অরূপ বসাক: শুকনো, ঝরা পাতায় ভরে রয়েছে অফিসের সামনের উঠোন, ফুলের বাগান। পায়ের চাপে পাতাগুলো মচ্মচ্ করে গুঁড়িয়ে যাওয়ার শব্দে ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে নিস্তব্ধতা। শুনশান সোনালি চা-বাগানের অফিসের গেটের দূরে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আগন্তুকের গতিবিধি নজর রাখছিলেন তিনজন শ্রমিক। এগিয়ে গিয়ে কথা শুরু করতেই কোঠি লাইনের বাসিন্দা দ্বিধাগ্রস্ত তিন পুরুষ শ্রমিক বুনি ওঁরাও, সাধু ওঁরাও এবং শনি ওঁরাও বলেন, 'পুরনো মালিক আমাদের পাওনাগন্ডা বকেয়া রেখে বাগান ছেড়ে পালিয়েছে। আমরা নতুন মালিক চাই।'


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: Antarctic: বিপদের গন্ধ! বিশ্বের সবচেয়ে হিমশীতল জায়গার তাপমাত্রা এক লাফে এতটা বাড়ল কেন?


এদিকে সামনেই লোকসভা নির্বাচন। আর তার ঠিক আগেই বন্ধ হয়ে গেল সোনালি চা-বাগান। ফলে বাগানের শ্রমিকেরা ভোট নিয়ে কী ভাবছেন, সেই প্রশ্নটা ওঠেই। এ বিষয়ে প্রশ্ন করতেই তাঁদের খোলাখুলি জবাব এল, আমরা মমতাদিদির সমর্থক। তবে এবারে কী হবে, এখনও ঠিক করিনি। কোঠি লাইন ধরে কয়েক কদম এগতেই নজরে এল পরিষ্কার টিনের চালে ঢাকা দুটি বড় বিল্ডিং। একটি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গড়ে ওঠা চা-বাগানের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অন্যটি শিশুদের জন্য আধুনিক ক্রেশ। কাছে যেতেই বন্ধ ঘরের চাবি আনতে ছুটলেন পাশের বাড়ির মহিলা চা-শ্রমিক বেনো ওঁরাও। সব কিছু ঘুরে দেখিয়ে বেনো ওঁরাওয়ের আক্ষেপ, হাসপাতাল বিল্ডিং তো হয়েছে, তবে বেড, আসবাবপত্র নেই। কবে চালু হবে, তার নিশ্চয়তাও কিছু নেই। আধুনিক ক্রেশ হাউসও খাঁ খাঁ করছে। সমস্যার মূলে যে বাগান বন্ধ থাকা ,তাও জানাতে ভুললেন না বেনো। তাঁর কথায়, অন্য বাগানে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করে কোনওমতে সংসার চলছে। রাজ্য সরকারের তরফে দুবার জি আর পেয়েছি। এর বাইরে আর কোনও সরকারি সাহায্য পাইনি। গাড়ির অভাবে ১৩ কিমি দূরের ওদলাবাড়ি আদর্শ হিন্দি হাই স্কুলের পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারছি না। লাটে উঠেছে পড়াশোনা। অবিলম্বে বাগান খুলুক এটাই চাই, সাফ কথা বেনো ওঁরাওয়ের। 


কথায় কথা বাড়ে। এরপর ভোটের প্রসঙ্গ তুলতেই বেনো বলেন, এতদিন মমতাদিদিকে ভোট দিয়ে এসেছি, এবারে ভোট দেব কি না, তা এখনও ঠিক করিনি। তবে কি বাগান খোলার দাবিতে ভোট বয়কটের পথে হাঁটতে চলেছে সোনালি চা-বাগানের শ্রমিকরা? কোঠি লাইন, জংলি লাইনের কাদামাখা শ্রমিক মহল্লায় ঘুরে বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলার পর দেখা মিলল বাগানের সাব স্টাফ হিলারিয়াস টিগ্গার। বাগানের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে হিলারিয়াস বলেন, টানা কয়েকমাস বৃষ্টি এবং সেচের অভাবে ২১৭ হেক্টরের প্ল্যান্টেশন এরিয়ার ৪,৫ এবং ১৪ নম্বর সেকশনের চা গাছ পুরোপুরি ঝলসে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই ঝলসানো গাছে চা পাতা পাওয়া যাবে না। বাগানের দায়িত্বভার নিতে নতুন করে যে এক দু'জন এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁরাও বাগানের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে পিছিয়ে গিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বর্তমানের স্থায়ী শ্রমিকসংখ্যা ৩৫৮  জন থেকে কমিয়ে অর্ধেক করার প্রস্তাব রেখেছেন।


উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে শ্রমিকদের। ভোটের আগে অবিলম্বে বাগানটি পুনরায় চালু করার উদ্যোগ না নেওয়া হলে বাগরাকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই চা-বাগানের দুটি বুথের ১৫০০ ভোটাররা একত্রিত ভাবে ভোট বয়কটের মতো সিদ্ধান্ত নিতেও যে পিছপা হবেন না, তা  বুঝিয়ে দিয়েছেন হিলারিয়াস টিগ্গা থেকে শুরু করে সোনালির চা-শ্রমিকরা।


আরও পড়ুন: Chaitra Navratri | Ram Navami: কবে থেকে শুরু চৈত্র নবরাত্রি তিথি? রামচন্দ্রের সঙ্গে কী যোগ এই উৎসবের?


এ ব্যাপারে জলপাইগুড়ি জেলার বিজেপি পার্থী ড. জয়ন্ত রায় বলেন, বহু বাগান বন্ধ রয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর এদিকে নজরই নেই। আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী বুলুচিক বড়াইক বলেন, এর আগে বহু বাগান বন্ধ ছিল, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে একে একে সব চা-বাগানই খুলছে। সোনালি চা-বাগানও খোলা হবে। 


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)