আপত্তিকর ভিডিয়ো তুলে ব্ল্যাকমেল স্বামীর, থানা চত্বরেই হাতের শিরা কাটল নববধূ
একপ্রকার নিরুপায় হয়েই গৃহবধু সাইবার ক্রাইম থানা চত্বরে নিজের হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে দাবি। রক্তাক্ত তরুণী গৃহবধুর এহেন অবস্থা দেখে যারপরনাই ঘাবড়ে যায় রায়গঞ্জ সাইবার ক্রাইম থানার পুলিস আধিকারিকরা৷
ভবানন্দ সিংহ: ভরসন্ধেয় উত্তর দিনাজপুরের কর্নজোড়ায় হাড়হিম কাণ্ড। আপত্তিকর ভিডিয়ো তুলে লাগাতার ব্ল্যাকমেইল স্বামীর। অভিযোগ তুলে রায়গঞ্জ সাইবার ক্রাইম থানা চত্বরেই হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা নববধূর। সাত মাস ধরে পুলিসের দোরে দোরে ঘুরেও মেলেনি বিচার। তরুণীর অভিযোগ বছর খানেক আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের মাস তিনেক পর থেকে তরুণী জানতে পারে স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। এরপেরই শুরু হয় নির্যাতন।
আরও পড়ুন, Bengal Weather: ফের নিম্নচাপ ঘনাচ্ছে রাজ্যে, শীতের আমেজে কাঁটা, কবে থেকে বাড়বে তাপমাত্রা?
করনদিঘি থানায় নালিশেও হয়নি কাজ। উল্টে রায়গঞ্জ সাইবার ক্রাইম থানায় যেতে বলা হয় বলেও দাবি তরুণীর। এরপরেই লাগাতার স্ত্রীর ভিডিও ভাইরাল করে দেন স্বামী। গতকালও থানায় ডেকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ তরুণীর। চলে অপমানও। এরপরেই হাতের সিরা কেটে ফেলেন তরুণী। তড়িঘড়ি থানায় ছুটে আসেন পুলিস কর্তারা। ডাকা হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেও।
অভিযোগ স্বামীর অন্য মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্কে স্ত্রী লাগাতার আপত্তি ও বিরোধ করায় এই নির্যাতন করছিল স্বামী। ঘটনার অভিযোগ নিয়ে প্রথমে করনদিঘি থানার দারস্থ হয় নির্যাতিতা স্ত্রী। করনদিঘি থানার পুলিস কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে রায়গঞ্জ সাইবার ক্রাইম থানায় যেতে বলে নির্যাতিতাকে। এই সময়ে ফের স্ত্রীর আপত্তিকর ছবি ভাইরাল করার প্রবণতা বেড়ে যায় স্বামীর বলে জানা গেছে। নিরুপায় হয়ে রায়গঞ্জ সাইবার ক্রাইম থানার দারস্থ হয় ওই গৃহবধূ।
এদিন সাইবার ক্রাইম থানার আধিকারিকরা ওই নির্যাতিতাকে অভিযুক্ত স্বামী ও তার আইনজীবীর সঙ্গে বসে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচোনার জন্য সাইবার ক্রাইম থানায় ডাকে বলে দাবি গৃহবধুর। ডাক মতন বিকাল ৪ টায় কর্নজোড়ায় সাইবার ক্রাইম থানায় নিজের মাকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয় নির্যাতিতা। কিন্তু এদিন ৬ টার পরেও কেউ আসেনি বলে অভিযোগ। পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম থানার মহিলা পুলিস কর্মীরা নির্যাতিতাকে ৬ টার পরে আরও বেশী অপমান করে থানা থেকে চলে যেতে বলে অভিযোগ।
ভৌগলিক অবস্থান গতভাবে রায়গঞ্জ সাইবার ক্রাইম থানা রায়গঞ্জ পুলিস জেলার পুলিস লাইন চত্বরে হওয়ায় ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে আসে রায়গঞ্জ পুলিস জেলার ডি,এস,পি ট্রাফিক। খানিকবাদে আসেন রায়গঞ্জ পুলিস জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার তন্ময় সরকার ও করনদিঘি থানার আই,সি পলাশ মহন্ত। ওই রক্তাক্ত তরুণী গৃহবধূর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তারা। পরে তরুণী গৃহবধূর কাউন্সিলিং -এর জন্য ডাকা হয় স্থানীয় এনজিও কর্মীদের।
হাতের শিরা কেটে ফেলার পরে গৃহবধূর অভিযোগ ছিল তিনি আর পুলিসের উপরে আস্থা রাখতে পারছেন না। তিনি নিজের সামাজিক সম্মান ফিরে পেতে চান, কিন্তু পুলিশ কোনও ভাবেই মদত দিচ্ছে না তাকে। গৃহবধূর মায়ের অভিযোগ, সব জায়গায় পয়সা খেয়ে জামাইয়ের পক্ষে হয়ে যাচ্ছে পুলিস। তারা সমাজে মুখ দেখাতে পারছে না। যদিও রায়গঞ্জ পুলিস জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময় সরকার এদিন ঘটনার পরে বলেন, এটা একটা পারিবারিক সমস্যা৷ আমরা ওই তরুণী গৃহবধূর সঙ্গে আছি। উনি ডিপ্রেশন থেকে এরকম করেছেন। উনি বিচার পাবেন।
পুলিসের আশ্বাস মিলেছে, তবে আস্থা রাখতে পারছেন না তরুণী। নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, জামাইয়ের থেকে ঘুষ খেয়েই তাঁর মেয়েই অপমান হেনস্থা করছে পুলিস। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে কেন সাত মাস ধরে থানায় থানায় ঘুরেও বিচার পেলেন না নির্যাতিতা। কেন সামাজিক সুরক্ষা দিতে পারল না পুলিস? কেন সুরক্ষা পেতে থানা চত্বরেই হাতের শিরা কাটতে হল ওই তরুণীকে? কীভাবেই বা পুলিস লাইনের কড়া নজরদারি এড়িয়েই হাতের শিরা কেটে ফেললেন তরুণী? প্রশ্ন অনেক, কিন্তু উত্তর অধরাই।
আরও পড়ুন, Kultali: সন্ধে নামলেই স্কুলে মদের ঠেক, অভিযোগ জানিয়েও মেলেনি সুরাহা, দাবি স্থানীয়দের...
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)