সদ্যোজাতের 'ডোনাল্ড' নামকরণে প্রবল অরুচি আমেরিকার
নির্ণয় ভট্টাচার্য্য
নামের বদনাম। মার্কিন মুলুকে সদ্যোজাতের নাম আর কেউ খুব একটা 'ডোনাল্ড' রাখতে চাইছেন না, বলছে আমেরিকার 'সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন'-এর দেওয়া তথ্য। কিন্তু কেন এমন হাল? এর জন্য কী দায়ী সেদেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প? প্রশ্নের কোনও সরাসরি উত্তর নেই সংস্থাটির তথ্যে, তবে ইঙ্গিত রয়েছে ভরপুর। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কী তথ্য পরিসংখ্যান পরিবেশন করছে সংস্থাটি-
'মার্কিন সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন'-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সেদেশে জন্মানো ৪ মিলিয়ন সদ্যোজাতের মধ্যে ছেলের নাম 'ডোনাল্ড' রাখা হয়েছে মাত্র ৬২১টি শিশুর ক্ষেত্রে, অর্থাত্ ০.০৩১ শতাংশ। আবার অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, ২০১৫ সালে যেখানে প্রতি ১ হাজার নামের মধ্যে জনপ্রিয়তার নিরিখে 'ডোনাল্ড' নামের অবস্থান ছিল ৪৪৩ তা ২০১৬-তে পিছিয়ে গিয়ে হয়েছে ৪৮৮। ২০১৪ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৪১৮। সংস্থাটি আরও জানাচ্ছে, এই শতকে 'ডোনাল্ড' নামটি সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ২০০০ সালে। ওই বছর প্রতি হাজার নামে ২১৭-নম্বরে ছিল 'ডোনাল্ড'। যে দশকে ডোনাল্ড ট্রাম্প জন্মেছিলেন সেই ১৯৪০-এ 'ডোনাল্ড' ছিল দেশে ১২তম জনপ্রিয় নাম। বর্তমান প্রেসিডেন্টের জন্ম সালে মার্কিন মুলুকে মোট ২,৪৭,৭৫০ জনের 'ডোনাল্ড' নামকরণ হয়েছিল।
এই তথ্য থেকে পরিষ্কার যে, বিশ্ব জোড়া বাণিজ্যের জাল বিস্তার করা নিউ ইয়র্কের কোটিপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প যতই দেশের সর্বোচ্চ পদ আরোহন করার জন্য এগিয়েছেন ততই পিছিয়েছে তাঁর নামের জনপ্রিয়তা। কারণ, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতার সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নেতিবাচক বিতর্ক প্রায় সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেক্স স্ক্যান্ডালে জড়ানোর অভিযোগ থেকে শুরু করে ওবামা কেয়ার বাতিল করা, ভিসা নীতি নিয়ে প্রবল বিতর্কিত পদক্ষেপ, মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল তোলার প্রচেষ্টা, নির্বাচনে রাশিয়া যোগের ইস্যু, প্যারিস পরিবেশ চুক্তি থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে নিয়ে আসা সহ একাধিক ক্ষেত্রে ঘরে বাইরে প্রবল সমালোচিত হয়েছেন ট্রাম্প। রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত বারবার তাঁর অপসারণ চেয়ে পথে নেমেছেন মার্কিন জনতার একাংশ। আর এসবই প্রতিফলিত হয়েছে নাম নামচায়, বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
এমনিতেই পশ্চাত্যের নামে তেমন বৈচিত্র নেই এমন কটাক্ষ হামেশাই ছুড়ে দেয় প্রাচ্য। তারপরে খোদ আমেরিকায় 'ডোনাল্ড'-এর মতো সাবেক জনপ্রিয় নামের এমন দুরবস্থা সত্যিই চিন্তার বিষয়। তবে, 'ডোনাল্ড' তলানিতে পৌঁছনোয় উঠে এসেছে বেশ কিছু নতুন ধরনের নাম। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'Noah', 'Liam' ইত্যাদি। পুরুষ নামে রদবদল ঘটলেও মেয়েদের নামের ক্ষেত্রে এখনও সেদেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে 'Emma'। এই হল মোটামুটি সেদেশের নামের বর্তমান মানচিত্র। তাহলে কী বুঝলেন, শেক্সপীয়ার যতই লিখুন, 'What's in a name', তা অন্তত এক্ষেত্রে একেবারেই অচল, বরং নেমের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে 'ফেম'। সেই 'ফেম' শেষ হলে, কেউ আর 'নেমশেক' হতে চাইবে না। অর্থাত্, ফেম শেষ তো নেম শেষ।