Midnapur: সালিশি সভায় ১ কোটি টাকা জরিমানা; কেড়ে নেওয়া হল জমির দলিল, মাতব্বরদের ভয় ঘরছাড়া পরিবার
আক্রান্ত পরিবারের অভিযোগ, দাসপুর থানা এই ঘটনায় কোনও সহযোগিতা করেনি। শেষমেশ ৯ আগষ্ট ওই পরিবার ঘাটাল মহকুমা পুলিস আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কয়েকজন মাতব্বরদের বিরুদ্ধে
চম্পক দত্ত: দোকানে আগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে তুঘলকি নিদান। সন্দেহের বশে একটি পরিবারকে ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা গ্রাম্য সালিশি সভার। শুধু তাই নয় ওই টাকা আদায়ের জন্য অভিযুক্ত পরিবারের জমির দলিলও কেড়ে নেওয়ার অভিযাগ উঠল গ্রামের মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। তাদের ভয়ে এখন ঘরছাড়া মেদিনীপুরের দাসপুরের একটি পরিবার। ঘটনার সূত্রপাত গত ৩০ জুলাই রাত সাড়ে ন'টার পর দাসপুরের চাকীরহাটে কাশীনাথ চাকী নামে এক ব্যক্তির শ্রীহরি ডেকোরেটর্স নামে এক দোকানে আগুন লেগে যায়। ক্ষতি হয় অনেকটাই। ঘটনাস্থলে পুলিস এসেও কিভাবে আগুন লাগল তা বুঝতে পারেনি। মালিকও বুঝতে পারেনি আগুন লাগার প্রকৃত কারণ।
আরও পড়ুন-বিপুল টাকা লেনদেন! মেয়ে সুকন্যার সম্পত্তির হদিশ জানতে অনুব্রতর অ্যাকাউন্ট্যান্টকে জেরা
এদিকে, ঘটনার দিনই একটি তত্ব খাড়া করেছিলেন ডেকরেটার্সের মালিক কাশীনাথ চাকী। ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর ৬ আগষ্ট কাশীনাথ চাকী গ্রামের কয়েকজন মাতব্বরদের নিয়ে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা ও অন্য এক ডেকরেটরের মালিক তারকনাথ আড়িকে প্রায় চাপ দিয়ে নিয়ে যান পূর্ব মেদিনীপুরের পালপাড়ায় সুকুমার মাইতি নামে এক গণত্কারের কাছে। সেখানে গণত্ৎকার নিদান দেন তারকনাথবাবু ও তার ছেলে এই আগুন লাগানোর ঘটনায় জড়িত। ব্যাস! গ্রামে বসে যায় সালিশিসভা। তারপরই ক্ষতিপূরণের বিধান দিয়ে তারকনাথ বাবুর পরিবারের উপর নানান চাপ তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ।
তারকনাথবাবুর পরিবারের অভিযোগ গত ৬ আগষ্ট সন্ধে থেকে তারকনাথ ও তার দুই ছেলে, ৯ মাসের শিশুর মা দীপালির উপর প্রকাশ্যে জুলুম ও মারধোর শুরু হয়। সন্ধেয় তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় একটি জায়গায়। সেখানে একাধিক মানুষের সামনে জোর করে আগুন লাগানোর কথা স্বীকার করানো হয়। এরপর সাদা কাগজে সই করে জমির দলিল কেড়ে নিয়ে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানার নিদান দেয় মাতব্বররা। আক্রান্ত পরিবার ওখান থেকেই পুলিসকে জানালে দাসপুর থানার পুলিস আসে ঘটনাস্থলে। তারপরও ওই পরিবারকে মাতব্বরা হুঁশিয়ারি দেয়, পুলিসের কাছে মুখ না খুলতে। এমনকি দোষীদের ঘর বাড়ি সম্পত্তি জোর করে দখল নিয়ে টাকা আদায় নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
আক্রান্ত পরিবারের অভিযোগ, দাসপুর থানা এই ঘটনায় কোনও সহযোগিতা করেনি। শেষমেশ ৯ আগষ্ট ওই পরিবার ঘাটাল মহকুমা পুলিস আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কয়েকজন মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। তারপরও ওই ঘটনায় এখনও কোনও আইনি পদক্ষেপ নেয়নি পুলিস। পরবর্তী কালে এই ঘটনা কোন দিকে মোড় নেয় বা মাতব্বররা শাস্তি পায় কিনা সেদিকেই তাকিয়ে এলাকার অনেকে।
বর্তমানে পাড়ার লোকের প্রবল চাপে ও ভয়ে এখন আড়ি পরিবার ঘরছাড়া। অন্যদিকে গ্রামের মোড়লরা শালিসি সভার কথা স্বীকার করলেও জোর করে সাদা কাগজে সই করানো এবং মারধরের কথা অস্বীকার করেছেন।
এনিয়ে ঘাটাল মহকুমা পুলিস আধিকারিক অগ্নীশ্বর চৌধুরী বলেন" দুই দিনের দুটি ঘটনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিস তদন্ত শুরু করেছে। গ্রামবাসীদের জিঞ্জাসাবাদ শুরু করেছে পুলিস । আগুন লাগানো, শালিসি সভা ডাকা,এই ঘটনায় যারা জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।