লকডাউনে পোস্ট অফিস যেতে অক্ষম জানিয়ে বৃদ্ধের চিঠি, বাড়িতেই পেনশনের টাকা পৌঁছে দিলেন ‘রানাররা’
হুগলির ডাকবিভাগের কর্মীরা সিদ্ধান্ত নেন শুধু রাধাগোবিন্দ চ্যাটার্জি নন, এই পোস্ট অফিসের অধীনে যত এইরকম পেনশেন হোল্ডার আছেন তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ি গিয়ে পেনশন দিয়ে আসবেন তাঁরা
অধীর রায়: করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত গোটা দেশ। লকডাউনে কার্যত স্তব্ধ সব কাজকর্ম। ব্যতিক্রম শুধু জরুরি পরিষেবা। আর এই জরুরি পরিষেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন হুগলির ডাকবিভাগের কর্মীরা।
অসুস্থ কিংবা যাদের বাড়িতে পেনশেন তোলার মত কেউ নেই সেই সব প্রবীণদের পেনশন হোল্ডারদের বাড়ি গিয়ে তাঁদের পেনশন বাড়ি পৌছে দিয়ে এলেন হুগলির ডাকবিভাগের কর্মীরা। এখানকার ডাকবিভাগের কর্মীদের এই মানবিক সত্ত্বা জাগিয়ে তুলেছেন ব্যান্ডেল স্টেশন রোডের বালি মোড়ের বাসিন্দা রাধাগোবিন্দ চ্যাটার্জি। তাঁর বয়স পঁচাত্তর বছর। অসুস্থের জেরে লকডাউন চলাকালীন সরকারি নির্দেশিকা মেনে পোস্ট অফিসে গিয়ে তাঁর পক্ষে পেনশন তোলা সম্ভব নয়। এই কথা জানিয়ে হুগলির পোস্ট অফিসে একটি চিঠি লেখেন তিনি।
চিঠিতে রাধাগোবিন্দ বাবু পোস্টমাস্টারের কাছে আবেদন করেন, তাঁর বয়স পঁচাত্তর বছর । তিনি ভীষণ অসুস্থ । বাড়িতে এমন কেউ নেই যে তাঁর পেনশেন তুলে নিয়ে আসবেন। পাশাপাশি অসুস্থতার জন্য সরকারি নির্দেশিকা মেনে তার পক্ষে পোস্ট অফিসে গিয়ে পেনশন তোলা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় যদি তাঁর পেনশেন বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে সত্তর বছরের স্ত্রীকে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন। বৃদ্ধ রাধাগোবিন্দ বাবুর আবেদন পত্র পাওয়ার পর হুগলির ডাকবিভাগের কর্মীরা বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গে বিবেচনা করেন ।
এরপর হুগলির ডাকবিভাগের কর্মীরা সিদ্ধান্ত নেন শুধু রাধাগোবিন্দ চ্যাটার্জি নন, এই পোস্ট অফিসের অধীনে যত এইরকম পেনশেন হোল্ডার আছেন তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ি গিয়ে পেনশন দিয়ে আসবেন তাঁরা। সেইমত হুগলি পোস্ট অফিসে একটি তালিকা তৈরি করা হয়। তাতে দেখা যায় এই পোস্ট অফিসে সতেরো জন পেনশন হোল্ডার আছেন যাঁদের বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি। সে সব পরিবারে বুড়োবুড়ি ছাড়া দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি নেই যাঁরা এনাদের পেনশন তুলে দিতে পারেন। এরপর রাধাগোবিন্দ চ্যাটার্জি, শ্রিপা কর্মকার, অসিত ঘোষদের বাড়িতে পেনশেন পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় হুগলি পোস্ট অফিসের কর্মীরা। পোস্টমাস্টার তাদের অফিসের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য এবং দায়িত্ববান পোস্টম্যান অতনু চক্রবর্তীর নেতৃত্বে তিনজনের একটি দল তৈরি করেন। এনারা সতেরো জনের বাড়ি গিয়ে পেনশনের টাকা তুলে দেন।
অতনু চক্রবর্তীর কর্মজীবনে এই ধরনের অভিজ্ঞতা প্রথম বলে জানান। রাধাগোবিন্দ বাবুর হাতে পেনশনের টাকা তুলে দেওয়ার পর অতনু চক্রবর্তী জানান, "অনেক বছর ডাকবিভাগে কাজ করছি। কিন্তু এই ধরনের মানসিক তৃপ্তি কোনদিন পাইনি। বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। আজ মনে হচ্ছে কর্মজীবনে জরুরি পরিষেবার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারলাম ।" ঘরে বসে পেনশন হাতে পাওয়ার পর আপ্লুত রাধাগোবিন্দ চ্যাটার্জি। তিনি জানান, "হুগলি পোস্ট অফিস যেভাবে আমার আবেদনে সাড়া দিয়েছে তাতে আমি অভিভূত। আমার চিঠির জন্য আমার মত আরও অনেকে উপকৃত হয়েছেন জেনে ভীষণ মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছি ।"
দেশ জুড়ে মহামারীর আবহে হুগলির ডাকবিভাগের কর্মীরা যে মানবিকতার নিদর্শন তৈরি করে গেলেন তা আগামী প্রজন্মকে সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার দিশা দেখাবে ।