বুলেট বরবাদ!
ছবির নাম- বুলেট রাজা রেটিং- **
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম- বুলেট রাজা
রেটিং- **
কলকাতাতেই রমরম করে শুটিং হয়েছিল এ ছবির। প্রিন্সেপ ঘাট, কুমোরটুলি, লালবাজার, বিবিডি বাগ, লাহাবাড়ি. মুম্বইয়ের অন্য সব প্রোডাকশন হাউসের থেকে এ ছবির পার্থক্য ছিল একটাই, এ ছবির শুটিং কভার করতে গিয়ে কোনও অসুবিধে হয়নি কলকাতার মিডিয়াকে। প্রোডিউসার রাহুল মিত্র প্রবাসী বাঙালি। কলকাতার প্রতি তাঁর আলাদা টানের খাতিরেই নিজের ছবির গল্পের অন্যতম প্রেক্ষিত হিসেবেই কলকাতাকে বেছেছিলেন। তাই অবাক হয়েছিলাম একটাই ব্যাপারে। ছবির প্রোমোশনে একবারও কলকাতায় এল না বুলেট রাজা-র টিম।
তিঘমাংশু ধুলিয়া জাতীয় পুরস্কারজয়ী ছবির পরিচালক। সঙ্গে সইফ আলি খান (তিনিও জাতীয় পুরস্কারজয়ী) আর সোনাক্ষি সিনহা, যিনি ইতিমধ্যেই বলিউড প্রোডিউসারের লক্ষ্মী বলে বেশ বিখ্যাত হয়েছেন। এক কথায় ছবির লাক ফ্যাক্টর। তিনি থাকলেই ছবি সোনায় সোহাগা। একশো কোটির বাজার ছোঁবেই ছোঁবে। বুলেট রাজা দেখার পর মনে হল, সত্যিই একমাত্র সোনাক্ষির লাক ফ্যাক্টরই লাভের মুখ দেখাতে পারে প্রযোজককে।
গোটা ছবি জুড়ে শুধু বুলেট আর বুলেট। কখন কোথায় চলছে বোঝা দায়। অসাবধানে দর্শকের দিকেও দুয়েকটা ছুটে আসতে পারে! এত বুলেট বরবাদ করবার যে কী প্রয়োজন ছিল কে জানে...কলকাতায় শুটিংও বিশেষ একটি গানের দৃশ্য থাকলেও গোটা ছবিটিই উত্তরভারতীয় দর্শকের কথা মাথায় রেখে বানিয়েছেন তিঘমাংশু। কলকাতা নেহাতই কেকের ওপর ক্রিম। সোনাক্ষি এ ছবিতে বাঙালি মেয়ে মিতালি চ্যাটার্জি। যে অ্যাকসেন্টে বাংলা বলেন তার সঙ্গে বাঙালিত্বের সুদূর সম্পর্ক নেই। বার বার হোঁচট খায় গানেও। সইফ আলি খান এ ছবির প্রাণভ্রমর। প্রাণভ্রমর না বলে প্রাণপ্রস্তর বলাও চলে। হাল আমলের কোনও ছবিতে, এমনকী এজেন্ট বিনোদ ছবিতেও এতটা প্রস্তরীভূত অভিনয় পাওয়া যায়নি এর কাছ থেকে। ইন্টারনেটে দেখেছিলাম, সইফ আলি খান জানিয়ে দিয়েছেন অফিশিয়ালি যে, বুলেট রাজা ক্লিক না করলে বেশ বেকায়দায় পড়তে চলেছে তাঁর কেরিয়ার... এ ছবি দেখার পর মনে হল সে আশঙ্কা সত্যি হলেও হতে পারে।
ভরপুর অ্যাকশন পলিটিক্যাল থ্রিলারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছিল বুলেট রাজা। ঠিক জানা নেই কী কারণে, তিঘমাংশু ধুলিয়ার মতো পরিচালক এমন কাঠখোট্টা, রসকষহীন নাম রাখলেন নিজের ছবির! পলিটিক্সের মারপ্যাঁচ, মিডিয়ার কচকচি, চোর-পুলিশ চেজিং গেম, সবই আছে, কিন্তু কী যেন নেই। এমনকী, স্বল্পবসনা মাহি গিল-ও সেই “কী”-টা ভরিয়ে দিতে পারলেন না উদ্দাম নৃত্যগীত দিয়েও। দাগ ফেলে না “ডোন্ট টাচ মাই বডি” আইটেম সং। রুচিবোধের সুতোটা কখন যেন টান মেরে ছিঁডে দেওয়া হল। ভাল লাগে না স্থূল সংলাপও। ওমকারা-য় যে সইফ আলি খানকে দেখা গিয়েছিল, সেই চোখের অভিনয়, সেই অভিব্যক্তি, সেই হাড় হিম করা হাসি, সবই যেন সুদূর কাহিনি মনে হচ্ছে। একবারের জন্যেও সইফের পারফরম্যান্সে এমন কোনও স্পার্ক দেখা গেল না, যা ছবি দেখার পরেও এক ঘণ্টা মনে থাকবে।
জড়তা কাটেনি সোনাক্ষি সিংহের। অভিনয়ের ব্যাপারে আরও সতর্ক, আর সপ্রতিভ হওয়া একান্ত প্রয়োজন। বিশেষত বাঙালি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে তাঁকে আরও বেশি স্টাডি করতে হবে বাংলা ছবির নায়িকাদের। প্রিয়ঙ্কা চোপড়াকে ঝিলমিল চ্যাটার্জি হিসেবে যতখানি অ্যাকসেপ্ট করেছে বাঙালি দর্শক, সোনাক্ষির ব্যাপারে ততখানিই ধাক্কা খেয়েছে। ভাল লাগে সুন্দর ক্যামেরার কাজ। দৃশ্যপট তুলে ধরার চেষ্টা।
স্বল্প পরিসরে যিনি নজর কেড়েছেন তড়িত্গতিতে, তিনি বিদ্যুত্ জামাল। অসাধারণ স্ক্রিন প্রেজেন্স আর তাক লাগানো স্টান্ট। দুটোই তাঁর ইউএসপি। এক কথায়, তিনি এন্ট্রি নেওয়ার পরেই নাটকীয় মোড় নিয়েছে বুলেট রাজা। বলতে গেলে, ছবির ক্লাইম্যাক্সটা তাঁর দৌলতেই দ্রষ্টব্য হয়েছে। সাজিদ-ওয়াজিদের একটিও গান মনে থাকে না। অত্যন্ত হতাশাজনক সাউন্ডট্র্যাক। পরিচালক নাকি প্রথমবার কমার্শিয়াল জঁর নিয়ে খেলাধুলো করলেন, এমনটাই বলছেন ক্রিটিকরা। এই যদি এন্ড প্রোডাক্ট হয় তবে, অবশ্যই তাঁর আর্ট ফিল্ম জগতেই থাকা ছিল ভাল!