মৃত্যু উপত্যকায় ৬ দিন
চোখের সামনেই মরতে দেখেছেন বেশ কয়েকজনকে। ভূমিকম্প থামার পরও ঘন্টা খানেক ধরে মুহূর্মুহূ আছড়ে পড়ছিল মরণপাথর।ছেলেকে নিয়ে কখনও গাড়ির নীচে, কখনও বড় কোনও পাথরের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছিলেন নিরঞ্জন বাবু। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে তাঁদের আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।
বিশ্বকর্মা পুজোর আলোকসজ্জার কাজ করতে চুংথাম গিয়েছিলেন শিলিগুড়ির আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা নিরঞ্জন অধিকারী। পাহাড় ঘুরতে যাওয়ার আবদার ধরায় সঙ্গে নিয়েছিলেন ছেলে নীলকমলকেও। কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোর সন্ধেয় হঠাত্ই কেঁপে ওঠে হিমালয়। বাবা ছেলে তখন ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আচমকা সব কিছু প্রবল বেগে দুলে ওঠে। কম্পন থামার পরই কোনও মতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন দুজনেই।পাহাড়ের গা দিয়ে তখন প্রবলবেগে বড় বড় পাথর গড়িয়ে পড়ছিল। একটা পাথরের ধাক্কা, নিশ্চিত মৃত্যু।
চোখের সামনেই মরতে দেখেছেন বেশ কয়েকজনকে। ভূমিকম্প থামার পরও ঘন্টা খানেক ধরে মুহূর্মুহূ আছড়ে পড়ছিল মরণপাথর।
ছেলেকে নিয়ে কখনও গাড়ির নীচে, কখনও বড় কোনও পাথরের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছিলেন নিরঞ্জন বাবু। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে তাঁদের আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। পরদিন ভোরের আলো ফুটেতেই বোঝা য়ায় ধ্বংস্বস্তূপে পরিণত হয়েছে চুংথামবেলা বাড়তে শুরু হয় উদ্ধারকাজ। কিন্তু বাবা, ছেলের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। ভূমিকম্পের পর থেকেই স্বামী পুত্রের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ করতে পারেননি নিরঞ্জনবাবুর স্ত্রী মীরা দেবী।টানা ছদিন । অবশেষে শনিবার সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার উদ্ধার করে নিরঞ্জনবাবু এবং তাঁর ছেলেকে। সন্ধেয় শিলিগুড়ির আশ্রমপাড়ার বাড়িতে ফেরেন তাঁরা।বাড়ি ফিরেও আতঙ্কের ঘোর কাটছে না নিরঞ্জন বাবু এবং তাঁর ছেলে নীলকমলের। কারন ছদিন - ছরাত না খেয়ে, না ঘুমিয়ে, তাঁরা একটা পাথরের নীচে কাটিয়েছেন। চুংথাম থেকে বেরনোর কোনও পথ ছিলনা। মৃত্যুকে দেখেছেন খুব কাছ থেকে।