জাতীয় পুরস্কারজয়ী জুটির আবার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ

শর্মিলা মাইতি ছবির নাম- সিটিলাইটস রেটিং- ***১/২

Updated By: Jun 9, 2014, 04:36 PM IST

শর্মিলা মাইতি

ছবির নাম- সিটিলাইটস

রেটিং- ***১/২

রঙিন শহর মুম্বইয়ের রাস্তায় রাত্রে কখনও হেঁটেছেন? হাঁটলেও হয়ত চোখ তুলে দেখেছেন সারিবদ্ধ ইমারত, মেরিনড্রাইভ বিচ। কখনও চোখ নামালে দেখতে পেতেন, ফুটপাথেও শুয়ে আছে কিছু অচেনা মানুষ, যারা রঙিন স্বপ্ন নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে পরিবারের হাত ধরে, পায়ে হেঁটে এসেছে কাজের খোঁজে... এখনও জোটেনি। আজও জুটল না কিছু। তবুও স্বপ্ন জড়ো করে রাখা পরের দিনের জন্য।

জাতীয় পুরস্কারজয়ী জুটির পরবর্তী ছবি। নায়ক-নায়িকা নয়, নায়ক-পরিচালক। রাজকুমার রাও-হনসল মেহতা। শাহিদ ছবিতেই এঁরা এমন কেমিস্ট্রি শো করেছিলেন যে, নায়ক-নায়িকা বললেও চলে। অন্যতম রোম্যান্টিক জুটি বললেও অত্যুক্তি হয় না। আলাদা করে রাজকুমার রাওকে ডায়রেক্টরস অ্যাক্টর বলা যায় না। অভিনয়ের মধ্যে এমন এক আলাদা বৈশিষ্ট্য তিনি লালন করে চলেছেন, যেটা প্রতিটি ছবিতে সারপ্রাইজ প্যাকেজ হিসেবে আসে। হনসল মেহতা পরিচালক হিসেবে চূড়ান্ত সফল। বিষয়ভাবনা ভেবেই ক্ষান্ত হন না। রিসার্চের ব্যাপারে কোনও ফাঁকই রাখেন না, যা ছিদ্রসন্ধানী দর্শকের চোখে পড়বে। গলা ফাটিয়ে কোনও বক্তব্য রাখেননি তাঁর পূর্বসূরিদের মতো। কখনও অল্প সংলাপে, কখনও নিশ্চুপ অভিব্যক্তিতে তাঁর নায়ক-নায়িকাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়েছেন। দর্শকের বিবেকে হেনেছেন হাতুড়ির ঘা!

রাজকুমার রাও আর নায়িকা পত্রলেখা এমনই এক বঞ্চিত শ্রেণির প্রতিনিধি। রাজস্থানের দূর গাঁ থেকে মুম্বই শহরে এসেছেন কাজের খোঁজে। প্রথম থেকেই এই পরিবার প্রতারণার শিকার। প্রতারণার আক্রমণে পিছু হঠতে হঠতে একসময়ে দেখা হয় সমব্যথী মানুষের সঙ্গে। অ্যাকটিভ সিকিউরিটি এজেন্সিতে পনের হাজার টাকা মাইনের চাকরিটা হঠাত্ই জুটে যায়। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরে নায়িকা চাকরি নেয় মুম্বইয়ের ডান্স বারে। বলাই যেতে পারত, এর পরের স্ক্রিপ্টটা হবে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। এতই কী সোজা। পরিচালক গল্পকে ঠেলে দেন আরও বাস্তব, কঠিন বাস্তবের অভিমুখে। বড় কালো কঠিন জমাট ফল্গুস্রোত, যা শধুই আপনাকে বসিয়ে রাখবে। বাড়তি কোনও চমক দিয়ে অতিরিক্ত আকর্ষণ বাড়ানোর কোনও চেষ্টাই করেননি তিনি। শান্ত ঢং-এ অভিনয় করে গিয়েছেন রাজকুমার রাও। সারল্যের আতসকাঁচ দিয়েই এক গভীর ষড়যন্ত্রের প্রতিটি পরত ফাঁস করেন তিনি। শিকারও হন অভিমন্যুর মতোই।

কাহিনি উন্মোচন সমালোচকের কর্তব্য নয়। দর্শকের চোখ খোলার জন্যই তোলা থাক বাকি কাহিনি। পত্রলেখা বাঙালি নায়িকা, এ ছবির আবিষ্কার। অন্য সব নায়িকাদের থেকে আলাদা হওয়ার ক্ষমতা রাখেন। লো-প্রোফাইল চেহারা ও আন্ডারটোন অভিনয়টা তাঁর ব্যক্তিগত প্লাস পয়েন্ট হিসেবে ধরা যেতেই পারে।

জিত্ গাঙ্গুলির গান ও ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর মনে রাখার মতো। তবে আরও বেশি চর্চার দরকার ছিল, বিশেষ করে গভীর দুঃখের দৃশ্যগুলোয়। নায়ক নায়িকার বাস্তব চরিত্র হয়ে ওঠার ক্ষমতাই এই ছবির অন্যতম প্রধান ইউ এসপি।

যে-কোনও কাহিনিই শেষ থেকে শুরু করা যায়। এভাবে শুরু করলে সবশেষে এসে যেখানে দাঁড়ায়, সেই জায়গাটা এক নতুন আবিষ্কার। মন দিয়ে দেখুন, এ ছবিতে অনেকগুলো না-জানা গল্প পাবেন।

.