বিশ্বকাপই ব্রাজিলের ফুটবল সংস্কৃতি
জিজ্ঞাসা করতেই হেসে ফেললেন। তারপর যে জবাবটা দিলেন সেটা জবাব হিসেবে ছোট্ট। কিন্তু তার পরিব্যাপ্তি বিরাট।
অমৃতাংশু ভট্টাচার্য
যে কোনও বিশ্বকাপের রং নিয়ে আসে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোই। বিশেষ করে ব্রাজিল সমর্থকরা মাতিয়ে রাখেন যে কোনও বিশ্বকাপ। রাশিয়া বিশ্বকাপে ৬০ শতাংশ বিদেশি দর্শক এসেছেন ব্রাজিল থেকে। মাঝে মাঝে অবাক লাগে দেখে কীভাবে ফুটবল একটা দেশের মানুষের রক্তে মিশে যেতে পারে। সাওপাওলো থেকে আসা বছর সত্তরের জুলিয়ান ও তাঁর স্ত্রী আনাকে দেখে মনে হচ্ছিল এরা যেন আমাদের কলকাতার পান্নালাল চ্যাটার্জি ও তাঁর স্ত্রীর মতোই। বয়সটা এদের কাছে কোনও বাধাই নয়। চার বছর ধরে পয়সা জমিয়ে ঘুরে বেড়ান একের পর এক বিশ্বকাপ। তফাত্ শুধু একটাই আমাদের দেশে একটাই চ্যাটার্জি দম্পতি আছেন। কিন্তু ব্রাজিলে জুলিয়ান দম্পতি প্রায় ঘরে ঘরে।
আরও পড়ুন - বিশ্বকাপে 'বন্ধুত্বে'র বার্তা রাশিয়ার
কাজানে দেখা হয়েছিল একদল বছর সত্তরের 'যুবক' টিমের সঙ্গে। কেউ ইংরেজি বলতে পারেন, কেউ পারেন না। আধভাঙা ইংরেজিতে কার্লোস জানিয়ে দিলেন তারা দশ বন্ধু যৌবনকাল থেকে একসঙ্গে ফুটবল দেখে বেড়াচ্ছেন। এই বয়সে এসেও কীভাবে খেলা দেখতে আসার এতটা উত্সাহ পাচ্ছেন? জিজ্ঞাসা করতেই হেসে ফেললেন। তারপর যে জবাবটা দিলেন সেটা জবাব হিসেবে ছোট্ট। কিন্তু তার পরিব্যাপ্তি বিরাট। বললেন, "ফুটবল ছাড়া জীবনে তো আর কিছুই নেই।"
আর একটা ছবি জীবনে কোনওদিন ভুলতে পারব না। কাজান এরিনায় ব্রাজিল খেলছিল বেলজিয়ামের সঙ্গে, বাবা-মার সঙ্গে খেলা দেখতে এসেছিল দু'টো বাচ্চা ছেলে। কতই বা বয়স হবে আট-নয়। খেলার শুরু থেকেই চিত্কার করে উত্সাহ দিচ্ছিল দলকে। ব্রাজিল প্রথম গোলটা খেয়ে যেতেই কান্না শুরু বাচ্চা দু'টোর। বাবা একজনকে,আর মা আর একজনকে শান্ত করার প্রাণপন চেষ্টা করছিলেন। পিছনের সিটে বসে আর থাকতে না পেরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলাম, চিন্তা কোরো না গোল শোধ হয়ে যাবে। ব্রাজিল পরের পর আক্রমণের ঝড় তুলতে একটু ধাতস্থ হয়েছিল বাচ্চাগুলো। কিন্তু দ্বিতীয় গোল খেতেই ফের কান্না শুরু।
ব্রাজিল যখন একটা গোল শোধ করল বাচ্চা গুলোর মুখ দেখে মনে হচ্ছিল পারলে মাঠে ঢুকে পড়ে। কিন্তু ম্যাচ শেষে যেভাবে কান্নায় ভেঙে পড়ল তাতে আশেপাশের সমস্ত দর্শক এসে তাদের শান্ত করতে গিয়ে কেঁদে ফেলছিল। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল এইভাবেই দেশের ফুটবলকে যারা হৃদয়ে গেঁথে রাখে, তারাই তো সত্যিকারের ফুটবলের ধারক বাহক হয়ে উঠতে পারে। এটাই বোধ হয় ব্রাজিলের ফুটবল সংস্কৃতি।