একটি নতুন দেশ জেগে উঠল পূর্বাচলের আলোর দিকে তাকিয়ে

সৌমিত্র সেন

Updated By: Dec 16, 2020, 07:40 PM IST
একটি নতুন দেশ জেগে উঠল পূর্বাচলের আলোর দিকে তাকিয়ে

সৌমিত্র সেন

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বেধেছিল ১৯৭১ সালে। ১৬ ডিসেম্বর এই যুদ্ধে জয়ী হল বাংলাদেশ (BANGLADESH)। পূর্ব পাকিস্তান (EAST PAKISTAN) হয় বাংলাদেশ। পাকিস্তান সৈন্যরা ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই আত্মসমর্পণের ঘটনাটি ঘটেছিল রমনা রেস কোর্সে, যেটির এখনকার নাম সুরাওয়ার্দি উদ্যান। 

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি (INDIRA GANDHI) পূর্ব পাকিস্তানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁরই সক্রিয় সহযোগিতায় জন্ম হয়েছিল স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। এই দিনটিতে প্রতি বছর বাংলাদেশবাসীরা তাঁদের স্বাধীনতা সংগ্রামী, শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। আজই সেই বিশেষ দিন। 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয়ে যায় এক জনযুদ্ধ। যার আদল অনেকটা গেরিলাযুদ্ধের মতো। এবং যে যুদ্ধ শেষ হয় স্বাধীনতাযুদ্ধে।

কেন এই যুদ্ধ, তার একটি পটভূমিও ছিল। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই এর পূর্ব অংশ পশ্চিম অংশের তুলনায় নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ জন্মের আগে পর্যন্ত টানা ২৩ বছর পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে বিভিন্ন ভাবে শোষণ করে। ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে একটা ফারাক তো ছিলই। এর আগে অবিস্মরণীয় ভাষা আন্দোলন হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে পশ্চিম তথা মূল পাকিস্তানের প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের নানা কিসিমের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল।  

মুক্তিযুদ্ধের শুরুর লগ্নে, ২৫ মার্চের সেই রাতে পাক বাহিনী ঢাকায় ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিস-সহ অসংখ্য সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। আওয়ামি লিগের প্রধান ও পূর্ব বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। কিন্তু বসেছিল না পূ্র্ব পাকিস্তানের বাঙালিরাও। তাঁরাও ভেতরে ভেতরে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে। গড়ে ওঠে 'মুক্তিবাহিনী'। 

পাক সামরিক বাহিনীর 'ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট', 'ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস' (ইপিআর), 'ইস্ট পাকিস্তান পুলিস', সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্য এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ নিজেদের ভূখণ্ডকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করতে কয়েক মাসের মধ্যেই গড়ে তোলে এই মুক্তিবাহিনী। 

ক্রমে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। এবার মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ক্রমশ পর্যুদস্ত হতে থাকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। তারা যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্য-সহ যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে আত্মসমর্পণের দলিলে সই করে। সকলে অবাক হয়ে যায়। ন'মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের অবসান হয়। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে আরও মাসখানেক থেকে যায়। পরে কূটনৈতিক চাপের মুখে ভারত বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

কিন্তু একটি নিপীড়িত অত্যাচারিত দেশকে মুক্তির আলোর দিকে ঠেলে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে ভারতই। এ জন্য নবগঠিত বাংলাদেশ তো বটেই সারা বিশ্বই ভারতের ভূমিকার প্রশংসা করে।  

ALSO READ: নানা দেশে ছড়িয়ে বিস্ময়কর মনোলিথ! এলিয়েনদের কাণ্ড নাকি?

.