জঙ্গলে হাতির খাবারের অভাব, লোকালয়ে প্রবেশ আটকাতে অভিনব উদ্যোগ পড়ুুয়াদের
জঙ্গলে হাতির সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে, কমে গিয়েছে তুলনামূলকভাবে তাদের খাদ্যের সংস্থান ৷ ফলে খাবার না পেয়ে প্রায়শই লোকালয়ে প্রবেশ করে হাতির পাল।
চম্পক দত্ত: জঙ্গলে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে হাতির। আর সে কারণেই বারবার লোকালয়ে প্রবেশ করছে তারা। এই সমস্যা আটকাতে এবার কয়েক কুইন্ট্যাল ফলের বীজ নিয়ে জঙ্গলে পৌঁছলেন ছাত্রছাত্রীরা। জঙ্গলে হাতির সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে, কমে গিয়েছে তুলনামূলকভাবে তাদের খাদ্যের সংস্থান ৷ ফলে খাবার না পেয়ে প্রায়শই লোকালয়ে প্রবেশ করে হাতির পাল। গৃহস্থের ফলের গাছ, বাড়ির ভেতরে থাকা খাদ্য শস্যের জন্য হানা দিচ্ছে ৷ হাতিদের এই খাদ্যের তল্লাশিতে প্রাণ যাচ্ছে গ্রামবাসীদের ৷
এই চিত্র দেখা যাচ্ছে মেদিনীপুর সদরেও ৷ সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে মাঠে নামল জঙ্গলমহল এলাকার একটি বিদ্যালয়৷ গ্রীষ্মের ছুটিতে ছাত্রছাত্রীদের সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল বাড়িতে আসা বিভিন্ন ফলের বীজ ৷ দেড় হাজার ছাত্রছাত্রীর সংগ্রহ করা সেই বীজ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই কুইন্ট্যাল৷ ছুটির শেষে সেই বীজ নিয়ে অরণ্য সপ্তাহে জঙ্গলে ঢুকলেন পড়ুয়ারা ৷
মেদিনীপুর সদর ব্লকের জঙ্গলমহলের গুড়গুড়িপাল উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার ৷ যারা সকলেই জঙ্গলমহলের ভেতরে বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা ৷ প্রায় প্রত্যেকেরই গ্রামে হাতির হামলায় ক্ষয়ক্ষতি বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। হাতির কারণে আতঙ্কে থাকতে হয় এই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের বেশিরভাগকেই ৷ এই ছাত্রছাত্রীদেরই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হাতির বারবার লোকালয়ে হামলার কারণ বুঝিয়েছিলেন ৷ তা থেকে উদ্ধারের রাস্তা হিসেবে জঙ্গলে হাতির খাদ্য উপযোগী গাছ বাড়ানোর কথাও শিখিয়েছিলেন৷
বিদ্যালয়ের ভূগোল বিষয়ের শিক্ষক ব্রজদুলাল গিরি বলেন, "জঙ্গলের ঘনত্ব কমেছে ৷ অথচ এই এলাকা হাতির প্রবণ এলাকা ৷ যে পরিমান হাতি রয়েছে জঙ্গলে সেই পরিমাণ হাতির খাবার নেই ৷ খাবারের খোঁজে তাই ঝাড়গ্রামে প্রায়শই দেখা গিয়েছে লোকালয়ে প্রবেশ করে হাতি মানুষকে মেরে ফেলছে ৷ বিষয়টি ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে হাতির খাবারের উপযোগী ফলের গাছ লাগাতে বলেছিলাম ৷ সেই লক্ষ্যে আম, জাম, কাঁঠাল বীজ সংগ্রহ করেছে ছাত্রছাত্রীরা ৷ যার পরিমান প্রায় দুই কুইন্ট্যাল ৷ কম ঘনত্বের জঙ্গল দেখে এক কিমি এলাকা জুড়ে সেগুলি ছড়ানো শুরু করলাম ছাত্রছাত্রীদের নিয়েই।"
স্নেহা দোলই নামে এক ছাত্রীর কথায়, "প্রায়শই লোকালয়ে খাবারের খোঁজে হাতি প্রবেশ করছে ৷ জঙ্গলের গাছের ঘনত্ব কমেছে, খাবারের অভাব হয়েছে ৷ তাই শিক্ষকদের পরামর্শে আমরা গাছ লাগাতে ফলের বীজ সংগ্রহ করেছি সকলে গ্রীষ্মের ছুটিতে ৷ সেগুলিই ফাঁকা জঙ্গলে লাগাব সকলে ৷ " বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম ভৌমিক বলেন, "যতদিন দলমা এলাকাতে ফলের গাছ ছিল ততদিন সেখানে হাতির পাল ছিল ৷ সেখানে গাছের সংখ্যা কমতেই হাতির পাল এখন আমাদের এলাকাতে ৷ খাবারের খোঁজে লোকালয়ে প্রায়শই প্রবেশ করছে ৷ তাই সেই প্রবণতা আটকাতে জঙ্গলেই আমরা ফলের গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি ৷"
অরণ্য সপ্তাহের শুরুতেই এই কাজের সহযোগিতায় ছুটে এসেছেন বন দফতরের কর্মীরাও ৷ গুড়গুড়িপাল এলাকা দিয়ে সেই কাজ শুরু হল ৷ চলবে কয়েকদিন ধরে ৷ স্থানীয় বন দফতরের বীট ইনচার্জ সুশান্ত ঘোষ বলেন, "উদ্যোগটা খুবই ভালো। এই ধরণের মৌলিক ভাবনা সত্যিই উপকার করবে এলাকার ৷ হাতিদের খাদ্য সংকট কমানোর জন্য ভালো উদ্যোগ। সেই সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে ভালো বার্তা এটা।"
আরও পড়ুন, Weather Update: ফের মুখ ফেরাল বর্ষা; রাজ্যে বাড়বে তাপমাত্রা