চিনের নয়া চাল! না কি এক দশক পর সুমতি ফিরল বেজিংয়ের!
২০১৭ সালে টানা ৭২ দিনের ডোকলাম ইস্যুতে তলানিতে নামে ভারত ও চিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী-সহ দিল্লির একাধিক প্রতিনিধির সফরে সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে সক্ষম হয় নয়া দিল্লি
নিজস্ব প্রতিবেদন: এক দশক লাগলো চিনের ‘সুমতি’ ফিরতে! ২০০৯ সালে মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি চিহ্নিত করতে সরব হয়েছিল ভারত। পাঠানকোট, উরি হামলার পর আদাজল খেয়ে ভারত নেমে পড়লেও চার বার ভিটো প্রয়োগ করে জল ঢেলে দেয় চিন। তবে, বুধবার তাদের ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’ শুধরে মাসুদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি তকমা দিতে রাজি হয়। আর এরপরই কূটনীতিকরা চিনের এই পদক্ষেপকে ‘সুমতি’ বলেই ব্যাখ্যা করছেন। এই মুহূর্তে দক্ষিণ-এশিয়ার অন্যতম পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত। জিডিপি-র নিরিখে তো বটেই, অস্ত্রভাণ্ডারের ক্ষমতাতেও প্রথম সারির দিকে রয়েছে এই একশো তিরিশ কোটির দেশটি। এই মুহূর্তে বিশ্বের দরবারে ভারতের যা অবস্থান, জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়ার চেয়ে সমীহ করাটাই প্রতিবেশী দেশের বেশি লাভজনক বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। অন্তত, বুধবার পাক মদত পুষ্ট মাসুদ আজহারকে রাষ্ট্রসঙ্ঘ আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণা করার পর থেকেই এভাবেই কূটনীতিকরা ভারতের সপক্ষে সজোরে ব্যাট চালাচ্ছেন। কেন?
প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত বিবেক কাটজু বলছেন, ভারতের নির্বাচনের মাঝে চিনের মত বদল অত্যন্ত রাজনৈতিক। তাঁর মতে, নরেন্দ্র মোদীকে কিছু পয়েন্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দিচ্ছে বেজিং। যদি তিনি ফের ক্ষমতায় ফেরেন অথবা না-ও ফেরেন চিনকে কেউ দোষারোপ করতে পারবে না। ভারতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক বাণিজ্যিক পরিসরে আগাম ঘোড়ার চাল দিয়ে রাখল বেজিং। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে জড়িয়ে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে তাদের অর্থনীতি। বাধ্য হয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চিনকে জিডিপি-র লক্ষ্যমাত্রা ৬.৫ শতাংশ কমিয়ে ৬ শতাংশে আনতে হয়। ২০১৬ সালে অক্টোবরের পর মার্কিন রফতানি এক ধাক্কায় ৩.৭ শতাংশ নেমেছে। এ পরিস্থিতে বাজার চাঙ্গা করতে ভারতকেই পাখির চোখ করে এগোতে চাইছে বেজিং। সম্প্রতি বেজিংয়ের আরও নরম মনোভাবপন্ন ইঙ্গিত মিলেছে, ওবরের মানচিত্রে কাশ্মীর এবং অরুণচলকে ভারতের অংশ বলে দেখানোয়। এর আগে অরুণাচলকে ভারতের অংশ তো দূর, ওই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর পা পড়লে গোঁসা হত তাদের। অরুণাচলের একাংশকে বরাবরই দক্ষিণ তিব্বতের অংশ বলে দাবি করে চিন। পাশাপাশি পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারত-বহির্ভূত অংশ হিসাবেই দেখানো হয়।
আরও পড়ুন- চাপে মত বদল চিনের, মাসুদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণায় কৃতিত্ব নিল ট্রাম্প প্রশাসন
২০১৭ সালে টানা ৭২ দিনের ডোকলাম ইস্যুতে তলানিতে নামে ভারত ও চিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী-সহ দিল্লির একাধিক প্রতিনিধির সফরে সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে সক্ষম হয় নয়া দিল্লি।। এ ক্ষেত্রেও দক্ষতার সঙ্গে ভারত দূরদৃষ্টতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। পাশাপাশি, কূলভূষণ যাদব বিষয়ে বিশ্বের দরবারে সাফল্যের সঙ্গে কূটনৈতিক পরিচয় দেখিয়েছে ভারত। বিশেষজ্ঞদের দাবি, দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনৈতিক স্তরেও ভারত যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। তা হাড়েহাড়ে অনুভব করছে বেজিং-ও।
ভারতের ঘাড়ের ওপর দিয়ে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর তৈরি হয়েছে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে সেই করিডর যাওয়ায় রাষ্ট্রসঙ্ঘে চিনের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গেছে নয়া দিল্লিকে। আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা-সহ ভারতের একাধিক প্রতিবেশী দেশ ওবরের অন্তভুক্তি করতে সক্ষম হয়েছে চিন। ভারতকেও সেই সারিতে রাখতে বেজিং মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি কূটনীতিকদের।
সন্ত্রাস হানায় ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের প্রায় সব দেশই। ওই একটি ইস্যুতে সহমত হয়ে এক ছাদের তলায় দাঁড়িয়েছে আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন-সহ ছোটো বড় প্রায় সব দেশ। পুলওয়ামা হামলার পর তাদের মন জয় করতে ভারতকে সে ভাবে পরিশ্রম করতে হয়নি। অন্য দিকে ‘সব আবহাওয়ার বন্ধু’ পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে চিন কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রসঙ্ঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করায় বেজায় খাপ্পা বেজিং। কার্যত বাধ্য হয়েই বেজিংকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয় বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে, একাংশের মত, ভারতের একচেটিয়া বাজার ধরে রাখতেই নয়া দিল্লিকে নয়া চাল দিয়ে রাখল চিন। এখন শুধু তাকিয়ে ভোটের ফলের দিকে...