Durga Puja 2022: লজ্জার ইতিহাস! চিড়িয়াখানার খাঁচায় বন্দি এই তরুণকে দেখতে টিকিট কাটত লোক...
সালটা ১৯০৪। কঙ্গো তখন বেলজিয়ামের উপনিবেশ। সাম্রাজ্যবাদের সাধারণ নিয়মে কঙ্গোর আদি জনগোষ্ঠীগুলির উপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করে শাসক শ্রেণী। ১৯০৪ সালের মার্চ মাসে নিজের বাড়ির পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকেই অপহরণ করা হয় কঙ্গোর এক কিশোরকে। যার কাহিনী পরবর্তী সময়ে কাঁদিয়ে দিয়েছিল সারা বিশ্বকে। কিন্তু কি পরিচয় কঙ্গোর ওই অপহৃত কিশোরের?
অয়ন দাস
সালটা ১৯০৪। কঙ্গো তখন বেলজিয়ামের উপনিবেশ। সাম্রাজ্যবাদের সাধারণ নিয়মে কঙ্গোর আদি জনগোষ্ঠীগুলির উপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করে শাসক শ্রেণী। ১৯০৪ সালের মার্চ মাসে নিজের বাড়ির পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকেই অপহরণ করা হয় কঙ্গোর এক কিশোরকে। যার কাহিনী পরবর্তী সময়ে কাঁদিয়ে দিয়েছিল সারা বিশ্বকে।
কিন্তু কী পরিচয় কঙ্গোর ওই অপহৃত কিশোরের? তাঁর নাম ওটা বেঙ্গা। ওটা বেঙ্গাকে যখন অপহরণ করা হয় তখন তাঁর বয়স মাত্র ১২-১৩। কিশোর ওটাকে সেদিন অপহরণ করেছিলেন স্যামুয়েল নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু কঙ্গোর মতো এক হতদরিদ্র দেশের এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ওটাকে অপহরণ করে স্যামুয়েলের কি লাভ? স্যামুয়েল ভেবেছিলেন লুইসে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড ফেয়ার’- এ কৃষ্ণাঙ্গদের প্রদর্শন করিয়ে টাকা উপার্জন করবেন তিনি। অবাক হচ্ছেন? না অবাক হওয়ার মতো কোন ঘটনা নয় এটা। কারণ ওটা বেঙ্গা একা নয়। যে জাহাজে করে ওটাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিউ অরিল্যান্সে, সেই জাহাজে ওটা ছাড়াও ছিলেন আরও আটজন কৃষ্ণাঙ্গ যুবক। আর শুধুই কি প্রদর্শন? ওটা এবং তাঁর সঙ্গীদের উপর চলত অমানুষিক অত্যাচার। অতি অল্প সময়েই উপনিবেশিক শাসনের নগ্নতা তার চিহ্ন এঁকে দিয়েছিল ওটা এবং তাঁর সঙ্গীদের দেহে এবং মনে। এরপর ওটাকে পাঠানো হয় নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কস চিড়িয়াখানায়। সেখানেও ওটাকে খাঁচায় বন্দি করে চলত প্রদর্শন। আর কঙ্গোর কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরকে দেখতে ভিড় উপছে পড়ত চিড়িয়াখানার খাঁচার সামনে।
খাঁচার সামনে নোটিশও ঝুলিয়ে দেওয়া হয় একসময়, সেপ্টেম্বর মাসের প্রতি দুপুরে দেখা যাবে ওটা বেঙ্গাকে। বানরের খাঁচায় রাখা হত ওটাকে। পরবর্তী সময়ে ব্রঙ্কস চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, ওটার ধারালো দাঁত দেখার জন্য আগ্রহ ছিল দর্শকদের। তাঁকে রাখা হত সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায়। ওটার ওজন ছিল ১০৩ পাউণ্ড, উচ্চতা চার ফুট ১১ ইঞ্চি। সেইসময় নিউ ইয়র্ক টাইমসের পক্ষ থেকে ওটা বেঙ্গাকে দর্শকদের জন্য আকর্ষণীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ওটার ঘটনা নিয়ে শুরু হয় তীব্র প্রতিবাদ। চাপের মুখে শেষপর্যন্ত ওটাকে মুক্তি দেয় ব্রঙ্কস কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুনঃ Durga Puja 2022 : লক্ষ্মীর ভান্ডারেই পুজো, আয়োজনে লক্ষ্মীরাই...
এই ঘটনার প্রায় ১৪৪ বছর পর ক্ষমা চায় ব্রঙ্কস কর্তৃপক্ষ। তবে তার আগে ওটার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে তারা কসুর করেনি। একসময় এও বলা হয়েছিল ওটা আদতে বন্দী ছিলেন না। তিনি ছিলেন ব্রঙ্কস চিড়িয়াখানার এক কর্মী। পরবর্তী সময়ে ওটাকে পাঠানো হয় হাওয়ার্ড কালারড অরফান নামক এক মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে। তারপরে ওটার পালক পিতা ছিলেন গ্রেগ্ররি হেইস। তিনি ওটাকে ভর্তি করেন কলেজেও। তবে এতকিছুর মধ্যেও ওটা তাঁর ফেলে আসা শৈশবের কথা ভোলেননি। তবে শেষপর্যন্তও শতচেষ্টার পরেও পূর্ণ হয়নি তাঁর বাড়ি ফেরার স্বপ্ন। একসময় মাত্র ২৫ বছর বয়সে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন ওটা বেঙ্গা। মৃত্যুর পর তাঁর পালক পিতার পাশেই সমাধিস্থ করা হয় ওটাকে।