কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল সব দেখলাম! হরিনামের সঙ্গে 'হর হর মোদী' মতুয়াপাড়ায়

সেই কবে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে এসেছিলেন ভারতে। ওপারে যে থাকা যাচ্ছিল না আর। এপারে সব আছে, কিন্তু নেই পরিচয়! 

Reported By: কমলাক্ষ ভট্টাচার্য | Updated By: Dec 15, 2019, 12:01 AM IST
কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল সব দেখলাম! হরিনামের সঙ্গে 'হর হর মোদী' মতুয়াপাড়ায়

কমলাক্ষ ভট্টাচার্য: “একটা কাগজ চাই। ওটা দেখালে আমাকে আর কেউ ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দেশ ছাড়া করবে না।” ঠাকুরবাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে বলছিলেন ৮৬ বছরের বিশ্বনাথ বিশ্বাস। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন মতুয়াসমাজের কাছে বড়দিনের উপহার। হরি নামের সঙ্গেই উঠল মোদী-শাহের জয়ধ্বনি।            

সেই কবে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে এসেছিলেন ভারতে। ওপারে যে থাকা যাচ্ছিল না আর। এপারে সব আছে, কিন্তু নেই পরিচয়! কোন দেশের নাগরিক হে? জবাব নেই। বলতে হত, 'দেশহীন'। মনেপ্রাণে ভারতীয়। জনগণমন বাজলে উঠে দাঁড়ান। বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিতে উল্লাসে ফেটে পড়েন ওরা। অথচ কী আশ্চর্য! কয়েক দশক থাকার পরও পরিচয় উদ্বাস্তু। কংগ্রেস, সিপিএম তারপর তৃণমূল- সবাইকে দেখেছেন, শুধু শুকনো প্রতিশ্রুতিই মিলেছিল বলে দাবি মতুয়াদের। এবার দেখছেন বিজেপিকে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের পরিণত হওয়ার পর থেকে বদলে গিয়েছে ঠাকুরবাড়ির ছবি।  সকাল বিকেল হরিধ্বনি দিতে থাকা মতুয়াধামে এখন মুহুর্মুহু 'হর হর মোদী', অমিতে শাহের নামে জয়ধ্বনি।

বিভাজনটা লোকসভা ভোটের সময় থেকে প্রকট হয়ে পড়েছিল। বড়মা বীণাপানি দেবীর মৃত্যুর পর ফাটল চওড়া হতে হতে যেন সুয়েজ খাল! এখন মতুয়ারা এখন এককাট্টা। সমবেত দাবি, নাগরিকত্ব চাই! 

১৯৭১ সালের পরে দলে দলে এসে ভোটাধিকার, রেশন সবই পেয়েছেন, তাহলে কীসের নাগরিকত্ব দাবি? অশীতিপর বিশ্বনাথ বাবুর মত অনেকেই বললেন,''রাজাকারদের মার খেয়ে এক বস্ত্রে একবার দেশছাড়া হয়েছি। বাংলায় আশ্রয় নিয়ে অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েও পরগাছা হয়ে আছি। তাও তো বেঁচে আছি।  আর দেশছাড়া হতে চাই না। ভিটেমাটি হারানোর আতঙ্ক আমাদের সবসময়।''

লোকসভা ভোটে বিজেপিকে ঢালাও ভোট দিয়েছিলেন মতুয়ারা। ঠাকুরবাড়ির ছেলে শান্তনু ঠাকুর অনায়াসেই জিতেছেন। এক মতুয়া বৃদ্ধা বলেন,''বাবা আগে কংগ্রেস করতাম, তারপর সিপিএম। তৃণমূলও করেছি। সবাই খালি আশ্বাস দিয়েছে। এখন বিজেপিকে দেখলাম।'' বলি, ও ঠাকুমা বিজেপি আইন এনেছে, শুনছে তো? এবার তো পেয়ে যাবে নাগরিকত্ব। বৃদ্ধার জবাব,''না বাবা,কাগজ হাতে না আসলে বিশ্বাস করুম না।''

কাগজ চাই। কাগজ। ওই একটা কাগজেই তো 'দেশহীন' থেকে হয়ে উঠবেন খাঁটি ভারতীয়।  

আরও পড়ুন- শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অসুবিধা নেই, সুপারদের নির্দেশ রাজ্য পুলিসের ডিজি-র

.