২০০২ সালে সার্স-মহামারীকেও ছাপিয়ে গেল নোভেল করোনা, কড়া সতর্কবার্তা হু-র
এখনও পর্যন্ত চিনেই কমপক্ষে ৮০০ জনের মতো মৃত্যু হয়েছে। এই রোগকে মহামারী বলে চিহ্নিত করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু ওই সংস্থার দাবি, ২০০২-০৩ সালে সিভিয়ার অ্যাকুইটি রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স)-এর মারণ ছোবলে মৃত্যু হয়েছিল ৭৭৪ জনের
নিজস্ব প্রতিবেদন: গত বৃহস্পতিবার ৬০ বছর বয়সী এক আমেরিকান চিনের উহানে মৃত্যু হয়। একই শহরে এক হাসাপাতালে মৃত্যু হয় এক জাপানির। শুধু চিন নয়, ফিলিপিনস, হংকংয়ের মৃত্যু হয়েছে কয়েক জনের। সবারই করোনার কবলে মৃত্যু হয়ছে। নোভেল করোনাভাইরাস চিনের উহানে আঁতুড়ঘর। কিন্তু চিন পাড়ি দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে গিয়েছে নোভেল করোনাভাইরাস।
এখনও পর্যন্ত চিনেই কমপক্ষে ৮০০ জনের মতো মৃত্যু হয়েছে। এই রোগকে মহামারী বলে চিহ্নিত করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু ওই সংস্থার দাবি, ২০০২-০৩ সালে সিভিয়ার অ্যাকুইটি রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স)-এর মারণ ছোবলে মৃত্যু হয়েছিল ৭৭৪ জনের। তাকে ছাপিয়ে গেল নোভেল করোনাভাইরাস। এমনটাই দাবি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র।
আরও পড়ুন- থাইল্যান্ডে একাধিক জায়গায় নির্বিচারে গুলি চালাল থাই সেনা জওয়ান, নিহত কমপক্ষে ১৭
সার্সও এক ধরনের করোনাভাইরাস। ২০০২ সালে আবিষ্কৃত হয় এটি। সে সময়ও সার্সের হানায় মহামারী আকার ধারণ করে। উপসর্গ কার্যত এক হলেও এই নতুন ভাইরাসের এখনও পর্যন্ত প্রতিষেধক বার করা সম্ভব হয়নি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরীকালীন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে চিন। এক সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতাল তৈরি করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্সা চালানো হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়া উহান প্রদেশকে কার্যত আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে যেতে ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এক নজরে জেনে নেওয়া যাক নোভেল করোনাভাইরাস সম্পর্কে:
** ২০১৯-করোনাভাইরাস কাকে বলে?
চিনের উহান শহরে প্রথম এই করোনা ভাইরাস দেখা গিয়েছে। এই ভাইরাস মানব শরীরে প্রথম শ্বাস যন্ত্রকেই আক্রান্ত করে। সামুদ্রিক প্রাণির থেকেই এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে বলে অনুমান বিজ্ঞানীদের। শ্বাসযন্ত্রকে প্রথম আক্রান্ত করার ফলে, শ্বাসপ্রশ্বাস-হাঁচির মাধ্যমে একজনের থেকে অন্য জনের মধ্যে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস।
** নোভেল করোনাভাইরাস কাকে বলে?
নোভেল করোনাভাইরাস একেবারেই নতুন একটি ভাইরাস। ২০১৯-নোভেল ভাইরাসের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। মানুষে মধ্যে যে করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে তা প্রধানত চার ধরনের হতে পারে। আলফা, বিটা, গামা, ডেল্টা। যে ভাইরাস গুলি মানুষকে আক্রমণ করছে সেগুলি হলো – (আলফা)229E, (আলফা)NL63, (বিটা)OC43, (বিটা)HKU1।
এছাড়াও আরও কিছু করোনাভাইরাস আছে। যেগুলি সাধারণত জীবজন্তু থেকে আসে। সেগুলি হলো - MERS-COV, SARA-COV, 2019-Novel Coronavirus.
** কি করে নিজেকে রক্ষা করবেন এই ভাইরাস থেকে?
এখনো পর্যন্ত এই ভাইরাসের ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। কিন্তু কিছু নিয়ম যদি আমরা প্রতিনিয়ত অনুসরণ করি, তাহলে হয়তো এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারি।
** সাবধানতা বজায় রেখে রোগীর চিকিত্সার ব্যবস্থা করুন। অবশ্যই বেশ কিছু ক্ষেত্রে দূরত্বও বজায় রাখা দরকার।
** কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে ভাল করে হাত ধুতে হবে।
** ভাল করে হাত না ধুয়ে চোখ, মুখ, নাকে হাত দেওয়া যাবে না।
** অসুস্থ থাকলে বাড়িতেই থাকার চেষ্টা করুন। এবং চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
** হাঁচি-কাশি বা সর্দির সময় রুমালের বদলে টিস্যু ব্যবহার করুন।
** নিজেকে সব সময় পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন।
** যদি কাছের মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তাহলে কি করা উচিত?
এই ভাইরাস এতটাই ছোঁয়াচে যা কমার বদলে বেড়েই চলেছে। সাধারণত জীব-জন্তুর থেকে প্রথমে মানুষের মধ্যে তারপর একজনের থেকে অন্য জনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। যদি কেউ নিশ্চিত থাকেন করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে তাঁকে এই পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করতে হবে।
** ঘরেই থাকার চেষ্টা করুন এবং চিকিৎসার সাহায্য নিন।
** বাড়িতেই নিজের আলাদা ঘরে থাকুন। অন্য মানুষদের সঙ্গে না থাকাই ভাল এই সময়।
** চিকিত্সকের কাছে যাওয়ার আগে তার সঙ্গে ফোনে কথা বলে নেওয়া উচিত।
** করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিরা মাস্ক ব্যবহার করুন।
** ভাল করে নিজের হাত পরিষ্কার করুন।
** নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস কারোর সঙ্গে শেয়ার করবেন না।
** নিজের মধ্যে কী পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন তা লক্ষ করুন।
** কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন?
জ্বর, কাশি, হাঁচি হতে পারে। প্রবল শ্বাসকষ্ট হবে। কারোর ২ দিনের বেশি সময় ধরে জ্বর বা কাশি থাকে তাহলে দ্রুত চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ নিন।