অন্ধকারের উৎস হতে...

বাহ্যিক দৃষ্টিহীনতা সত্যি কি জীবনে আলোর প্রবেশ কে আটকে রাখতেপারে? হয়ত পারেনা। সক্ষমতা-অক্ষমতা,প্রতিবন্ধকতার মত কঠিন কঠিন শব্দ গুলোর বীজ আসলে বোধ হয় লুকিয়ে থাকে আমাদের মনের মধ্যেই। আর তাই আমরা আমাদের ভোঁতা বুদ্ধির উপর ভরসা করে তালিকা ভুক্ত করার চেষ্টা করি কিছু মানুষকে যাঁরা হয়ত বাহ্যিক বৈশিষ্ঠ্যের নিরিখে আমদের থেকে কিছুটা আলাদা। চেষ্টা করি তাঁদের গায়ে প্রান্তিকতার তকমা এঁটে দিতে। এই সব কিছুই যে আসলে চরম নির্বুদ্ধিতার নিদর্শন তা আর একবার সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন প্রতীশ।

Updated By: Sep 16, 2012, 02:56 PM IST

বাহ্যিক দৃষ্টিহীনতা সত্যি কি জীবনে আলোর প্রবেশ কে আটকে রাখতেপারে? হয়ত পারেনা। সক্ষমতা-অক্ষমতা,প্রতিবন্ধকতার মত কঠিন কঠিন শব্দ গুলোর বীজ আসলে বোধ হয় লুকিয়ে থাকে আমাদের মনের মধ্যেই। আর তাই আমরা আমাদের ভোঁতা বুদ্ধির উপর ভরসা করে তালিকা ভুক্ত করার চেষ্টা করি কিছু মানুষকে যাঁরা হয়ত বাহ্যিক বৈশিষ্ঠ্যের নিরিখে আমদের থেকে কিছুটা আলাদা। চেষ্টা করি তাঁদের গায়ে প্রান্তিকতার তকমা এঁটে দিতে। এই সব কিছুই যে আসলে চরম নির্বুদ্ধিতার নিদর্শন তা আর একবার সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন প্রতীশ। প্রতীশ দত্ত। দৃষ্টিশক্তিহীন। অঙ্কের ছাত্র প্রতীশ এ বছর আইআইটি খড়গপু্রে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় শুধু নিজের বিষয় নয় আইআইটিতে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয় এরকম সবকটি বিষয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন।
শনিবার আইআইটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কৃতীদের হাতে শংসা পত্র তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্তু মঞ্চে প্রতীশ ওঠার সঙ্গে সব আলো যেন তাঁর উপরেই কেন্দ্রীভূত হল। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে জগদীশ চন্দ্র বোস মেমোরিয়াল সোনার পদক হাতে নিয়ে তিনি প্রমান করে দিলেন দেখার ক্ষমতা আসলে চোখের থেকেও মনের অনেক বেশি।
মাত্র ছ`মাস বয়েসে ডাক্তার প্রতীশের বাব মা কে জানিয়ে দিয়েছিলেন `রেটিনোস্কেসিস` নামে চোখের এক কঠিন অসুখে আক্রান্ত প্রতীশ। কোন চিকিত্‌সাই নেই এর। অনির্বায পরিণতি অন্ধত্য। আর যুদ্ধটা শুরু হয়ে গিয়েছিল সেখান থেকেই। ক্লাস সিক্সে পড়তেই চোখে উঠেছিল হাই পাওয়ারের ম্যাগনিফাইং চশমা। আর সেন্ট জেভিয়ার্সে স্নাতকের ২য় বর্ষেই প্রতীশ হারালেন সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি। অথবা বলা ভাল আবিষ্কার করলেন অন্যভাবে দেখার ক্ষমতা। সঙ্গী হলেন মা রঞ্জনা দত্ত। মা পড়ে পড়ে শোনাতেন। আর তার উপর ভরসা করেই প্রতীশের বাকি পথ টুকু এগিয়ে যাওয়া। আইআইটির প্রবেশিকায় সফল হওয়ার পর থেকেই প্রতীশের সঙ্গে খড়গপুরের বাসিন্দা তাঁর মা। এমএসসিতেও মার পড়ে পড়ে শোনার মধ্যে দিয়েই এসেছে প্রতীশের সাফল্য। এরমধ্যেই ক্রিপ্টোলজি এবং নেটওয়ার্ক টেকনোলজি নিয়ে গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
প্রতীশ জানিয়েছেন বাবা-মাই তাঁর অনুপ্রেরণা। তিনি বলেছেন" বাবা-মা ছাড়াও আরও অনেকের কাছ থেকে প্রতি পদক্ষেপে সাহাজ্য পেয়েছি। শিক্ষকরা, বন্ধুরা সব সময়
আমার পাশে থেকেছেন। এমনকি প্রতিবেশীরাও সবসময় উত্‌সাহ দিয়েছেন।`` এই তরুণ প্রতিভাকে নিয়ে উচ্ছসিত তাঁর গাইড সৌরভ মুখোপাধ্যায়। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন এই ঘটনা শুধু খড়গপুর নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেই আগে কখনও হয়েনি।
প্রবীর দত্ত, প্রতীশের গর্বিত বাবা জানিয়েছেন তাঁর ছেলে কারোর থেকে আলাদা নন। কিন্তু প্রবীর বাবু হয়ত একটু ভুল বলেছেন। কারণ প্রতীশের দেখার ক্ষমতা আসলে আশেপাশের সবার থেকে অনেক বেশি। অনেক গভীর।

.