এসো প্রেম, এসো নৈঃশব্দ
অবিরাম বৃষ্টি। চরাচর ঝেঁপে আসা বৃষ্টির ধারাপাতে আশ্রয় খোঁজে সবাই। শুধু উল্লাসে মাতে এক দামাল কিশোর। আনখশির ধারাস্নানে সিক্ত হয়ে বৃষ্টির আলপনা-আঁকা দরাজ উঠোনে সে ভাসায় কাগজের ডিঙা। চলকে ওঠে জল। বৃষ্টিকণায়-কণায় ভাসতে থাকে রামধনু-স্বপ্নেরা।
অবিরাম বৃষ্টি। চরাচর ঝেঁপে আসা বৃষ্টির ধারাপাতে আশ্রয় খোঁজে সবাই। শুধু উল্লাসে মাতে এক দামাল কিশোর। আনখশির ধারাস্নানে সিক্ত হয়ে বৃষ্টির আলপনা-আঁকা দরাজ উঠোনে সে ভাসায় কাগজের ডিঙা। চলকে ওঠে জল। বৃষ্টিকণায়-কণায় ভাসতে থাকে রামধনু-স্বপ্নেরা। এগিয়ে চলে নৌকো, না-লেখা চিঠির মতো এক ঠিকানাহীন বেহিসাবি পথে। মনের গোপনতম কোণে সযত্নলালিত এই কৈশোরকে প্রকাশ্যে হাট করে খুলে দিয়ে, চিরস্থায়ী ফ্রেমবন্দি করলেন যিনি, তিনি আজ শুয়ে আছেন স্পন্দনহীন-তাপহীন, অথচ এক আশ্চর্য নির্ভার শান্তি নিয়ে। ঠোঁটের প্রান্ত ছুঁয়ে উছলে ওঠা অবিকল হাসিতে যেন প্রশ্রয়ের সুর--
যেন এইমাত্র বলে উঠবেন, এসো মাতি জীবন-উত্সবে!
জগজিত্ সিংয়ের ৭০ বছরের পথ চলার পরতে পরতে যৌবনের উত্সব। প্রেম-অপ্রেমে, সুখে-দুঃখে যৌবনই ভাষা পেয়েছে তাঁর জাদুকণ্ঠে। পাঁচ দশকে ৮০টিরও বেশি আ্যলবামে ছড়িয়ে রয়েছে তারই স্বাক্ষর। আকস্মিক আঘাত এসেছে বহুবার। হারাতে হয়েছে প্রিয়তম পুত্রকে। দূরে সরে গেছেন স্ত্রী। আঘাতের অভিঘাত যত তীব্র হয়েছে, ততই আরও বেশি আঁকড়ে ধরেছেন গানকে। গানই হয়ে উঠেছে তাঁর পরম আশ্রয়। আর আজ এই সাত দশক পর, গানের অন্যতম আশ্রয়ের নাম জগজিত্ সিং। যিনি হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো ছুঁয়ে যান মরমি মনকে অনায়াস দলছুট হাওয়ার মতো। প্রেমের আশ্রয়ে বাঁচে জীবন।
কোথাও আগাম চিঠি না দিয়ে, কাউকে না জানিয়ে তিনি চলে গেছেন এক অজানা দেশে। শুধু আছে তাঁর গান। মৃত্যু তার কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না কোনওদিন!
* * * * * * * * * * * * *
তবু ভিজছি আমি; ভিজছি আমরা-- অকাল শ্রাবণধারায়।
হৃদয়ের আলপথ ধরে ছুটছে এক দৃপ্ত কিশোর।
যাঁর এক হাতে অবাক নৌকো, অন্যহাতে সুরের মন্দিরা।
অরিন্দম চক্রবর্তী