আমার বসন্ত উত্সব

আলো ফুটতে না ফুটতেই আমাদের দুই বোনকে ঘুম থেকে ঠেলে তুলে দিলেন বাবা, মা তখন আমাদের বাসন্তী শাড়ির পাট ভাঙছেন, আর গতকালের গেঁথে রাখা পলাশ ফুলের মালা ফ্রিজ থেকে বের করে জল ছেটাচ্ছেন! আমাদের দুই বোনের চোখে তখনও ঘুমের রেশ, বুক দুরদুর, নাচ ভুলে যাবো না তো! তারপর শাড়ি আর পলাশে সুসজ্জিত আমরা দে ছুট, ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল! আমার শান্তিনিকেতনের বসন্তোত্সব শুরু।

Updated By: Mar 21, 2013, 09:13 PM IST

অদিতি রায়
আলো ফুটতে না ফুটতেই আমাদের দুই বোনকে ঘুম থেকে ঠেলে তুলে দিলেন বাবা, মা তখন আমাদের বাসন্তী শাড়ির পাট ভাঙছেন, আর গতকালের গেঁথে রাখা পলাশ ফুলের মালা ফ্রিজ থেকে বের করে জল ছেটাচ্ছেন! আমাদের দুই বোনের চোখে তখনও ঘুমের রেশ, বুক দুরদুর, নাচ ভুলে যাবো না তো! তারপর শাড়ি আর পলাশে সুসজ্জিত আমরা দে ছুট, ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল! আমার শান্তিনিকেতনের বসন্তোত্সব শুরু।
যদিও আগের রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় বসন্ত যাপন! শুকনো ডালপালা, পাতার ঝোপ পুড়িয়ে `ও আমার চাঁদের আলো`-র সঙ্গে আশ্রম পরিক্রমা। নিবিড় অমা তখন তিমির হতে বেরিয়ে পড়ে, শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, আবাসিকরা পায়ে পা মিলিয়ে, গলায় গলায় উন্মুখ বসন্ত বন্দনায়। এরপর তো ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠা, বসন্তের হাওয়ায় বালিকার খোলস ছেড়ে নারীত্বের উঁকিঝুঁকি! হাজারো মুগ্ধ চোখের ভিড়ে আবীরের আড়াল খোঁজা, ও হ্যাঁ, এইখানে বলে রাখা ভালো, আমাদের শান্তিনিকেতনে রং পিচকারির প্রবেশ নিষেধ, শুধু আবীরে রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার আহ্বান! হোলি খেলে রাধা কুঞ্জবনে, কান্হার রাধাকে রঙে ভিজিয়ে দেওয়ার দুষ্টুমি এখানে ব্রাত্য। আবীর দেওয়ার ছলেই ছোঁয়াছুঁয়ির খেলা, আর বয়ঃসন্ধির প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা! আমরা বড় হয়ে গেলাম? এত তাড়াতাড়ি?

গৌরপ্রাঙ্গণের মঞ্চে বসন্তোত্সবের অনুষ্ঠানের নাচ গানের মহড়ার সময় থেকেই অবশ্য শুরু হয়ে যায় সঙ্গী বেছে নেওয়ার পালা! উঁহু, ভুল বুঝবেন না! জীবনসঙ্গী নয়, বসন্ত উদযাপনের সঙ্গী! ওই দুদিন পরিচিত সহপাঠীর আরও পরিচিত মুখগুলিই তো রঙের মায়ায় হয়ে ওঠে অ-চেনা ! তাই, হোক না দুদিনের জন্য, পুরনো সঙ্গীর নতুন হয়ে ওঠাটা বসন্তের এই উত্সবের মতোই ক্ষণিকের অতিথি! আমরা শান্তিনিকেতনীরা তো জীবনকে খেলাচ্ছলেই নিই বস্!
আশ্রম ঘুরে ওরে গৃহবাসী, গৌরপ্রাঙ্গণের অনুষ্ঠান, তারপর যে যার ভবনে (ডিপার্টমেন্ট চত্বর) গিয়ে নাচ গান রঙের খেলায় মত্ত, আমার জার্নি তো আবার পাঠভবন থেকে কলাভবন পর্যন্ত, তাই রঙ রসও বিচিত্র! `যা ছিল কালো ধলো` থেকে `রঙ্গ বরসে`, আমার পায়ের ছন্দ থেকে বাদ যায়নি কিছুই! তারপর, সাইকেল চালিয়ে গোয়ালপাড়ার পাকুড়তলা বা মুক্তি দা`র ঠেক, খাঁটি তালের রস সেবন করে খেলা ভাঙার খেলা.... আমার শান্তিনিকেতন, আমার বসন্ত উদযাপন....

.