গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে নতুন অভিযানের প্রস্তুতি
শান্তি প্রক্রিয়া কার্যত বন্ধ করে দিয়ে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে রাজ্য সরকার। সরকারের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগের একটি গোপন রিপোর্ট।
শান্তি প্রক্রিয়া কার্যত বন্ধ করে দিয়ে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে রাজ্য সরকার। সরকারের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগের
একটি গোপন রিপোর্ট। যে রিপোর্টে মাওবাদীদের একটি খতম তালিকা দেওয়া হয়েছে। এমনকী কোন তৃণমূল নেতাকে খতম করার জন্য কোন স্কোয়াডকে দায়িত্ব দেওয়া
হয়েছে তারও উল্লেখ রয়েছে এই রিপোর্টে। চাঞ্চল্যকর ওই রিপোর্টে ইতিমধ্যেই এসেছে সংবাদমাধ্যমের হাতে।
গত মাস থেকেই মাওবাদী ইস্যুতে সরকারের অবস্থান যেন অনেকটা বদলে গিয়েছে। অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু হওয়া শান্তি প্রক্রিয়া কার্যত থমকে গিয়েছে। কারণ আর কিছুই নয়, সরকারের কাছে আসা গোয়েন্দা দফতরের সেই গোপন রিপোর্ট। আগেই তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েকজন বিধায়ক এবং নেতাদের হুমকি ও ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছিল মাওবাদীদের বিরুদ্ধে। এবার আইবি বা গোয়েন্দা বিভাগের ওই রিপোর্টে সরাসরি বলা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের কোন নেতা কোন স্কোয়াডের খতম তালিকায় রয়েছেন।
ঝাড়গ্রামের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক এবং পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। তিনি জয়ন্ত ও কানুর স্কোয়াডের খতম তালিকায় রয়েছেন। নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু। তাঁকে খতম করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রঞ্জন মুণ্ডা ও অর্জুনের স্কোয়াডকে। চূড়ামনি মাহাত, গোপীবল্লভপুরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক। তিনিও রয়েছেন রঞ্জন মুণ্ডা ও অর্জুনের স্কোয়াডের খতম তালিকায়। মেদিনীপুর সদরের তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতিও রয়েছেন এই স্কোয়াডের হিট লিস্টে। শ্রীকান্ত মাহাত, দীর্ঘদিন ধরে ঘরছাড়া শালবনির এই বিধায়ক। তাঁকে খতমের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিকাশকে। মেদিনীপুরেরই আরেক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দেবাশিস চৌধুরী ওরফে মুনমুন। তিনি রয়েছেন রাখাল সোরেন স্কোয়াডের খতম তালিকায়। এই মুহূর্তে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো জনজাগরণ মঞ্চের নেতা নিশীথ মাহাত। সুচিত্রার স্কোয়াডের টার্গেটে রয়েছেন তিনি। মনোরঞ্জন মাহাত। আগুইবনী-নেদাবহড়া এলাকার নেতা। জয়ন্তর স্কোয়াডের খতম তালিকায় রয়েছেন তিনি। ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারের সদস্য দুর্গেশ মল্লদেব। সম্প্রতি তিনি কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসে। তিনিও টার্গেটে রয়েছেন সুচিত্রার স্কোয়াডের।
গোয়েন্দা রিপোর্টে নেতাদের ক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ জারির কথাও বলা হয়েছে। সেই অনুসারে এই নেতারা কোথাও গেলে পুলিসকে আগে থেকে জানানোর কথা বলা হয়েছে।
নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় যাওয়া বা ঘোরাফেরা করায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিকালের পর কোনও সভা বা জমায়েতে অংশ নিতে বারন করা হয়েছে। হঠাত্ করে কেউ কোনও খবর দিলে বা ডাকলে বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের এই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই নিরাপত্তা কয়েকগুন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যে এলাকায় এই মন্ত্রী, বিধায়ক বা নেতারা যাচ্ছেন সেখানে যৌথবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। দলের তরফে কিছু তথ্য এবং গোয়েন্দাদের এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নিয়েছে রাজ্য সরকার।