জ্যামার ব্যবহার করে ডাকাতি, ভাইজ্যাক থেকে সিসিটিভি দেখে জালে গ্যাং! সাজা শোনাল আদালত...
বিহারের বৈশালী শোনপুর শেখপুরার বাসিন্দা এই দুষ্কৃতীরা রীতিমতো শিক্ষিত। কলেজ পড়া অভিযুক্তরা প্রযুক্তি সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহল। ডাকাতির আগে অনলাইনে স্বর্ণ ঋণ সংস্থার কাস্টমারদের প্রিভিউ রেটিং দেখে নিত। রেটিং দেখে আন্দাজ করে নিত যেত যে ভালো জিনিস সেখানে পাওয়া যেতে পারে। তারপরই পরিকল্পনা করে ডাকাতি করত।
বিধান সরকার: জ্যামার ব্যবহার করে ডাকাতি, ভাইজ্যাক থেকে সিসিটিভি দেখে পুলিসে খবর, পুলিসের সঙ্গে গুলির লড়াই! শেষপর্যন্ত চন্দননগর স্বর্ণ ঋণ প্রদানকারী সংস্থায় ডাকাতি করতে এসে ধৃত বিহারের তিন দুষ্কৃতীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল চুঁচুড়া আদালত। প্রসঙ্গত, গতকালই ধৃত বিট্টু কুমার (করণ), গুড্ডু কুমার (ধর্মেন্দ্র) ও বিট্টু কুমার (ছোট্টু)-কে দোষী সাব্যস্ত করেন ফাস্টট্রাক কোর্টের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক শিবশঙ্কর ঘোষ। অভিযু্ক্তরা বন্দি থাকাকালীনই শুরু হয়েছিল বিচার। ধৃতদের বিরুদ্ধে ৩০৭, ৩৯২, ৩৯৪, ৩৯৭, ৩২৬, ৩৪ আইপিসি এবং ২৫/(১)বি ও ২৭ অস্ত্র আইনে মামলা রুজু হয়েছিল।
এই মামলা প্রসঙ্গে সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইলেকট্রনিকস গ্যাজেট সহ একাধিক প্রমাণ ছিল। ডাকাতির সময় পোর্টেবল জ্যামার সহ ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ডিটেক্টর ব্যবহার করা হয়েছিল। জিপিএস ট্র্র্যাকারের সাহায্যে সোনা নিয়ে যাওয়া গাড়ির সন্ধান করত ডাকাতদল। এখন জ্যামার ব্যবহার করায় ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ থাকলেও সিসিটিভি ক্যামেরা চালু ছিল। স্বর্ণ ঋণ সংস্থার ভাইজ্যাকের হেড অফিস থেকে সেই সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা যেত। ঘটনার সময় লাইভ ফুটেজ দেখে কিছু একটা হচ্ছে বুঝতে পেরে চন্দননগর অফিসে ফোন করা হয়। কিন্তু সেখানে কাউকে ফোনে না পেয়ে রিজিওনাল ম্যানেজারকে ফোন করে জানানো হয়। তখন রিজিওনাল ম্যানেজার চন্দননগর পুলিসের হেল্পলাইনে ফোন করে ঘটনা জানান।
পুলিস সূত্রে জানা গেছে, বিহারের বৈশালী শোনপুর শেখপুরার বাসিন্দা এই দুষ্কৃতীরা রীতিমতো শিক্ষিত। কলেজ পড়ে অভিযুক্তরা। প্রযুক্তি সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহল। মূলত স্বর্ণ ঋণ সংস্থাতেই ডাকাতি করত তারা। ডাকাতির আগে অনলাইনে সেই সংস্থার কাস্টমারদের প্রিভিউ রেটিং দেখে নিত। রেটিং দেখে আন্দাজ করে নিত যেত যে ভালো জিনিস সেখানে পাওয়া যেতে পারে। তারপরই পরিকল্পনা করে ডাকাতি করত। এর আগে আসানসোল সহ বিভিন্ন জায়গায় একইভাবে ডাকাতি করেছে এই গ্যাং। ডাকাতির আগে চন্দননগরে লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারে রীতিমতো রেইকি করে ডাকাতদলটি। ওই সংস্থার অফিসেও যায় ২ বার। এরপর সিঙ্গুরের অপূর্বপুরে একটি ঘর ভাড়া নেয় ফেরিওয়ালা পরিচয় দিয়ে।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে বিট্টু কুমার ওরফে ছোট্টু ব্যারাকপুরে মণীশ শুক্লা খুনে অভিযুক্ত। পুলিস জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদলটির মধ্যে ছোট্টু হচ্ছে শার্প শুটার। আসানসোলে ডাকাতি করে ১৮ লাখ টাকা পায় সে। ওদিকে করণের বিরুদ্ধেও বিহারে এটিএম-এর ক্যাশ গাড়ি লুট ও খুনের অভিযোগ রয়েছে। গুড্ডুর বিরুদ্ধে হরিয়ানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এখন ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চন্দননগর লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে। এরপর গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে চার্জশিট জমা দেন এই মামলার তদন্তকারী অফিসার অতনু মাঝি। তদন্তকারী অফিসারকেও এরপর প্রাণনাশের হুমকি দেয় এই দুষ্কৃতীর গ্যাং-এর বাইরে থাকা সদস্যরা। বিহারের জ্যাকি নামে এক হ্যান্ডলার এই গ্যাংকে পরিচালনা করে বলেও জানা গিয়েছে।
তাই আদালতে নিয়ে আসা ও নিয়ে যাওয়ার সময় যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য এদিন আদালত চত্বরে কড়া পুলিসি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় আদালত চত্বর। ধৃতদের হেফাজতে রেখেই এই মামলার ট্রায়াল শুরু হয়েছিল। পুলিস অফিসার, ব্যাংক কর্মী, ফরেনসিক ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ সহ মোট ২০ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এরপরই গতকাল আদালত ধৃত ৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে। এরপর আজ তাদের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।
আরও পড়ুন, WB Panchayat Election 2023: তৃণমূল এজেন্টের বাড়িতে সাদা থান, বিজেপি নেতার ফিসারিতে আগুন দুষ্কৃতীদের