আরাবুলের উত্থান-পতন
অবশেষে গ্রেফতার আরাবুল ইসলাম। কী ভাবে তরতরিয়ে ওপরে উঠতে হয় সম্ভবত তার উদাহরণ হতে পারেন আরাবুল ইসলাম। কিন্তু কোন পথে সেই উত্থান? কেন বারবার তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর নানা অভিযোগ করলেও, দলের নেতারা বলেন, তাঁরা আরাবুলের পাশেই আছেন।
অবশেষে গ্রেফতার আরাবুল ইসলাম। কী ভাবে তরতরিয়ে ওপরে উঠতে হয় সম্ভবত তার উদাহরণ হতে পারেন আরাবুল ইসলাম। কিন্তু কোন পথে সেই উত্থান? কেন বারবার তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর নানা অভিযোগ করলেও, দলের নেতারা বলেন, তাঁরা আরাবুলের পাশেই আছেন।
কে এই আরাবুল--
নাম---আরাবুল ইসলাম
বয়স--৪৮
গ্রাম- উত্তর গাজিপুর
থানা- কাশীপুর
জেলা-দক্ষিণ ২৪ পরগনা
শিক্ষাগত যোগ্যতা- মাধ্যমিক
আরাবুলের জীবনপুঞ্জি
শুরুর জীবন-- যুব কংগ্রেসে যোগদানের মধ্য দিয়ে
বয়স বেড়ে-- দল ভাঙার পরে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে
হারের দুনিয়ায়-- জেলা পরিষদ ভোটে হার
জেলে হাতেখড়ি-- ২০০৬ সালে পুলিসকর্মীকে মারধরের অভিযোগে চল্লিশ দিনের জেল দিয়ে হাতেখড়ি।
বিধায়কমশাই-- ২০০৬ তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত
দখলদার-- বিধায়ক হওয়ার পর ভাঙড় ১ ও ২ ব্লকের ২০টা পঞ্চায়েত এলাকা কার্যত তাঁর দখলেই চলে যায়
শেষ কথা-- ২০০৭ সালের পর সিন্ডিকেট, জমির দালালিতে তিনিই শেষ কথা।
বৈদিক ভিলেজ কাণ্ডের নেপথ্যে--২০০৯ সালে বৈদিক ভিলেজ কাণ্ড। অন্যতম অভিযুক্ত তিনিই।
মানি মানি-- প্রমোটিং, কাঁচা টাকা হাতে আসতে থাকে, ঘটকপুকুরে নতুন বাড়ি কিনলেন, গাড়িও কিনলেন
হার-- ২০১১-র বিধানসভা ভোটে হার
অধ্যাপিকা হেনস্থা-- ২০১২-র সাতাশে এপ্রিল ভাঙড় কলেজের অধ্যাপিকা দেবযানি দে`কে হেনস্থা
ডার্টি পিকচার-- ২০১৩, ১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে পুলিশের অনুমতি ছাড়াই থানার অদূরে উদ্দাম নাচ গান, মহিলা শিল্পীদের লক্ষ্য করে টাকা ছোড়া। সেই জলসারও অন্যতম উদ্যোক্তা তিনিই।
বিধায়ককে আক্রমণ-- মঙ্গলবার বামনঘাটায় সিপিআইএম সমর্থক বোঝাই বাসে গুলি-বোমা-লাঠি নিয়ে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগও তাঁর বিরুদ্ধে।
তাজা নেতাকে ক্লিনচিট-- ৯ জানুয়ারি বামনঘাটায় মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় , ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্ররা সভা করে জানিয়ে দেন, তৃণমূল আছে আরাবুলের পাশেই
গ্রেফতার-- ১৭ জানুয়ারি-- রেজ্জাক মোল্লার ওপর হামলা সহ বামনঘাটার সিপিআইএম কর্মীদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় গ্রেফতার।
পুলিসি হেফাজতে-- পুলিসের হেফাজতে পাঁচদিন থাকতে হবে। পুলিসের তথ্য বলছে, কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স, কাশিপুর, ভাঙড় তিনটি থানায় পনেরোটি জামিন অযোগ্য মামলা আছে আরাবুলের বিরুদ্ধে।
গাজিপুরের দরিদ্র কৃষক বাড়ির ছেলে আরাবুল ইসলামের রাজনীতিতে প্রবেশ যুব কংগ্রেসে যোগদানের মধ্য দিয়ে। দল ভাঙার পরে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে। জেলা পরিষদ ভোটে হেরে গেলেও দুহাজার ছয়ে তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হলেন। তারপর থেকে ভাঙড় 1 ও 2 ব্লকের কুড়িটা পঞ্চায়েত এলাকা কার্যত তাঁর দখলেই চলে যায়। প্রমোটিং, সিন্ডিকেট, জমির দালালিতে তিনিই শেষ কথা। কাঁচা টাকা হাতে আসতে থাকে। ঘটকপুকুরে নতুন বাড়ি কিনলেন আরাবুল। গাড়িও কিনলেন। ২০১১-র বিধানসভা ভোটে হেরে গেলেও আরাবুলের প্রতিপত্তি ক্রমশ বাড়তেই থাকল। ভাঙড়ের দুটি ব্লকে তিনিই এখন তৃণমূলের শেষ কথা।
গত পয়লা জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে পুলিশের অনুমতি ছাড়াই থানার অদূরে উদ্দাম নাচ গান, মহিলা শিল্পীদের লক্ষ্য করে টাকা ছোড়া। সেই জলসারও অন্যতম উদ্যোক্তা তিনিই।২০১২-র সাতাশে এপ্রিল সেই আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধেই শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ তোলেন ভাঙড় কলেজের অধ্যাপিকা দেবযানি দে।
তিন তিনবার প্রবীণ সিপিআইএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লার উপর হামলা, মঙ্গলবার বামনঘাটায় সিপিআইএম সমর্থক বোঝাই বাসে গুলি-বোমা-লাঠি নিয়ে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগও তাঁর বিরুদ্ধে। তবু নয়ই জানুয়ারি বামনঘাটায় মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় , ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্ররা সভা করে জানিয়ে দেন, তৃণমূল আছে আরাবুলের পাশেই।
তবে শেষপর্যন্ত হাজতেই যেতে হল আরাবুল ইসলামকে। রাজ্যপাল কঠোর মনোভাব নেওয়াতেই সম্ভবত অবস্থান বদলাতে বাধ্য হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।