“অনাহারে না থাকে যেন আমার মতো মানুষেরা”, দরাজ মনে অন্ন তুলে দিচ্ছেন জগন্নাথ
মাধ্যমিক পাস জগন্নাথ মাহার। সংসার ঠেলতে টিউশন করতে হচ্ছে তাঁকে। প্রায় এক মাস ধরে লকডাউনে টান পড়েছে হাঁড়িতে
প্রসেনজিত্ মালাকার: ভাগ্যের কি পরিহাস! জন্ম থেকে হাত দুটো নেই। আর তাঁর নাম জগন্নাথ! ভাগ্য এমন করলেও, তাঁর জীবনকে নিয়ে কখনও পরিহাস করেননি বীরভূমের সিউড়ির জগন্নাথ মাহারা। চরম দারিদ্র আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, এ সংসার জগন্নাথকে ‘লৌহ মানব’ করে তুলেছে। তাই, করোনার আবহে অনাহারীদের মুখে অন্ন তুলে দিতে পিছু-পা হননি বছর কুড়ির এই যুবক।
দারিদ্রের মর্ম পাঁজরে পাঁজরে। তাই বোঝেন, তাঁর মতো দুঃস্থ-সহায় সম্বলহীন প্রতিবন্ধীরা এই সময় কীভাবে দিন গুজরান করছেন। তাঁদের জন্য একাই কুম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছেন জগন্নাথ। হাত নেই তো কী হয়েছে, একটা দরাজ মন তো জগন্নাথের রয়েছে। টিউশন পড়িয়ে উপার্জিত টাকা দিয়ে তাদের পেট ভরাচ্ছেন তিনি।
মাধ্যমিক পাস জগন্নাথ মাহার। সংসার ঠেলতে টিউশন করতে হচ্ছে তাঁকে। প্রায় এক মাস ধরে লকডাউনে টান পড়েছে হাঁড়িতে। কোনওরকমে চলছে তাঁদেরও। কিন্তু তাঁর মতো প্রতিবন্ধী, অক্ষম, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষরা রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন, তাঁদের অবস্থা আরও ভাবিয়ে তুলেছে জগন্নাথকে। এরপরই নিজের উপার্জিত টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। প্রতিদিন নিয়ম করে অনাহারীদের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন জগন্নাথ।
আরও পড়ুন- লকডাউন শেষ হওয়ার পরও রেল-উড়ান চালু হওয়ার সম্ভাবনা কম
তাঁর এই উদ্যোগ দেখে পাশে দাঁড়িয়েছে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন জগন্নাথের বন্ধু-বান্ধবরাও। তিনি জানান, ছোট থেকেই চরম দারিদ্রের মধ্যে মানুষ হয়েছেন। দুটো হাত না-থেকেও টিউশন পরিয়ে সংসারে সাহায্য করছেন। তাঁর কথায়, ‘যে টুকু আয় হয় এখন সেই টাকা দিয়ে রাস্তায় শুয়ে থাকা দুঃস্থ মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করছি।’ শরীর নয় বাধ সেধেছে তাঁর আর্থিক অক্ষমতা। তবে, জগন্নাথের এমন কাজ দেখে তাঁর বন্ধু-বান্ধবীরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সিউড়ির স্টেশন মোড় থেকে হাসপাতাল, কলেজ পাড়া সর্বত্র ঘুরে বেড়িয়ে পথবাসীদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন তাঁরা। লকডাউনে একটা দিন যেন অনাহারে না থাকে, সেই পণ নিয়ে লড়াই জারি রেখেছে জগন্নাথ।