বীরসিংহ যেন মডেল ভিলেজ, বিরোধীরা বলছে বিদ্যাসাগর কলেজে তাণ্ডব-ই 'শাপে বর' হল!
"অকাল বোধনের মতো বিদ্যাসাগর মূর্তি আমাদের নতুন করে করতে হল।"
নিজস্ব প্রতিবেদন : বিদ্যাসাগরের দ্বিশতজন্মবার্ষিকীতে বীরসিংহ গ্রামে গিয়ে বর্ণপরিচয়ের রূপকারের জন্মভূমিতে এডুকেশন হাব তৈরির কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রের অন্যতম কেন্দ্র হবে বীরসিংহ গ্রাম। গ্রামের প্রবেশ পথে তৈরি করা হবে ২টি সুন্দর তোরণ। তৈরি হবে কমিউনিটি হল। একইসঙ্গে বীরসিংহ গ্রামে তৈরি করা হবে বিদ্যাসাগরের উপর গবেষণা কেন্দ্র।
এককথায় ভোলবদল! ইতিমধ্যেই গ্রামের রাস্তার রূপ বদলেছে। রাতারাতি তৈরি হয়েছে নতুন রাস্তা। দীর্ঘদিন পর বীরসিংহ গ্রামে পা দিলে কেউ চিনতেও না পারেন গ্রামটিকেও! চমকে উঠতে পারেন! এতটাই ছবির মতো সুন্দর হয়ে উঠেছে বিদ্যাসাগরের জন্মভিটে বীরসিংহ। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে মডেল ভিলেজ যেন বীরসিংহ গ্রাম।
তবে এত কিছুর মধ্যেও এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বার বারই ফিরে এল, বিদ্যাসাগর কলেজে ঈশ্বরচন্দ্রের মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গ। লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফায় কলকাতায় ভোটের আগেই অমিত শাহের রোড শো-কে ঘিরে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে বিধান সরণি। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়। আর সেই মূর্তি ভাঙাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়ে যায় দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপের পালা। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বীরসিংহ গ্রামে দাঁড়িয়ে বলেন, "অকাল বোধনের মতো বিদ্যাসাগর মূর্তি আমাদের নতুন করে করতে হল। ধর্মান্ধ কিছু লোক ভেঙে দিল। বুঝল না বিদ্যাসাগর শুধু মূর্তি নয়, আমাদের সংস্কৃতি-কৃষ্টি সব। এই মাটিকে ভয় স্তব্ধ করা যায় না। ভয় দেখানো যায় না। এই ভাষাকে অস্বীকার করা যায় না। আমরা সব ভাষা সম্মান করি, কিন্তু মাতৃভাষা মাতৃভাষা-ই। আগুন লাগলে সবার লাগে হিন্দু-মুসলমান হয় না। আজ যখন স্মৃতিমন্দির চোখ দিয়ে দেখলাম। আমি ধন্য হয়ে গেলাম। বর্ণ পরিচয়ের আঁতুরঘরে এসে পৌঁছালাম।"
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সব কলেজকে ২ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। যা দিয়ে কলেজগুলি সেমিনার করবে। আজ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত দ্বিশতবর্ষ পালন করা হবে। ২৬ তারিখ বিদ্যাসাগরের কাজকে মানুষের কাছে তুলে ধরবে ছাত্রছাত্রীরা। হিন্দি, উর্দু মাধ্যমের পড়ুয়ারাও বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী পালন করে।
আরও পড়ুন, 'সাংবিধানিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করছেন রাজ্যপাল', পার্থর মন্তব্যে ফের চরমে উঠল সংঘাত
তবে বীরসিংহ গ্রাম নিয়ে রাজ্য সরকারের এত উদ্যোগের পিছনে বিদ্যাসাগরের কলেজে তাণ্ডবকেই 'শাপে বর' দেখছেন বিরোধীরা। বিরোধীরা মনে করছে যে, নির্বাচনের সময় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ফলেই বীরসিংহ গ্রামের প্রতি এই নজর। সেই ঘটনা না ঘটলে কি বীরসিংহ গ্রামে এত কাজ হত? আজ বীরসিংহ গ্রাম নিয়ে এত শত পরিকল্পনার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী, কিন্তু বিগত ১১ বছরে কি বীরসিংহ গ্রামের কথা মনে পড়েনি? প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। যদিও শাসকদলের দাবি, বাংলার নবজাগরণের রূপকারদের অন্য মাত্রা দিয়েছে তৃণমূল সরকার। এবার বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবার্ষিকী। তাই নজরে এবার বীরসিংহ।