Durga Puja 2022: তিনি বৃহন্নলা, তো! তাঁর হাতেই চিন্ময়ী সেজে ওঠেন মৃন্ময়ীরূপে
অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন বিরাট রাজার মৎস রাজ্যে বৃহন্নলা রূপ ধারণ করে রাজকুমারী উত্তরাকে নাচ ও গান শেখাতেন। সেই অর্জুনকে মানুষ মাথায় তুলে রাখলেও, বৃহন্নলাকে সমাজ মেনে নিতে পারেনি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি সমাজের বাঁকা নজর বরাবরের। তাঁরা যেন অন্যগ্রহের প্রাণী।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: মহাভারতে অর্জুনের বৃহন্নলা হয়ে ওঠার কাহিনি প্রায় সকলেরই জানা। অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন বিরাট রাজার মৎস রাজ্যে বৃহন্নলা রূপ ধারণ করে রাজকুমারী উত্তরাকে নাচ ও গান শেখাতেন। সেই অর্জুনকে মানুষ মাথায় তুলে রাখলেও, বৃহন্নলাকে সমাজ মেনে নিতে পারেনি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি সমাজের বাঁকা নজর বরাবরের। তাঁরা যেন অন্যগ্রহের প্রাণী। তাঁরা যেন মানুষের মতো খাবার খায় না, পাখির ডাক শোনে না। উৎসবে যেন তাঁদের আনন্দ করতে নেই, নিজের মতো করে সাজতে নেই। স্কুলবাড়ি থেকে পুজো মন্ডপ সর্বত্রই শুনতে হয় নানা ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ। কিন্তু এসব বঞ্চনার মধ্যেও দেবীমূর্তির শিল্পকলা আকৃষ্ট করত এরকমই একজন মানুষকে,যার পরিচয় মৃৎশিল্পী হিসাবে। তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতিনিধি। তাই নিজের সাথে আপস করলেও শিল্পকে ভালোবেসে নিজের শিল্পসত্ত্বার সাথে কিন্তু কোনদিন আপস করেননি।
নাম, প্রতিমা ওঝা। হৃদয় ও দেহপটে অর্ধনারীশ্বর হর-পার্বতী। বর্তমানে তিনি হুগলির বিখ্যাত মৃতশিল্পী। অচলায়তনে ঘা দিয়ে লিঙ্গান্তরিত কিংবা রূপান্তর-প্রত্যাশীকে কাছে টানতো শারদীয়া। ছোট বেলা থেকেই অনেকের ব্যঙ্গ বিদ্রুপের শিকার হতে হতো তাঁকে। পাড়ার পুজোর প্যান্ডেলে গেলেও বাদ ছিল না তির্যক কটূক্তি। কিন্তু, এসবের মাঝেও তাঁকে আকৃষ্ট করত দেবী দুর্গা মূর্তির শিল্পকলা। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন দেবী মূর্তির দিকে। একটা সময় হুগলির চুঁচড়ায় নিজের বাড়িতেই পুজোর আয়োজন হয়। তারপর থেকে নিজের উদ্যোগেই প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু করেন। বৃহন্নলা থেকে হয়ে ওঠেন মৃতশিল্পী প্রতিমা ওঝা।
আরও পড়ুন : Durga Puja 2022 : সুদিন নেই তবু পুজোর সাত দিন শিটেদের দালানে উপচে পড়ে সাতটি গ্রাম
স্কুল থেকে কলেজ। সর্বত্রই প্রতিকূলতার সম্মুখিন হয়েছেন প্রতিমা। সেসব বাধাকে তোয়াক্কা না করেই গড়ে তুলেছেন নিজের পরিচয়। প্রমাণ করেন লিঙ্গ নয় প্রতিভা আর কাজই হল মানুষের আসল পরিচয়। শুরুটা অবশ্যই সহজ হয়নি। এসেছে নানা বাঁধা। প্রথমে বরাত আসতো একটা বা দুটো। তবে শিল্পের প্রতি নিষ্ঠা এবং প্রতিমার প্রতি ভালোবাসা তাঁকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে বহুদূর। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে বরাত পান। চাহিদা মতো দুর্গা প্রতিমা গড়ে তোলেন। মা দুর্গার কাছে তাঁর একটাই প্রার্থনা সমাজ যেন ভাল হয়। তাহলে সবাই ভাল থাকবেন।