ক্রমশ বিলুপ্তির পথে চিনের প্রাচীর
দেওয়ালের ইঁট চুরি করে হচ্ছে তৈরি হচ্ছে বাড়ির কাজে, আর তাতেই ক্রমশ বিলুপ্তির পথে কিন রাজবংশের তৈরি হওয়া মহাশ্চর্যের চিনের প্রাচীর। এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট পেশ হয়েছে চিনের সংবাদমাধ্যমে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী চিনের মহাপ্রাচীরের ৩০ শতাংশ অবলুপ্তি হয়ে গিয়েছে। যার কারণটা প্রাকৃতিক আর মানুষের সচেতনার অভাব।
ওয়েব ডেস্ক: দেওয়ালের ইঁট চুরি করে হচ্ছে তৈরি হচ্ছে বাড়ির কাজে, আর তাতেই ক্রমশ বিলুপ্তির পথে কিন রাজবংশের তৈরি হওয়া মহাশ্চর্যের চিনের প্রাচীর। এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট পেশ হয়েছে চিনের সংবাদমাধ্যমে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী চিনের মহাপ্রাচীরের ৩০ শতাংশ অবলুপ্তি হয়ে গিয়েছে। যার কারণটা প্রাকৃতিক আর মানুষের সচেতনার অভাব।
সরকারি গণনামতে চিনের মহাপ্রাচীরের দৈর্ঘ্য ৮,৮৫১.৮ কিলোমিটার (৫,৫০০ মাইল) হলেও, হাজার বছর পূর্বে যখন এই মহাপ্রাচীর নির্মিত হয়, তখন এর দৈর্ঘ্য ছিল ২১,১৯৬.১৮ কিলোমিটার (১৩,১৭০ মাইল)। এর নিরক্ষবৃত্তের পরিধি ৪০,০৭৫ কিলোমিটার ৯২৪,৯০১ মাইল)। কিন্তু এখন চিনের প্রাচীরের দৈর্ঘ্য বেশ খানকিটা কমে এসেছে বলে রিপোর্টে প্রকাশ।
মহাপ্রাচীরের উত্তর-পশ্চিম অংশ (গানসু ও নিংজিয়া প্রদেশ অংশে) খুব দ্রুত ধসে যাচ্ছে। মনে করা হয় যে, এসব অংশ মানুষ ও প্রকৃত্রির দ্বারা আগামি ২০ বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যবন্ত যখন সাংস্কৃতিক বিপ্লব সংগঠিত হয়, সেসময় বাড়ি, খামার ইত্যাদি তৈরির জন্য মহাপ্রাচীরের অনেক ইট খুলে নিয়ে যাওয়া হয়। না হলে, এই মহাপ্রাচীরের অনেক অংশ আজকের তুলনায় অনেক বেশি সংরক্ষিত থাকতো।
শেষ একশো বছরের চিনের প্রাচীরের দৈর্ঘ্য ১৯৬২ কিলোমিটার কমে গিয়েছে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। মজবুত ইঁট ও পাথরের তৈরি হলেও ঝড়, বৃষ্টি, প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝার পর চিনের প্রাচীরের বেশ কিছু অংশ দুর্বল হয়ে পড়েছে বলেও জানানো হয়েছে সেই রিপোর্টে। এমনকী এভাবে চলতে থাকলে চিনের এই মহাপ্রাচীরের বেশ কয়েকটি টাওয়ার ভেঙে পড়বে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে।
পর্যটকদের চাপ আর স্থানীয় মানুষদেরও চিনের প্রাচীরের অবলুপ্তির পিছনে একটা বড় কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। লুলং প্রদেশের গরীর গ্রামবাসীরা প্রাচীরের দেওয়াল থেকে ইঁট কেটে বের করে এনে ঘর তৈরি করছে। কখনও আবার প্রাচীর থেকে ফলক কেটে নিয়ে তা পর্যটকদের কাছে মোটা দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী মহাপ্রাচীরের ইঁট কেটে বের করে আনলে ৫ হাজার ইয়ান (ভারতী মুদ্রায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা) জরিমানা করা হয়। কিন্তু সেই নিয়মকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মহাপ্রাচীরের নিধনযজ্ঞ চলছে।
চিনের মহাপ্রাচীর নিয়ে যত লোককথা প্রচলিত আছে, এগুলোর মধ্যে ‘মেন জিয়াংগুর বেদনাদায়ক কান্না’ বেশ সুপরিচিত। মেন জিয়াংগু’র স্বামী এই প্রাচীর তৈরির সময় মারা যান। কথিত আছে, মেনের কান্না এতই বেদনাদায়ক ছিল যে, মহাপ্রাচীরের একটি অংশ ধসে যায়। আর সেখান থেকে তার স্বামীর হাড়গোড় বের হয়, যেন সে সেগুলো কবর দিতে পারে।