'তৃণমূল আর দিদির দল নয়', ফের বোমা দাগলেন মিহির গোস্বামী, করলেন বিস্ফোরক অভিযোগ
"গত ছয় সপ্তাহে খোদ নেত্রীর কাছ থেকে কোনও ফোন আসেনি। কোনও বরখাস্তনামা কিংবা বহিষ্কারের নির্দেশও আসেনি তাঁর কাছ থেকে। আমার দল আর আমার নেত্রীর হাতে নেই।"
নিজস্ব প্রতিবেদন : ফের ফেসবুকে বিস্ফোরক মিহির গোস্বামী। তৃণমূল নেতৃত্বের প্রতি বোমা দাগলেন কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক। তাঁর অভিযোগ, দলে তিনি অসম্মানিত। অসম্মান নিয়েই দীর্ঘ ২২ বছর তৃণমূলে ছিলেন তিনি। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর বিশ্বাস-ভরসা রেখেই এতদিন কাজ করে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এখন তৃণমূল আর মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের দল নেই বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি।
ফেসুবকে মিহির গোস্বামী লিখেছেন, "বহুকাল পরে এবার এক নিস্প্রভ দীপাবলী দেখে মন বিষণ্ণ হয়েছিল। তেমনই ভেবে বিস্মিত হয়ে যাই, যে দলের অভিধানে ‘সম্মান’ বলে শব্দটিই অনুপস্থিত সেই দলে বাইশটা বছর কাটিয়ে দিলাম! কী করে সম্ভব হল, কেন তা সম্ভব হল এসব প্রশ্ন উঠে আসে নিজের মনেই! উত্তর একটাই খুঁজে পাই, দিদি! দলের ভেতর অজস্র অপমান, অবমাননা ক্রমাগত সহ্য করে গিয়েছি। অকারণে চুপ করে থাকার জন্য শুভানুধ্যায়ীরাও বিরক্ত হয়েছেন বারবার। কিন্তু আমার উত্তর একটাই ছিল, দিদি! যার উপর বিশ্বাস-আস্থাতেই এতদিন টিকে ছিলাম।
কিন্তু ঊনিশশো ঊননব্বই সাল থেকে তাঁর নেতৃত্ব মেনে দীর্ঘ তিরিশ বছর অতিক্রম করার পর হঠাৎ বোধগম্য হয়েছে, এ দল এখন আর আমার দিদি-র দল নয়, দিদি এখানে নিস্পৃহ। তাই 'দিদির লোক' এখানে অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন। অন্যায্য সবকিছু মেনে নিয়ে 'যো হুজুর' করে টিকে থাকতে পারলে থাকো, নয়ত তফাৎ যাও।
সংগঠন থেকে আমার অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণা করার পর ছয় সপ্তাহ কেটে গেছে। এই বিয়াল্লিশ দিনে আমি সব দলের কাছ থেকে এক বা একাধিক ফোন কল পেয়েছি, কথা বলেছি। বহু পুরনো রাজনৈতিক বন্ধুর ফোন পেয়েছি রাজ্যের বাইরে থেকেও। কেউ অফার দিয়েছেন, কেউ পরামর্শ দিয়েছেন, কেউ শুধু ভালবাসা দিয়েছেন। সতীর্থ অনেক সহকর্মী নেতার ফোন এসেছে বাংলার নানা প্রান্ত থেকে, কলকাতা থেকে, সবার ফোন ধরা হয়ত সম্ভব হয়নি। কিন্তু গত ছয় সপ্তাহে খোদ নেত্রীর কাছ থেকে কোনও ফোন আসেনি। কোনও বরখাস্তনামা কিংবা বহিষ্কারের নির্দেশও আসেনি তাঁর কাছ থেকে।
আমার দল আর আমার নেত্রীর হাতে নেই, অর্থাৎ এই দল আর আমার নয়, হতে পারে না। শ্যামা মায়ের আরাধনালগ্নে আমার এই অনুমান আরও দৃঢ় হয়েছে। তাই এই দলের সঙ্গে সমস্ত রকমের সম্পর্ক ছিন্ন করাটাই কি স্বাভাবিক নয়?"
প্রসঙ্গত, এর আগে ৮ নভেম্বর মিহির গোস্বামী ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন 'তৃণমূলের সংসর্গ' ছাড়ার প্রসঙ্গে। সেখানে তিনি স্পষ্ট করে দেন, এখনই রাজনীতির ময়দান থেকে বিদায় নিচ্ছেন না তিনি। তবে অন্য কোনও দলে যোগ দিচ্ছেন কিনা বা তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ কী হতে চলেছে, সেই বিষয়েও খোলসা করে কিছু বললেনি কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক। উল্লেখ্য, মিহির গোস্বামীর পর বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন সিতাই কেন্দ্রের বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়াও। তাঁর ইঙ্গিতে স্পষ্ট কোচবিহার জেলায় ভাঙনের মুখে তৃণমূল কংগ্রেস।
আরও পড়ুন, ছটে পুরুলিয়াবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুভেন্দুর ছবি দিয়ে পোস্টার-হোর্ডিং, তুঙ্গে জল্পনা