বাংলায় কংগ্রেস বিনে বামেদের গতি নেই, ঠারেঠোরে বোঝালেন ইয়েচুরি-সূর্যকান্ত

তৃণমূল-বিজেপিকে ঠেকাতে সমস্ত গণতান্ত্রিক দলকে পাশে চাইছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। 

Updated By: Dec 23, 2018, 08:01 PM IST
বাংলায় কংগ্রেস বিনে বামেদের গতি নেই, ঠারেঠোরে বোঝালেন ইয়েচুরি-সূর্যকান্ত

মৌমিতা চক্রবর্তী

বিহারে নীতীশ-রামবিলাসের সঙ্গে আসন সমঝোতা পাকা করে ফেলেছে বিজেপি। আর ঠিক তখনই বঙ্গে মোদী বিরোধী মহাজোট পরিণত হয়েছে আস্ত ধাঁধায়। দিল্লিতে মমতা-ইয়েচুরি-রাহুলকে একমঞ্চে দেখা যাচ্ছে, অথচ বাংলায় আসতেই হাওয়াবদল। সদ্য রাজধানীতে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলে এসেছেন, বাংলায় কংগ্রেস 'একলা চলো'। আর কংগ্রেসের এহেন অবস্থানে চাপে সিপিএম। রবিবার সূর্যকান্ত মিশ্র তো বুঝিয়েই দিলেন, কংগ্রেস বিনে বাংলায় গতি নেই।

চলতি মাসেই দিল্লিতে বৈঠকে বসেছিল বিরোধী দলগুলি। ওই বৈঠকে উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল সীতারাম ইয়েচুরি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল গান্ধীর। বৈঠকের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দিল্লিতে আছেন, তবে রাজ্যে কারও সঙ্গে সমঝোতা নয়। তারপরই আবার প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা ছুটে যান রাহুলের কাছে। সেখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ উগড়ে দেন সোমেন মিত্র। অনুরোধ করেন, মমতার ব্রিগেডে যেন হাজির না হন সনিয়া গান্ধী। ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেসের ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তাবও দেন। এর পাশাপাশি লোকসভা ভোটে রাজ্যে একা লড়াইয়ের কথাও বলে এসেছেন সোমেন। রাহুল জানিয়েছেন, প্রদেশে নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই শিরোধার্য। কংগ্রেসের নতুন প্রদেশ সভাপতির এমন ভাবনায় বিস্মিত আলিমুদ্দিন। কারণ, লোকসভা ভোটে রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের আশায় বাম নেতারা। সেই আশাতেই জল ঢাললেন ছোড়দা।  

রবিবার দলীয় অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিক বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন,''রাজ্যভিত্তিক সমীকরণ হবে। লোকসভা ভোটের পর মহাজোটের ছবিটা স্পষ্ট হবে। বাংলায় বিজেপি ও তৃণমূলকে পরাস্ত করাই লক্ষ্য''। কিন্তু কংগ্রেস তো একা লড়াইয়ের ভাবনায়? ঘাড় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য, 'শুনেছি'। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র অবশ্য বেশ স্পষ্টবাদী। তাঁর কথায়, ''বিজেপি-কংগ্রেসের সঙ্গে সমদূরত্বের লাইন আমাদের নয়। বিজেপি ভয়ঙ্কর এবং রাজ্যে তৃণমূলকে হারাতে হবে। তাই সমস্ত গণতান্ত্রিক দলকেই পাশে চাই''।   


      
অতিসম্প্রতি সিঙ্গুর থেকে কলকাতা কৃষক জাঠা করে চমকে দিয়েছেন বাম নেতৃত্ব। এরপর একাধিক কর্মসূচি নিয়েছে তারা। সূত্রের খবর, বামেদের অন্দরেই জল্পনা চলছে, ছোট-বড় কর্মসূচি নেওয়া ও জনসমর্থন ইভিএমে প্রতিফলনের মধ্যে ফারাক রয়েছে। ফলে বাস্তব পরিস্থিতিটা নেতারা বুঝতে পারছেন। সে কারণেই কংগ্রেসের হাত ধরতে মরিয়া আলিমুদ্দিন। কংগ্রেসের জোট নিয়েও আবার বাম নেতাদের মধ্যেও রয়েছে মতানৈক্য। জোট বিরোধী নেতাদের মত, দক্ষিণবঙ্গে কংগ্রেসের অস্তিত্ব নেই। উত্তরবঙ্গ সামান্য রয়েছে। ২০১৬ সালের মতো বামেদের সঙ্গে নিয়ে লাভবান হবে কংগ্রেস। বামজোট শক্তিশালী করার দাবিই করছেন তাঁরা।               

আরও পড়ুন-  শুধু ভারত মহাসাগরই নয়, ভারতীয় নৌসেনার মুঠোয় এবার গোটা দুনিয়া

আর এসবের মধ্যে বিজেপি বিরোধী মহাজোটের ভবিষ্যত্ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠকে থাকছেন ইয়েচুরি, সেই তিনিই কলকাতায় এসে বিরোধিতা করছেন। উল্টো দিকেও সে কথা সমান প্রযোজ্য। তার উপরে কেরলে কংগ্রেস-সিপিএম সেয়ানে-সেয়ানে। সেখানে কি হবে? রাজনীতির কারবারিদের মতে, বিজেপি নেতৃত্ব, এমনকি খোদ নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করে দিয়েছেন, এই জোট আসলে সুবিধাবাদীদের ঘোঁট। এই অবস্থায় জোটের এমন হাল হলে লোকসভা ভোটের প্রচারে অ্যাডভান্টেজ পাবে বিজেপি। তবে একথা বলে রাখা দরকার, রাজনীতিতে আগেভাগে ভবিষ্যদ্বাণী করা অর্বাচীনের কাজ, লোকসভা ভোটের আগে গঙ্গা দিয়ে যে আরও জল বয়ে যাবে।                  

আরও পড়ুন- ​ঘণ্টায় ১৩০ কিমি গতিবেগে দৌড়বে লোকাল, দেখে নিন সেই ট্রেনের ছবি

.