মুঘল আমলে হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত ছিল, দাবি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের
এই মুহূর্তে ধর্ম নিয়ে ভারতে আলোচনা তুঙ্গে। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে দিনদিন ধর্মভিত্তিক মেরুকরণ আরও প্রকট হয়ে উঠছে। বাড়ছে পারস্পরিক অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার চোরা স্রোত এখন পৃথবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের বুকে তীব্রতা পাচ্ছে। এই রকম একটা সময় প্রাথমিক সংস্কৃত বইগুলিতে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ্যে এল নতুন একটি গবেষণামূলক বইতে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিকদের এই উদ্যোগ হয়ত ভারতে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে সাহায্য করবে।
ওয়েব ডেস্ক: এই মুহূর্তে ধর্ম নিয়ে ভারতে আলোচনা তুঙ্গে। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে দিনদিন ধর্মভিত্তিক মেরুকরণ আরও প্রকট হয়ে উঠছে। বাড়ছে পারস্পরিক অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার চোরা স্রোত এখন পৃথবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের বুকে তীব্রতা পাচ্ছে। এই রকম একটা সময় প্রাথমিক সংস্কৃত বইগুলিতে হিন্দু-মুসলিমদের সহাবস্থান সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ্যে এল নতুন একটি গবেষণামূলক বইতে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিকদের এই উদ্যোগ হয়ত ভারতে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে সাহায্য করবে।
কালচার অফ এককাউন্টারস: স্যান্সকৃত অ্যাট দ্য মুঘল কোর্ট নামক বইটির লেখক অড্রে রুশেক। দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতি ও বৌদ্ধিক ইতিহাসের এই স্বনামধন্য গবেষকের মতে ষোলশ থেকে অষ্টাদশ শতকে ভারতে ইসলামিক শাসনকালে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান চরমে পৌঁছেছিল। বরং সে অর্থে ধর্মীয় বিবাদ প্রায় ছিলই না বলা যায়।
প্রচলিত ধারণা মতে মধ্যযুগে যখন ভারতীয় উপমহাদেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে ইসলামিক শাসন তখনই নাকি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সঙ্ঘাত শুরু। রুশেক ঠিক এই ধারণাকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন তাঁর বইতে।
তাঁর বইতে মুঘল আমলে ভারতে ধর্মীয় বৌদ্ধিক বিকাশের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন। বর্ণনা দিয়েছেন সেই আমলে হিন্দু ও পার্সিয়ানদের জীবনযাত্রারও।
''প্রচলিত ধারণার একেবারে বিপরীত চিত্র উপস্থাপিত করেছে অড্রের গবেষণা। যে ধারণা চিরকাল বলে এসেছে মুসলিম শাসকরা ভারতীয় ধর্ম, সংস্কৃতি ও ভাষার প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ করে এসেছেন।'' স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়েছে। রুশেকের মতে ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে মূলত এই বিবেধ ধারণার জন্ম।
তিনি লিখেছেন ''নিজেদের স্বার্থে নিজেদেরকে নিরপেক্ষ রক্ষাকর্তা দাবি করে ব্রিটিশ শাসকরা আসলে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চেয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই তারা একে অপরের শত্রু, এই ধরণের বিকৃত ইতিহাসকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে।''
ঔপনিবেশিকতার অবশাসনের পরেও ডানপন্থী আধুনিক হিন্দুত্ববাদীরা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এই বিবাদকে জিইয়ে রাখতে চেয়েছেন। মত অড্রের।
তিনি লিখেছেন ভারতে বর্তমান ধর্মীয় বিবাদ মুঘল শাসনকালের আসলে ভ্রান্ত ব্যাখার উপর নির্মিত। উপমহাদেশীয় ইতিহাসের সঠিক মূল্যায়নের অভাবেই আধুনিক সময়ে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। যেখানে মুঘক আমলে ধর্মীয় সংঘর্ষের ইতিহাস মিথ্যে সেখানে, সেই মিথ্যেকেই মূলধন করা হচ্ছে।
নিজের গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন মুসলিম শাসকরা কখনই ভারতীয় সংস্কৃতি বা হিন্দুত্ববাদের উপর আধিপত্য কায়েম করতে চাননি। বরং সে সময়ে ধর্ম ও ভাষার ক্ষেত্রে অসাধারণ সহাবস্থান স্থাপন করেছিল উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ।
তিনি দাবি করেছেন মুঘল শাসকরা পুরাতন ভারতীয় সাহিত্য ও জ্ঞান চর্চাকে সমর্থন করেছেন।
অড্রে আশা করেছেন তাঁর গবেষণা আধুনিক ভারতের রাজনৈতিক অবস্থানে অতীতসময়ের প্রভাব খুঁটিয়ে দেখতে নয়া ঐতিহাসিক দিশা দেখাবে।