এই প্রথম রাজ্যে সংখ্যালঘু মহিলারাও বসছেন চালকের আসনে

চার দেওয়ালের মধ্যে থাকাই যাদের জীবন, তাঁরা এবার প্রথা ভেঙে পথে। হাতাখুন্তি ধরা হাতে, উঠে এল স্টিয়ারিং। চৌকাঠ পেরোতেও যাদের দুবার ভাবতে হয়, তাঁরাই জীবনযুদ্ধে নতুন অস্ত্রে বলীয়ান। শক্তিরূপেন সংস্থিতা, একথা তো এদের জন্যেও। কলকাতার রাজাবাজারের পরভিন, নার্গিস, রেশমা, শায়না, শবনমরা নতুন পথের দিশারী। এই প্রথম রাজ্যে সংখ্যালঘু মহিলারাও বসছেন চালকের আসনে।

Updated By: Nov 2, 2016, 09:59 AM IST
এই প্রথম রাজ্যে সংখ্যালঘু মহিলারাও বসছেন চালকের আসনে

ওয়েব ডেস্ক: চার দেওয়ালের মধ্যে থাকাই যাদের জীবন, তাঁরা এবার প্রথা ভেঙে পথে। হাতাখুন্তি ধরা হাতে, উঠে এল স্টিয়ারিং। চৌকাঠ পেরোতেও যাদের দুবার ভাবতে হয়, তাঁরাই জীবনযুদ্ধে নতুন অস্ত্রে বলীয়ান। শক্তিরূপেন সংস্থিতা, একথা তো এদের জন্যেও। কলকাতার রাজাবাজারের পরভিন, নার্গিস, রেশমা, শায়না, শবনমরা নতুন পথের দিশারী। এই প্রথম রাজ্যে সংখ্যালঘু মহিলারাও বসছেন চালকের আসনে।

বাড়ির গাড়ি নয়, একেবারে কমার্শিয়াল লাইসেন্স নিয়ে, ড্রাইভিংকেই জীবিকা করে। সুযোগ দিচ্ছে, অ্যাপ নির্ভর ক্যাব সংস্থাগুলি। এদের হাতেও এখন স্টিয়ারিং, দু চোখে স্বপ্ন। শুধু নিজের জন্য নয়, পরিবারের জন্য দেখা সমৃদ্ধির স্বপ্ন। সন্তানদের পড়াশোনা শিখিয়ে, বড় করার-মানুষ করে তোলার স্বপ্ন। বাড়ির পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, পথে নেমে লড়াইয়ের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন, আজ বাস্তব। এ যেন এক নিঃশব্দ বিপ্লব। বদলাচ্ছে দিন। বদলে যাওয়া সেই পথের দিশাই, আজ দিচ্ছি আমরা।

লড়াই সহজ ছিল না। একে আর্থিক অনটন, তার ওপর সংখ্যালঘু পরিবারে হাজারো বিধিনিষেধ। প্রতি পদে রক্তচক্ষু। যুঝতে হয়েছে, ফতোয়ার সঙ্গেও। তবে হার শব্দটি, ডিকশনারির বাইরে রেখেই জীবন-যুদ্ধে নামেন সংখ্যালঘু পরিবারের এই মহিলারা। রাজ্যে সংখ্যালঘু মহিলাদের জীবন-জীবিকার ছবি এমনিতেই বেহাল। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি রিপোর্টেও তা উঠে এসেছে। গ্রামীণ ক্ষেত্রে যেমন, আটাত্তর দশমিক দুই শতাংশ সংখ্যালঘু পুরুষ কোনও জীবিকার সঙ্গে যুক্ত, সেখানে রোজগেরে মহিলাদের হার মাত্র আট দশমিক নয় শতাংশ।

আরও পড়ুন জানুন নারী নির্যাতনে কোন স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ

শহরের দিকে এই ছবি আরও উদ্বেগজনক। এক্ষেত্রে সত্তর দশমিক এক শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত পুরুষ কোনও পেশার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু শহুরে সংখ্যালঘু মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র সাত দশমিক সাত শতাংশ। সংখ্যালঘু মহিলাদের কাজের হারের দিক থেকে, সবার পিছনে দক্ষিণ দিনাজপুর। সবার আগে এক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদ জেলা। তবে মালদহ ও মুর্শিদাবাদের রোজগেরে সিংহভাগ সংখ্যালঘু মহিলাই, বিড়ি বাঁধার কাজে যুক্ত। সেখানে এবার পালা কলকাতায় বসে, প্রথা ভেঙে বেরিয়ে আসার। সংসার সামলে, দিনের পর দিন ট্রেনিং। লাইসেন্সের পরীক্ষা। সব উতরে, ড্রাইভারি পেশায় হাত পাকানোর নয়া চ্যালেঞ্জ। এদের অনেকে বোরখা পড়েই, ড্রাইভিং করছেন। এও কি সম্ভব? প্রতিপদে উঠছে, এমন অনেক প্রশ্নই। লড়াই আজও জারি, সন্দেহের সঙ্গে।      

আরও পড়ুন এই ১০ বোন যদি ওই ১০ জনকে ভাইফোঁটা দিতেন তাহলে পৃথিবীতে মুষলধারায় শান্তি আসতো!

অল্প বয়সে বিয়ে। এরপর সন্তানদের দায়দায়িত্ব। কাউকে আবার তালাক দিয়ে, ফেলে চলে গেছে স্বামী। জীবন মানেই সেই ছোট্ট বয়স থেকে লড়াই, পরভিন-নার্গিসদের কাছে। তবে এবারের  লড়াই, একদমই আলাদা। এ লড়াই, স্বপ্ন পূরণের। এ লড়াই, মুক্তির।

.