গুড়িয়া-কাণ্ডে গ্রেফতার আরও ২, বাতিল হল হোমের স্বীকৃতি
গুড়িয়া রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় আরও ২ জনকে গ্রেফতার করল পুলিস। তরুমল দাশ ও প্রফুল্ল মালিক নামে ওই দুই ব্যক্তি হোমের ঠিকাকর্মী। তবে এখনও অধরা মূল অভিযুক্ত শ্যামল। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের এদিনই দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমের স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে।
গুড়িয়া রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় আরও ২ জনকে গ্রেফতার করল পুলিস। তরুমল দাশ ও প্রফুল্ল মালিক নামে ওই দুই ব্যক্তি হোমের ঠিকাকর্মী। দুজনেই ১৫০ টাকা করে পেয়েছিলেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে বুধবার গ্রেফতার হওয়া দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমের সেক্রেটারি, হোমের গাড়ির চালক সানি ও রঞ্জিতকে বৃহস্পতিবার পেশ করা হয় চুঁচুঁড়া আদলতে। ৩ জনের বয়ানেই ব্যাপক অসঙ্গতি ধরা পড়ায় তাদের ১০ দিনের পুলিসি হেফাজত দিয়েছে আদালত। তবে এখনও অধরা মূল অভিযুক্ত শ্যামল। রাজ্য সরকারের এদিনই দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমের স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। হোমের আবাসিকদের দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। তাঁদের অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিনই ময়নাতদন্তের জন্য চুঁচুড়া সদর হাসপাতাল থেকে গুড়িয়ার দেহ নিয়ে আসা হয় এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অন্যদিকে গুড়িয়ার রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকারকে ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলল জাতীয় মহিলা কমিশন। এই মর্মে রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরে চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে কমিশনের তরফে জেলার দুই প্রশাসনিক কর্তা, জেলাশাসক এবং পুলিস সুপারকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। কমিশনের তরফে রাজ্যের কাছ থেকে এই ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গুড়িয়ার রহস্য মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মা বলেছেন, আপাতত গোটা ঘটনার দিকে নজর রাখছেন তারা। রাজ্যের রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গুড়িয়ার রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় খুন ও প্রমাণ লোপাটের চেষ্টাকে সামনে রেখেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। ২৪ ঘণ্টায় খবর সম্প্রচার হওয়ার পরই হুগলির খেজুরদহের ওই হোমে যান এসপিসহ পুলিস কর্তারা। এসপি জানান, গর্ত থেকে তোলা গুড়িয়ার দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। গুড়িয়ার দেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে চুঁচুড়া হাসপাতালে। সেখানে ময়নাতদন্তের উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকলে দেহ আনা হবে এসএসকেএমে। ধনেখালির খেজুরদহে দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমে গুড়িয়ার মৃতদেহ সবার অগোচরে গর্ত খুঁড়ে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কী খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে এই ভাবে দেহ পুঁতে দেওয়া হয়েছে? সেই সন্দেহকে আরও জোরালো করে খুন এবং প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।
রাতেই গ্রেফতার করা হয় হোমের সেক্রেটারিকে। হোমের সেক্রেটারি ছাড়াও সানি এবং রঞ্জিত নামে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। সানি হোমের গাড়ি চালায়। আর রঞ্জিতকে দেড়'শ টাকা দিয়ে ভাড়া করা হয়েছিল। এছাড়া অন্যতম অভিযুক্ত শ্যামল এবং তনুময় নামে এক যুবককেও খুঁজছে পুলিস। অভইযোগ শ্যামল গুড়িয়াকে মারধর করত। কে এই শ্যামল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন হোমের এক আবাসিককে মারধর করার পরও তাকে কিছু বলা হল না? কেনই বা এতবড় ঘটনার পরেও সে ধরাছোঁয়ার বাইরে?
হোমের এক আবাসিক চব্বিশ ঘণ্টার কাছে অভিযোগ করেছিলেন, ২৬ তারিখ গুড়িয়াকে মারধর করেছিল শ্যামল। এখন তাঁর দাবি দোষীরা শাস্তি পাক। অন্যদিকে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনা লাইসেন্সেই চালানো হচ্ছিল দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমটি। ২০১১ সালে হোমটির প্রভিশনাল লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। গত ২৬ জুন হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের আর্জি জমা পড়লেও, প্রয়োজনীয় কাগজ দেখাতে না পারায় লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে হোমের স্বীকৃতি বাতিল করে আবাসিকদের দায়িত্ব নিয়েছে সরকার।