আইপিএল তোমায় মিস করব
প্রিয় আইপিএল,
উফ বাবা এতদিনে মিটল। বাঁচা গেল। জানো তুমি ফুরতোই এখন দেশের অনেকে এমন কথাই বলছে। সত্যি বলতে কী তোমার নিন্দুক এত যে আমি সেই তালিকায় ঢুকতে লজ্জা পাই।
সত্যি তো তুমি মানেই তো বড়লোকের বাউন্ডুলে ছেলে। তুমি মানেই ফূর্তি। তুমি মানেই ক্রিকেটের ফস্টিনষ্টি। তুমি মানেই বিজ্ঞাপনের বন্যা। খেলার ফাঁকে ছোট পোশাকের চিয়ারকন্যা। তুমি মানেই বেটিং। তুমি মানেই শ্রীসন্থ, অঙ্কিতদের চিটিং। তুমি মানেই ললিত-শ্রীনি, তুমি মানেই শাহরুখ-প্রীতিদের জন্যই ভিআইপি বক্সের টিকিট কিনি। তুমি মানেই গাদা জলের শুধুই অপচয়, তুমি মানেই শুধুই বড়লোকের, টিকিটখানি গরীব লোকের নয়।
এরকম কত কত অভিযোগ তোমার নামে। অনেকে বলে তুমি কোনও ক্রিকেটই নয়, শুধু সোপ অপেরা, নাচ-গান সবই সবই আছে শুধু ক্রিকেট ছাড়া। তাই তো সবাই যখন বলছে এই দেড় মাসের দক্ষযজ্ঞ শেষে একটু স্বস্তি লাগছে, তখন আমি মিছিমিছি হাসছি।
সত্যিই তো এই দেড় মাস কী পেলাম। সিধুর ভড়ং বাজি! পল্লবীদের আধকাটা পোশাক, সব দেখিয়ে একটুখানি ঢাকি। গাদা গাদা ছক্কা, রোজ রোজ রেকর্ড। এসব তো দেড়মাস রোজ রোজ ঘটেছে। কোনও কোনও দিন দিনে দু দুবারও ঘটেছে। রোজ রোজ মাংস,বিরিয়ানি খেতে ভাললাগে কারও!
ব্যস, অভিযোগ নিয়ে এতটা বলেও জানি শেষ করা যাবে না। ওই যে খরার জন্য তোমায় একেবারে মহারাষ্ট্র ছাড়া করা হলো। এরকম বড় ব্রেকিং অভিযোগ তো তোমার বিরুদ্ধে অনেক রয়েছে। তবু বলছি ভাই। ধন্যবাদ। অনেক অনেক ধন্যবাদ। এই দেড় মাস সন্ধ্যাবেলাটা একটু অন্যমনস্ক করে রেখেছো। অফিস ফেরত হওয়ার সময় মনে হয়নি আজ কী নিয়ে থাকব। বন্ধু, পরিবার সব আছে। কিন্তু সব থাকারই তো একটা বিরতি আছে। এই বিরতিটা ভাল হলে বাকি সব ভালই থাকে। এই বিরতিটা তুমি দারুণ দিলে।
কোহলি সেঞ্চুরি করে দলকে জেতালে আমার পকেট ভরে ওঠে না ঠিকই। কিন্তু কোথাও একটা জোর পাই। পান্ডিয়া,ঋষভদের মত অনামীরা বিদেশী বাঘাবাঘা বোলারদের ঠেঙিয়ে মারলে দারুণ লাগে। কেকেআর জিতলে শাহরুখই লাভবান, আমি বড়জোড় জাম্বুবান। সেটা জেনেও শহরের নামটা কোথাও একটা জড়িয়ে থাকে বলে হাতটা মুঠো করে ওপরে ছুড়ে দিই।
মাসের শেষে বাইকের তেল ভরানোর টাকা থাকে না বলে বাইরে বেড়ানোর জো থাকে না। তখন সন্ধ্যায় আমি একা। পাশের ঘরে সিরিয়লে বুঁদ বাড়ির সবাই। ফোনটাকে এফোঁড়,ওফোঁড় করে অনেক খুঁজেও কথা বলার বন্ধু পাই না। তখন তুমিই তো বন্ধু। ভূবি,মুস্তাফিজুররা উইকেট নিলে আমি তো আনন্দের একটা উত্স পাই। ভুলে যাই পকেটে টাকা নেই, বাইকের তেল নেই, বাড়িতে ভালমন্দের জো নেই। এবি ঘুরে গিয়ে পেল্লাই হাঁকালে, আমার ছোট ছেলেটার মত আমিও তো কোনও লাভের কারণ ছাড়াই লাফিয়ে উঠি। ভাত খেতে খেতে মুখ উঁচু করে টিভির দিকে তাকিয়ে তোমায় দেখাটা তো অভ্যাস হয়ে গিয়েছে এই দেড়মাসে। তখন তো ভুলেই যাই আজ পাতে ভাল কিছু নেই।
এই তো সেদিন পাড়ার এক বৃদ্ধ মারা গেলেন। নিয়ম মেনে ওনার শেষকৃত্য করাতে গেলাম শ্মশানে। দেহ নিয়ে যাওয়ার সময় অত শোকের মাঝেও তোমায় নিয়ে আলোচনা। তার মানে শোকেও তুমি থাকো। আর উত্সবে। সে তো মার্কেটিং বাবুদের কল্যাণে, বারে বারে, শপিং মলে, যাকে বলে জলে- স্থলে- জঙ্গলে।
তুমি শেষ হয়ে গেলে তোমার আর কী! বোর্ডেরই বা কী। এল গেল যা আমার। এত বড় দুনিয়ায় কত কী নিয়ে বেঁচে থাকা যায়। কিন্তু বাঁচার সব কিছু আমায় বাঁচিয়ে রাখে না। না, না তুমিও রাখো না। ইনফ্যাক্ট তোমায় বাইশ গজের সংসারে ঠাঁই দিতেও আমার একটু সংশয় আছে। কিন্তু তবু তো ছিলে। কিছু একটা ছিল। একটা কিছু থাকা, না থাকার চেয়ে অনেক, অনেক ভাল। দিব্যি টের পাচ্ছি এখন। মনটা বিকল্প খুঁজছে। নিয়ম মেনে খুঁজেও নেবে। কিন্তু তা বলে তোমায় মিস করছি, এটুকু বলব না। মিস যাকে করি, তাকে সরাসরি বলি। ভাল লাগুক, খারাপ লাগুক সেটা তোমার ব্যাপার।
ইতি-
কেউ একটা