অনুষ্টুপ রায় বর্মন: ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাতের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী আবারও এই দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে এসেছে। ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) গাজা থেকে ইজরায়েলি ভূখণ্ডে একাধিক জঙ্গির অনুপ্রবেশের খবর দিয়েছে। রকেটের বৃষ্টি এবং তার প্রত্যুত্তরে ইতিমধ্যেই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্যালেস্টিনীয় সংগঠন হামাস এই হামলা চালিয়েছে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

যেহেতু এই অঞ্চলটি বর্তমানে যুদ্ধের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, তাই ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দ্বন্দ্বের শিকড় বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে।


কে এই হামাস?


হামাস একটি প্যালেস্তিনিয় সশস্ত্র সংগঠন যা গাজা উপত্যকায় শাসন করে। ২০০৭ সালে গাজায় ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে হামাস ইজরায়েলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করেছে। এই এই যুদ্ধ চলাকালীন হামাস নিজে এবং অন্যান্য সংগঠনের সাহায্যে ইসরায়েলে হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে। ইজরায়েলও বারবার হামাসকে বিমান হামলার মাধ্যমে প্রতিআক্রমণ করেছে এবং মিশরের সঙ্গে মিলে ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তাদের দাবি নিজেদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতেই তারা এই কাজ করেছে।


সামগ্রিক ভাবে দেখলে হামাস, বা কিছু ক্ষেত্রে এর সামরিক শাখাকে ইজরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ব্রিটেনের পাশাপাশি অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলি একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অন্যদিকে হামাসের সমর্থনে রয়েছে ইরান। ইরান এই গোষ্ঠীকে অর্থ, অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করে।


গাজা স্ট্রিপ কী?


খুব সহজে বলতে হলে ইজরায়েল, মিশর এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যে একটি ৪১ কিমি (২৫-মাইল) দীর্ঘ এবং ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত অঞ্চল হল গাজা স্ট্রিপ। এটি প্রায় ২৩ লক্ষ মানুষের আবাসস্থল এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি।


গাজার আকাশ এবং এর উপকূলরেখার উপরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ইজরায়েলের। পাশাপাশি মিশরের সঙ্গে গাজার সীমান্ত দিয়ে কারা প্রবেশ করে তা নিয়ন্ত্রণ করে মিশর। অর্থাৎ গাজা স্ট্রিপের উপরে বর্তমান প্যালেস্টাইনের কার্যত কোনও নিয়ন্ত্রণ প্রায় নেই বললেই চলে।


ইউনাইটেড নেশনসের মতে গাজার জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ আন্তর্জাতিক সাহায্যের উপর নির্ভর করে এবং প্রায় দশ লক্ষ মানুষ দৈনিক খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভর করে বেঁচে রয়েছেন।


আরও পড়ুন: Nobel Prize in Economics: শ্রমবিশ্বের 'অর্ধেক আকাশ' নিয়ে গবেষণাই ক্লদিয়া'কে এনে দিল অর্থনীতির নোবেল...


প্যালেস্টাইনের ঐতিহাসিক অবস্থান কী


ওয়েস্ট ব্যাংক এবং গাজা, প্যালেস্টাইনের অঞ্চল হিসাবে পরিচিত। একই সঙ্গে পূর্ব জেরুজালেম এবং বর্তমান ইজরায়েল সবই রোমান সময় থেকে প্যালেস্টাইন নামে পরিচিত একটি এলাকার অংশ ছিল। এগুলি বাইবেলে ইহুদি রাজ্যের দেশ বলেও পরিচিত ছিল। এই অঞ্চলকে ইহুদিরা তাদের প্রাচীন মাতৃভূমি হিসাবে দেখে।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পরে, প্যালেস্টাইনের নিয়ন্ত্রণ নেয় ব্রিটেন। এই অঞ্চলে ইহুদিরা ছিল সংখ্যালঘু এবং আরবরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্রিটেনকে প্যালেস্টাইনে একটি ইহুদি আবাসভূমি তৈরি করার দায়িত্ব দেয়। এই ঘটনা দুই গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে।


১৯২০ এবং ১৯৪০-এর দশকে, প্যালেস্টাইনে ইহুদি অভিবাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। সেই সময়ে বহু ইহুদি ইউরোপে অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। হলোকাস্টের ভয়াবহ প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ইহুদিরা একটি স্বদেশের সন্ধান করেছিল।


কবে তৈরি হল ইজরায়েল?


