Durga Puja 2022 : ছুটির দিনে কেন? পুজোর দিনেই নিয়ম মেনে স্টকহলমের দুর্গা পুজো...
Durga Puja 2022 : প্রবাসে পুজো মানেই ছুটির দিনে পুজো। সেই ছুটিতে পুজো করতে গিয়ে হয় দশমীর পর পুজো হত, না হলে মহালয়ার আগে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর আর তা হয় না। পুজোর দিনেই পুজোর রীতি মেনেই এখন স্টকহলমের পুজো হয়। জেনে নিন এই জমজমাটি পুজোর সব আয়োজন...
দেবযানী দে, স্টকহলম পূজা কাউন্সিল
অধিকাংশ জায়গায় প্রবাসে পুজো মানেই মূলত ছুটির দিনে সময় করে পুজো! হয় আসল পুজোর দিন আসার আগেই পুজো শেষ হয়ে যাওয়া , অথবা মা এর বিসর্জন হয়ে যাওয়ার পর পুজোর শুরু! অবশেষে আমরা কয়েক প্রবাসী বাঙালি পরিবার বছরের পর বছর এই গতানুগতায় ক্লান্ত হয়ে কয়েক বছর আগেই সিদ্ধান্ত নিই আর এভাবে পুজো না করে, পুজোর দিনে সব রীতি নীতি মেনে পুজোর মতো করে পুজো উপভোগ করব! আর সেই উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৯ সালে শুরু হয় আমাদের পথ চলা। স্টকহলম হিন্দু মন্দিরের সহযোগিতায় আমরা শুরু করি দুর্গাপুজোর আয়োজন। অনুষ্ঠানাদি, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি অনুসঙ্গিগতাকে কম প্রাধান্য দিয়ে পুজোর নিয়ম নিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে যাওয়াই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
নরডিক দেশগুলোর মধ্যে আমরাই প্রথম কুমারীপুজো এবং কুষ্মান্ড বলির প্রচলন শুরু করি। যথারীতি এগুলি স্টকহলমবাসীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠেছে! এ নিশ্চয়ই অনেকের জানা যে, প্রবাসে প্রতি বছর নতুন মূর্তি দিয়ে পুজো করা সম্ভব নয়! আমরা দেশি কায়দায় মা’কে বিসর্জন দিতে পারি না। কারণ পরিবেশ প্ৰতিরক্ষা পরিষদের অনেক বাধা নিষেধ আমাদের মেনে চলতে হয়। তাই আমরা একই প্রতিমা দিয়ে কয়েকবছর পুজো করে থাকি। তবে মণ্ডপসজ্জা থেকে বাকি কাজে আমরা প্রতিবছর নতুনত্ব আনার চেষ্টা করি। আমাদের এই বছরের প্রতিমার ব্যাকড্রপ হচ্ছে তামিলনাড়ুর হাজার বছরের বিখ্যাত মীনাক্ষী মন্দির।
পুজোর যাবতীয় খরচ আমরা কমিটির সদস্যরা নিজেরাই বহন করি। মূলত শহরের কিছু বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং উদ্যোগপতিরা আমাদের সহযোগিতা করে থাকেন। পুজোতে যা দান সংগ্রহীত হয়, তা সরাসরি চলে যায় মন্দির উন্নয়ন খাতে। যেখানে করোনা চলাকালীন স্টকহলম এবং সুইডেনের অধিকাংশ পুজো শুধুমাত্র ঘটপুজোতে সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে আমরা একই ভাবে প্রতিমা পুজো করেছি! অবশ্য কোরোনা সম্পর্কিত যাবতীয় বিধি-নিষেধ আমরা সর্বাবস্থায় পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পালন করেছি এবং ২০২০-২০২১ দু’বছরই কোনও সমস্যা ছাড়াই আমরা সুষ্ঠ ভাবে পুজো পালন করতে সক্ষম হয়েছি!
পড়ুন-বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা
আমাদের বাৎসরিক পুজো ম্যাগাজিনের নাম 'ত্রিনয়নী'! দেশ-বিদেশের নানা লেখক লেখিকাদের লেখা তাতে ছাপা হয়ে থাকে! ভারতীয় দূতাবাস আমাদের অন্যতম পৃষ্টিপোষক! দুর্গাপুজোকে শুধুমাত্র বাঙালিদের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে সমগ্র প্রবাসী ভারতীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। আমাদের মতে, এই উদ্দেশ্যে আমরা সফল হতে সক্ষম হয়ছি এবং ভালোও লাগে যখন দেখি আমাদের পুজোর পরিচিতি দিনে দিনে ছড়িয়ে পড়ছে।
দুর্গাপুজোর বিধিপ্রণালী পালনে যাতে কোনরকম অবহেলা বা কার্পণ্য না হয়, সে কারণেই আমরা পুজোর পর আলাদা করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকি। প্রতিবছর ভারতীয় রাষ্ট্রদূত আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের এবং পূজা ম্যাগাজিনের উদ্বোধন করে থাকেন। আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ‘বিজয়া সম্মিলনী ও দীপাবলি’র অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হল ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সংস্কৃতিকে প্রবাসী ভারতীয় এবং ইউরোপীয়দের মাঝে তুলে ধরা।
এছাড়াও বিগত কয়েক বছর ধরে শহরের অন্যতম বিভিন্ন প্রধান সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির পূর্ণ সহযোগিতায় এবং অংশগ্রহণে আমরা যথেষ্ট সাফল্যের সঙ্গে তা পালন করে চলেছি। আমরা ভারত থেকেও খ্যতিমান আর্টিস্টদের আনিয়ে থাকি। এবছরও তার ব্যাতিক্রম নয়। এটা আমাদের গর্ব যে আমাদের অনুষ্ঠান প্রতি বছর শহরে সাড়া জাগিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন : Durga Puja 2022 : সুবর্ণজয়ন্তীর আলোয় উজ্জ্বল ফিলাডেলফিয়ার প্রগতির দুর্গাপুজো