Katwa: অলৌকিক! এই সাপ কামড়ালে বিষ লাগে না, সাপকে নিয়ে 'ঘর' করাই এখানকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য...

Katwa Snake Worship: সাপ এখানে 'দেবী ঝাঁকলাই' বা 'মা ঝঙ্কেশ্বরী' নামে পুজো পায়। প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন এই সাপের পুজো মঙ্গলকোটের চার গ্রামের নিজস্ব উৎসব হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে উদযাপন করা হয়।

সৌমিত্র সেন | Updated By: Jul 24, 2024, 12:44 PM IST
Katwa: অলৌকিক! এই সাপ কামড়ালে বিষ লাগে না, সাপকে নিয়ে 'ঘর' করাই এখানকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য...

সন্দীপ ঘোষচৌধুরী: বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে উৎসবে মেতে ওঠে পাশাপাশি চারটে গ্রাম। বিষধর সাপ এখানে জীবন্ত দেবী। সেই দেবীর পুজোকে ঘিরেই শুরু উৎসব। মঙ্গলকোটের মশারু, পলসোনা, ছোটপোষলা ও বড়পোষলা গ্রামের বাসিন্দারা সাপ বলেন না, সাপ এখানে 'দেবী ঝাঁকলাই' বা 'মা ঝঙ্কেশ্বরী' নামে পুজো পায়। প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন এই সাপের পুজো মঙ্গলকোটের চার গ্রামের নিজস্ব উৎসব হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে উদযাপন করা হয়। ঝাঁকলাই দেবীর পুজোকে ঘিরে আশপাশ গ্রামের ভক্তদের প্রচুর ভিড় হয়। ঝাঁকলাই দেবী গ্রামের রাস্তায়, বাড়ির উঠোনে, ঘরের আনাচে-কানাচে অনায়াসে ঘুরে বেড়ায়। মানুষের সঙ্গে সাপের এই অদ্ভুত সহাবস্থান দেখতে প্রচুর মানুষ ভিড় করে মঙ্গলকোটের এই চার গ্রামে।

Add Zee News as a Preferred Source

আরও পড়ুন: Horoscope Today: মেষের কর্মক্ষেত্রে সাফল্য, কর্কটের সম্পত্তিপ্রাপ্তিযোগ, ধনুর আধ্যাত্মিকতা! জেনে নিন, আজ কেমন কাটবে আপনার দিন...

সর্পবিশেষজ্ঞদের দাবি, সঠিক সংরক্ষণের অভাবে এই বিশেষ প্রজাতির সাপ লুপ্ত হয়ে যাবে। সাপ এখানে জীবন্ত দেবতা। এখানকার এই বিশেষ সাপ দেখতে বিষধর কেউটে প্রজাতির হলেও নির্বিষ বলে গ্রামবাসীদের বিশ্বাস। কালো মাথার পিছন দিকে একটি চক্র আছে, ল্যাজের দিকটা একটু কাটা, গতি শ্লথ। এই সাপ কামড়ালে কেন বিষ হয় না, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায়নি। 

দু'দশক আগে সর্পবিজ্ঞানীরা গ্রামে এসে পরীক্ষা করলেও সাপ ধরে ল্যাবরেটোরিতে নিয়ে যেতে পারেননি। গ্রাম্যবিধিতে এখানে সাপ ধরা বা মারা যায় না। এই চার গ্রামে বেদে সম্প্রদায়ের প্রবেশ নিষেধ। কেউ যদি সাপ মারে তার জরিমানা করা হয়। গ্রামবাসীদের দাবি, এখানকার সাপ কাউকে সহজে কামড়ায় না। যদি কখনও সাপ কোনও গ্রামবাসীকে দংশন করে তাহলে তাঁকে দেবীর প্রসাদ হিসেবে মেনে নিয়ে দেবীর নামাঙ্কিত একটি পুকুরের মাটি ও জল ক্ষত স্থানে লাগিয়ে নিতে হবে। সাপের মৃত্যু হলে দেহ গঙ্গায় দিয়ে সৎকার করতে হয়। গ্রামের মানুষের বিশ্বাস, এই সাপকে পুজো করলে গ্রাম রক্ষা পাবে। অনেক বিপদ এমনকী প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে গ্রামবাসীরা রক্ষা পায়। ঝাঁকলাই দেবীর নামের সঙ্গে অনেক লোককথা মিশে আছে।

আরও পড়ুন: Patharpratima: আতঙ্ক! বাঁধ ভেঙে সমুদ্রজলে প্লাবিত হয়ে গেল বিস্তীর্ণ এলাকা...

শাস্ত্রীয় মতে, এই সর্পদেবী আদতে কালনাগিনী। মনসামঙ্গলের কাহিনি অনুসারে, লখিন্দরকে দংশনের পরে বেহুলার শাপগ্রস্ত হয়ে কালনাগিনী নির্বিষ সাধারণ সাপ হিসেবে মর্ত্যের গহ্বরে বসবাস করছে। দেবীর স্বপ্নাদেশে আনুমানিক ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে পলসোনার ভূমিপুত্র পণ্ডিত মুরারি চক্রবর্তী ঝাঁকলাই দেবীর প্রস্তরমূর্তি মাঠ থেকে তুলে এনে গ্রামে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন। আষাঢ় মাসের কৃষ্ণা প্রতিপদ তিথিতে সাপকে এখানে দুধ, ফুল সহযোগে সিঁদুর মাখিয়ে ব্রাহ্মণপুজো করে। বাড়ির উঠোন, শোবার ঘর, রান্না ঘর, ঠাকুর ঘরেও ঝাঁকলাইয়ের অবাধ যাতায়াত। এই চার গ্রামে অন্য কোনও প্রজাতির সাপের দেখা মেলে না এবং রাত্রিকালে দেবী ঝাঁকলাই রাস্তায় বের হন না বলে দাবি গ্রামবাসীদের। ঝাঁকলাই দেবী দেখলে বাড়ির মহিলারা আতঙ্কিত হন। কিন্তু বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর, এই প্রবাদকে আঁকড়ে সাপের সঙ্গে সহ-বাস করে এখানকার মানুষ জীববৈচিত্রের গতিকে সচল রেখেছেন।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)

About the Author

Soumitra Sen

পেশায় দীর্ঘদিন। প্রিন্ট মিডিয়ায় শুরু। ওপিনিয়ন পেজ এবং ফিচারই সবচেয়ে পছন্দের। পাশাপাশি ভ্রমণসাহিত্য, সংগীত ও ছবির মতো চারুকলার জগৎও। অধুনা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সেসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অ্যাস্ট্রো, লাইফস্টাইল, পপুলার সায়েন্স ও ইতিহাস-অ্যানথ্রোপলজিক্যাল বিষয়পত্তরও। আদ্যন্ত কবিতামুগ্ধ. তবু বিভিন্ন ও বিচিত্র বিষয়ের লেখালেখিতে আগ্রহী। সংবাদের অসীম দুনিয়ায় উঁকি দিতে-দিতে যিনি তাই কখনও-সখনও বিশ্বাস করে ফেলেন-- 'সংবাদ মূলত কাব্য'!

...Read More

.