ইহুদি ও আরবদের মধ্যে সংঘর্ষ, সেই সঙ্গে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের তীব্রতা বাড়তে থাকে। ১৯৪৭ সালে, ইউনাইটেড নেশনস প্যালেস্টাইনকে পৃথক ইহুদি ও আরব রাষ্ট্রে বিভক্ত করার পক্ষে ভোট দেয়। অন্যদিকে জেরুজালেমের থাকার কথা আন্তর্জাতিক প্রশাসনের অধীনে। ইহুদি নেতৃত্ব পরিকল্পনাটি গ্রহণ করলেও আরব পক্ষ এই ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করে। এই ব্যবস্থা কখনওই বাস্তবায়িত হয়নি।


গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ব্রিটিশরা ইহুদিদের স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি দেয়, যেমন ইহুদি এজেন্সি। এই বিষয়গুলি একটি রাষ্ট্রের তৈরির পরে তাকে চালানোর জন্য ইহুদিদের প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। যদিও প্যালেস্তিনিয়দের জন্য এই কাজ নিষিদ্ধ ছিল। এই ঘটনা ১৯৪৮ সালের এথনিক ক্লিনসিং (Ethnic Cleansing) -এর পথ প্রশস্ত করে।


১৯৪৮ সালে, বিবাদের অবসান ঘটাতে না পেরে, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে এবং ইহুদি নেতারা ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করে। প্যালেস্টিনীয়রা এই বিষয়ে আপত্তি জানায় এবং শুরু হয় বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ যুদ্ধ। প্রতিবেশী আরব দেশগুলো নিজেদের সামরিক শক্তি নিয়ে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। হাজার হাজার প্যালেস্টিনীয় এই অঞ্চল ছেড়ে পালিয়েছে অথবা নিজেদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছে। এই ঘটনাকে তারা 'আল নাকবা' বা 'বিপর্যয়' বলে অভিহিত করে। ইজরায়েলকে ১৯৪৮ সালে একটি রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়ে।


সমস্যার মূলে বেলফোর ডিক্লারেশন?


১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর বেলফোর ঘোষণা জারি করা হয়। এই ঘোষণা প্যালেস্টাইনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে বাস্তবে পরিণত করে। ব্রিটেন প্রকাশ্যে এই অঞ্চলে 'ইহুদি জনগণের জন্য একটি দেশ' প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়। একেই ‘নাকবা’-র অন্যতম প্রধান অনুঘটক হিসাবে দেখা হয়।


লিওনেল ওয়াল্টার রথচাইল্ডকে লেখা ব্রিটেনের তৎকালীন বিদেশ সচিব আর্থার বেলফোরের এই চিঠিটি আরব বিশ্বের আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত এবং দ্বন্দ্বপূর্ণ নথি হিসাবে বিবেচিত হয়।



ইহুদি অভিবাসন এবং প্যালেস্টিনীয়দের উৎখাত


যুদ্ধ-পরবর্তী অন্যান্য আদেশের থেকে একটু আলাদাভাবে, প্যালেস্টাইনে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের মূল লক্ষ্য ছিল একটি ইহুদি "ন্যাশনাল হোম" প্রতিষ্ঠার স্বপক্ষে জমি তৈরি করা যেখানে ইহুদিরা সেই সময়ে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশেরও কম ছিল।


এই সময়ে ব্রিটিশরা প্যালেস্টাইনে ইউরোপীয় ইহুদিদের অভিবাসনের সুবিধা দিতে শুরু করে। ১৯২২ এবং ১৯৩৫ সালের মধ্যে, ইহুদি জনসংখ্যা নয় শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ২৭ শতাংশ হয়।


যদিও বেলফোর ঘোষণায় বলা হয় যে 'এমন কিছু করা যাবে না যা প্যালেস্টাইনের তৎকালীন অ-ইহুদি সম্প্রদায়ের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকারকে ক্ষুন্ন করে'।


১৯৪৭ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত, নাকবা বা "বিপর্যয়ের" সময়, ইহুদি সামরিক বাহিনী কমপক্ষে ৭৫০,০০০ প্যালেস্টিনীয়কে নিজেদের এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়। এই সময়ে তারা ঐতিহাসিক প্যালেস্টাইনের ৭৮ শতাংশ দখল করে। অবশিষ্ট ২২ শতাংশ ওয়েস্ট ব্যাংক এবং গাজা উপত্যকায় বিভক্ত ছিল যার দখল ছিল মিশর এবং জর্ডনের হাতে।


আরও পড়ুন: Israel-Palestine Conflict: দেওয়া হবে না জল-খাবার, বন্ধ বিদ্যুৎসংযোগ! গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ ইজরায়েলের...


