকুরদা প্রয়াত ত্রিলোচন বাওয়া আজ থেকে ৭৪ বছর আগে সাহেবদের বিরুদ্ধে স্টিক হাতে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। নাতি এ বার সেই বিপ্লবের ব্যাটনটা ধরলেন। তাঁর দুরন্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের সৌজন্যে। রাজ অঙ্গদ বাওয়া বলে-ব্যাটে জ্বলে উঠতেই ভারতের ঘরে এল সর্বাধিক পঞ্চমবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। সঙ্গে প্রশংসা করতে হবে নিশান্ত সান্ধুর। ৫০ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করে এলেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪ উইকেটে জিতে অ্যান্টিগার স্যর ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ঘটল ‘ভারত উদয়’।
আধুনিক যুগের ক্রিকেটে ১৯০ রান চেজ করা জলভাতের মতো ব্যাপার। তবে ভারতের জয় এত সহজেও আসেনি। বরং ম্যাচের পরতে পরতে ছিল উত্তেজনা। ইংল্যান্ড ব্যাটিংকে শুরু থেকেই চাপে রেখেছিলেন রাজ বাওয়া ও বঙ্গ জোরে বোলার রবি কুমার। একটা সময় চলে গিয়েছিল ৯১ রানে ৭ উইকেট। সেখান থেকে ৯৫ রান করে লড়লেন জেমস রিউ।
ভারতের ব্যাটিংয়ের শুরুটাও অবশ্য ভাল হয়নি। ৪৯ রানের মাথায় ফিরে যান দুই ওপেনার। এরপর সেমি ফাইনালের মতো হাল ধরেন সহ অধিনায়ক সেখ রশিদ। তাঁকে সঙ্গত দিতে থাকেন অধিনায়ক যশ ধুল। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গত ম্যাচের মতো মেগা ফাইনালেও অর্ধ শতরান করে ফেললেন রশিদ। তখন মনে করা হচ্ছিল এই দুই তরুণ ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়বেন। ঠিক সেই সময় ঘটল বিপত্তি। দ্রুত ফিরে গেলেন রশিদ (৫০) ও যশ (১৭)।
তবে ইংল্যান্ডকে এ বারও খেলায় ফিরতে দিলেন না রাজ। এ বার ব্যাট হাতে দিলেন জবাব। নিশান্ত সান্ধুকে নিয়ে পালটা মার দিতে শুরু করলেন। দুই তরুণের লড়াইয়ের সুবাদে জয়ের অনেকটা কাছে পৌঁছে গেল ভারতীয় দল। তবে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়তে পারলেন না প্রাক্তন অলিম্পিয়ানের নাতি। ফিরলেন ৫৪ বলে ৩৫ রান করে। তবে ততক্ষণে দলের জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। শুধু প্রথামাফিক হাতে কাপ তুলে নেওয়ার অপেক্ষা।
অ্যান্টিগার স্যর ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামের বাইশ গজে কোর্টনি ওয়ালস, কার্টলি অ্যামব্রোসকে মনে করালেন রাজা বাওয়া ও রবি কুমার। রাজ নিলেন ৩১ রানে ৫ উইকেট। রবিও পিছিয়ে ছিলেন না। তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আগুন ঝরিয়ে নিলেন ৩৪ রানে ৪ উইকেট। এই দুজনের আগুনে পেসের দাপটে ১৮৯ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল সাহেবরা। তবে এরমধ্যেও হাল ছাড়েননি চারে ব্যাট করতে নামা জেমস রিউ। চাপের মুখে তাঁর ৯৫ রানের জন্য ভারতের কাজ বাড়ল। ফলে মেগা ফাইনালে ভারতের সামনে টার্গেট দাঁড়াল ১৯০ রান।
আরও পড়ুন: INDvsWI, Team India’s 1000th ODI: ফের বাইশ গজে ফিরছে ‘কুল-চা’ জুটি, স্পষ্ট করলেন Rohit Sharma
টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত ইংল্যান্ডের কাছে বুমেরাং হয়ে গেল। দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় ইংরেজরা। জেকব বেথেলকে আউট করেন রবি কুমার। নিজের দ্বিতীয় ওভারে ফের আঘাত হানলেন বাংলার এই বাঁহাতি জোরে বোলার। ফিরিয়ে দেন বিপক্ষের অধিনায়ক টম প্রিস্টকে। ইংল্যান্ড তখন ১৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে।
এরপর ইনিংসের হাল ধরেন র্জজ থমাস। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি প্রতিরোধ। লাগাতার ডট বলের চাপে বড় শট খেলতে যান ইংরেজ থমাস। রাজ বাওয়ার বলে যশ ধুলকে ক্যাচ দিয়ে ২৭ রানে আউট হয়ে যান র্জজ থমাস। ব্যাকফুটে চলে যাওয়া ইংল্যান্ডের সমস্যা অবশ্য এখানেই শেষ হয়নি। ১৩তম ওভারের শেষ দুই বলে ফের ধাক্কা দেন রাজ। ফলে ৪৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বেকায়দায় পড়ে যায় ইংল্যান্ড।
বিশেষ করে ১২.৫ ওভারে ইংরেজ ব্যাটার জর্জ লাক্সটনকে আউট করার পর সবার প্রশংসা আদায় করেছেন রাজ। ক্রিজে আসেন বেল। প্রথম বলটাই এমন করেন বাওয়া, যে বলে উইকেট লেখা ছিল। শর্ট বল করেন বাওয়া। বেলের হেলমেটের গ্রিলের দিকে বল ধেয়ে আসে। কিছুটা লাফিয়েও প্রায় মাথার কাছে উচ্চতায় ইংরেজ খেলোয়াড়ের ব্যাটে বল লাগে। উইকেটের পিছনে সহজ ক্যাচ নেন দীনেশ বানা। বাওয়ার সেই বলে রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে যান ধারাভাষ্যকাররাও।
তবে ৯১ রানে ৭ উইকেট হারালেও হাল ছেড়ে দেননি বাঁহাতি জেমস রিউ। জেমস সেলসকে সঙ্গে নিয়ে অষ্ঠম উইকেটে যোগ করেন ৯৩ রান যোগ করলেন। কিন্তু রবির হাতে বল তুলে দেওয়ার পরেই ম্যাচে ফিরে এল ভারত। ফর্মের তুঙ্গে থাকা জেমস রিউকে আউট করতেই ইংল্যান্ডের বাকি তিন উইকেট চোখের নিমেশে চলে গেল। ফলে পঞ্চমবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতার জন্য ভারতের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছিল ১৯০ রান। সেটা অবশ্য …উইকেটে জিতে ঘটল ‘ভারত উদয়’।
১৯৪৮ সালের অলিম্পিকে গ্রেট ব্রিটেনকে ৪-০ ব্যবধানে হারিয়ে সোনা জিতেছিল ভারত। সেই ফাইনালে জোড়া গোল করেছিলেন প্রয়াত ত্রিলোচন বাওয়া। দীর্ঘ ৪৮ বছর পর সেই ধারা বজায় রাখলেন তাঁর নাতি রাজ। আগাগোড়া বাইশ গজে রাজত্ব বজায় রেখে।