প্রতিহিংসার কারণেই পার্সেল বোমা পাঠিয়ে হত্যা

অবশেষে কিনারা হল হাওড়া পারসেল বোমা কাণ্ডের। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস দে প্রতিহিংসার কারণেই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন। তদন্তে নেমে এমনটাই মনে করছে পুলিএই ঘটনায় আটক ৩ জনকে আজ গ্রেফতার করেছে পুলিস। ধৃতদের নাম শুভঙ্কর, ছোটকা ও বিশ্বজিত।

Updated By: Oct 4, 2012, 12:18 PM IST

অবশেষে কিনারা হল হাওড়া পার্সেল বোমা কাণ্ডের। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস দে প্রতিহিংসার কারণেই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন। তদন্তে নেমে এমনটাই মনে করছে পুলিস। এই ঘটনায় আটক ৩ জনকে আজ গ্রেফতার করেছে পুলিস। ধৃতদের নাম শুভঙ্কর, ছোটকা ও বিশ্বজিৎ। মূল অভিযুক্ত দেবাশিস দে-কে ধরার চেষ্টা করছে পুলিস। ধৃত ৩ জন ছাড়াও আরও কয়েকজন এই ঘটনায় জড়িত বলেও জানতে পেরেছে পুলিস। তাদের খোঁজে ইতিমধ্যেই মুম্বই,  বিশাখাপত্তনম ও ওড়িশায় রওনা হয়ে গিয়েছে হাওড়া সিটি পুলিসের তিনটি দল। 
দেবাশিস বাবুর বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলায় মধ্যস্থতা করেছিলেন চৈতালি সাঁতরা। এই মামলায় বেশ কয়েকদিন জেলও খাটতে হয় দেবাশিস দে-কে। এমনকী তাঁর পরিবারকে এলাকা ছাড়াও হতে হয়েছিল। সেই আক্রোশে জেলে বসেই এই বিস্ফোরণ ঘটানোর ছক কষেন দেবাশিসবাবু। জেলেই এই তিনজনের সঙ্গে পরিচয় হয় দেবাশিস দের। তাদের ২ লক্ষ টাকা সুপারিও দেন দেবাশিসবাবু। অগ্রিম হিসাবে তিনজনের মধ্যে একজনের অ্যাকাউন্টে কুড়ি হাজার টাকাও জমা করা হয়েছিল। 
গত বুধবার ২৬ সেপ্টেম্বর হাওড়ার দক্ষিণ বাকসাড়ার বকুলতলায় ৮৭ নম্বর বাড়িতে ছিলেন হিমাংশু সাঁতরা ও চৈতালি সাঁতরা। স্বামী-স্ত্রী ছাড়া এক পরিচারিকাও ছিলেন সেখানে। তিনি কাজ করছিলেন দোতলায়। আচমকা গোটা বাড়ি প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে। পরিচারিকা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে তিনি যতক্ষণে একতলায় নেমে আসেন, ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে চৈতালীদেবীর। গুরুতর আহত অবস্থায় হিমাংশুবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি একটি পার্সেলের কথা জানান। সেটি খোলার পরমুহূর্তেই বিস্ফোরণ হয় বলে দাবি হিমাংশুবাবুর। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে দোতলা বাড়ির জানালা-দরজার সমস্ত কাঁচ ভেঙে যায়। একতলা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। প্রতিবেশীরাও জানিয়েছেন ঘটনার কিছুক্ষণ আগে তাঁরা কয়েকজনকে ওই বাড়িতে যেতে দেখেন। তাঁরা নিজেদের ক্যুরিয়ার সংস্থার লোক হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশেপাশের বাড়িগুলিও কেঁপে ওঠে বলেও জানান তাঁরা। ঘটনাস্থল থেকে ব্যাটারি, তার ও একটি ধাতব পাত্র উদ্ধার করেছিলেন গোয়েন্দারা। যার জেরে জোরালো হতে থাকে পার্সেল বোমা তত্ত্ব। নমুনা সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে যায় সিআইডির বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড এবং ফরেনসিক দল। ফলে শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
হাওড়ার এই পার্সেল বোমা বিস্ফোরণ মনে করিয়ে দিয়েছে মালদহের ঘটনা। সেবার এরাজ্যে প্রথম একটি মোটা বই বোমা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এমনই অভিনব বই-বোমা তৈরি করেছিল এক যুবক। হাওড়ার মতোই একটি পার্সেল আসে বাড়িতে। যে পার্সেলের মধ্যে রাখা ছিল একটি বই। বইটি খুললেই ঘটে যায় বিস্ফোরণ। বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করে দেখতে পান, বইয়ের পাতা কেটে গর্ত করে তার মধ্যে রাখা ছিল বিস্ফোরক। একটি প্রেসার-রিলিজ সুইচের মাধ্যমে ব্যাটারি দিয়ে চার্জ করা হয়। তার ফলেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এবারও সেই একই পদ্ধতিতে খুন করা হল চৈতালিদেবীকেও।

.