১৯৬৭-র যুদ্ধ: ছয় দিন যা মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দিয়েছে


ছয় দিনের যুদ্ধে বিশ্বকে চমকে দিয়ে ওয়েস্ট ব্যাংক, পূর্ব জেরুজালেম, গাজা স্ট্রিপের অবশিষ্ট প্যালেস্টিনীয় অঞ্চলের পাশাপাশি সিরিয়ার গোলান হাইটস এবং মিশরীয় সিনাই উপদ্বীপ ছয় দিনের মধ্যে দখল করে নেয় ইজরায়েল। এই যুদ্ধেই প্যালেস্তিনিয়রা তাদের মাতৃভূমির অবশিষ্ট অংশ হারায়।


১৯৬৭ সালের যুদ্ধের শেষের দিকে, ইজরায়েল আরও ৩০০,০০০ প্যালেস্টিনীয়কে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করে। এর মধ্যে ১৩০,০০০ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছিল যারা ১৯৪৮ সালেও বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। এই ঘটনার পরে ইজরায়েল তার নিজের প্রথম আয়তনের সাড়ে তিনগুণ বেশি এলাকা লাভ করেছিল।


ইন্তিফাদা


মিশর ও গাজায় অবস্থিত ফিঁদায়িন প্যালেস্টিনীয় গেরিলারা মিশরীয়দের সাহায্যে ইজরায়েলে অভিযান চালায়। ১৯৫৬-৫৭-এর মাঝে ইজরায়েল সুয়েজ সংকটের সময় আংশিকভাবে ফিঁদায়িন আক্রমণের অবসান ঘটাতে মিশর আক্রমণ করার জন্য ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের সঙ্গে যোগসাজশ করে।


১৯৫৯ সালে ইয়াসের আরাফাত ইজরায়েলে অভিযান চালানোর জন্য মিশরে ফাতাহ ফাইটিং গ্রুপ গঠন করে। ১৯৬৪ সালে আরব লীগ আহমদ শুকেরির অধীনে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন আর্মি গঠন করে।


১৯৬৮ সালে জর্ডনে ইজরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ইয়াসের আরাফাত সামরিক নেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপরে পিএলওর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং মিশরীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে এই গোষ্ঠীকে স্বাধীন করেন।


১৯৭২ সালে প্যালেস্টিনীয় "ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর" বন্দুকবাজরা মিউনিখ অলিম্পিকে ইজরায়েলি দলের উপর আক্রমণ করে। ১৯৭৩ সালে অক্টোবরে ইয়োম কিপ্পুর/রমজান যুদ্ধের আগে এবং যুদ্ধের সময়ে ইজরায়েল বেইরুট এবং দক্ষিণ লেবাননে পিএলও ঘাঁটিতে হামলা চালায়।


১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির প্রায় নয় বছরের মধ্যে প্রথম প্যালেস্টিনীয় ইন্তিফাদা বা বিদ্রোহ শুরু হয়, যা গাজা, ওয়েস্ট ব্যাংক এবং ইজরায়েল জুড়ে বিক্ষোভ এবং সংঘর্ষের জন্ম দেয়।


১৯৯৩ সালে হয় অসলো চুক্তিতে। এই চুক্তিতে সব পক্ষ স্বাক্ষর করে ইজরায়েল এবং পিএলওর মধ্যে আলোচনার পথ প্রশস্ত করে। এরপরের বছরেই ওয়েস্ট ব্যাংক এবং গাজা স্ট্রিপের কিছু অংশ পরিচালনার জন্য প্যালেস্টিনীয় কর্তৃপক্ষ (PA) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।


এর প্রায় সাত বছর পরে ২০০০-২০০৫ এর মধ্যে শুরু হয় দ্বিতীয় ইন্তিফাদা। ২০০৬ সালে হামাস প্যালেস্টাইনের নির্বাচনে জয় পায়। যদিও হামাসকে, ইজরায়েল এবং পশ্চিমিরা একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে বিবেচনা করে।


এরপরে একটানা সংঘাত চলতেই থাকে। ২০২১ সালে ইজরায়েল পূর্ব জেরুজালেমের দামেস্ক গেট প্লাজায় প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। এটি রমজান মরসুমে প্যালেস্টিনীয়দের সমাবেশস্থল। এর চার দিন পরে, ইজরায়েল আল আকসা মসজিদে উপাসকদের সংখ্যার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে।


অন্তবিহীন সংঘাত


ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত একটি অন্তহীন সংগ্রাম হিসাবে রয়ে গিয়েছে। বিক্ষিপ্ত হিংসা, সংঘর্ষ, বসতির সম্প্রসারণ এবং সীমান্ত, শরণার্থী এবং জেরুজালেমের অবস্থা নিয়ে বিরোধ অন্যতম। এই অস্থির ইতিহাসের মধ্যেই, সংঘাত ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে যা এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য স্থায়ী চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)