দুর্নীতির বিরুদ্ধে নারীর জেহাদ ও সুভাষ-ম্যাজিক

শর্মিলা মাইতি ছবির নাম: কাঞ্চি রেটিং: ***

Updated By: Apr 29, 2014, 04:16 PM IST

শর্মিলা মাইতি

ছবির নাম: কাঞ্চি

রেটিং: ***

সুভাষ ঘাই বলিউডি ছবিতে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। দর্শককে ড্রিমল্যান্ডে নিয়ে গিয়েও শেষটায় এমন জাদুছড়ি ঘোরান যে, দর্শক কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফেরেন। সঙ্গে ফাউ, ফিল গুড ফিলিং। যুগ বদলেছে, দর্শক এখন অন্যরকম ম্যাজিক চান। সুভাষ ঘাই-ও ফর্মুলা বদলেছেন। নারীর সংজ্ঞা ও গুরুত্ব বদলেছে তাঁর ছবিতে। তবু নিজের মৌলিকত্ব একেবারে বিসর্জন দেননি তিনি। বহুদিন বাদে আবার পরিচালনার কাজে হাত দিলেন তিনি। আবার নবাগতা নায়িকা, তায় বাঙালি। মিষ্টি। কাঞ্চি।

প্রচারের শুরু থেকে আগাম যে ছবিটা দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন সুভাষ, তাতে ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ মেয়ের জেহাদ ঘোষণা। আপাতদৃষ্টিতে চেনা মডেল। কিন্তু চেনা ছকেই একটা ভাললাগার ছন্দ আনলেন সুভাষ ঘাই। কাশ্মীরের অপূর্ব সুন্দর নিসর্গদৃশ্যে ডানপিটে সুন্দরী একটি মেয়ে। অভিনেত্রী হিসেবে মিষ্টি টায়টায় পাশ করে যাবেন হয়ত। এখনও অনেক ঘষামাজা প্রয়োজন। কিন্তু পরিচালক সুভাষ ঘাই এবং ক্যামেরাম্যান সুধীর চৌধুরীর যুগলবন্দিই তাকে দিয়েছে উচ্ছলতার মুগ্ধতা। কার্তিক আরিয়ানের অভিনয়ের সুযোগ তুলনামূলকভাবে ছিল কম। সেই পরিসরেই তিনি চমকে দিলেন। এর আগে প্যায়ার কা পঞ্চনামা ছবিতেও এর স্ফূলিঙ্গ দেখা গিয়েছিল। নির্দ্বিধায় বলা যায়, বলিউডে তাঁর অগ্রগতি নেহাতই এখন সুযোগ আর সময়ের অপেক্ষা।

তবে, নারীপ্রধান ছবি হলেও পুরুষের ভূমিকা নেহাত কম নয়। কাঞ্চি যখন মুম্বইয়ের জটিল পৃথিবীতে এসে পৌঁছলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরাসরি লড়বার জন্য, তখন তাঁকে গাইড করলেন আর এক পুরুষচরিত্র। চন্দন রায় সান্যাল। এর অভিনয়ও মনে রাখার মতো। এমনিতে সুভাষ ঘাইএর ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলির ধূসরতার ছিটেফোঁটা থাকে না। হয় খুব পরিচ্ছন্ন সাদা নয় নিকষ কালো। আজকের দর্শকরা এই গ্রে-জোনটা পছন্দ করেন। মিঠুন চক্রবর্তী আর ঋষি কপূরের চরিত্রগুলোয় ম্যানারিজম নিয়ে আরও এক্সপেরিমেন্টের অবকাশ ছিল। এমনকি ঋষি কপূরের আইটেম নাম্বারটারও যৌক্তিকতা ছিল না। তবু সব ছাপিয়ে যেটা দর্শককে টেনে রাখবে শেষ অবধি, তা হল ছবির নাটকীয়তার সযত্ন ব্যবহার। সিস্টেমের মধ্যে থেকেই দুর্নীতির সঙ্গে সম্মুখসমরে নামার সাহস। প্রায় নিখুঁত স্ক্রিপ্টে কোথাও ইমোশনের আধিক্য নেই। একটা অদৃশ্য দাঁড়িপাল্লায় নিক্তি মেপে ওজন করার মতো।

এ ছবির অন্যতম আকর্ষণ সুখবিন্দর সিংহের গান। মিকা সিং আর হানিসিং-এর চ্যাঁচামেচি থেকে খানিক হলেও নিষ্কৃতি। চোখ বুজে শুনলে শরীরে রক্তের তালে তালে শব্দ শুনতে পাবেন। আজকাল বলিউডে সাবজেক্ট থেকে টেকনিক, সবই অত্যাধুনিক। সেই ভিড়ে কাঞ্চি অবশ্যই খোলা হাওয়ার নরম ছোঁয়া এনে দেবে। কল্পনা আর অসম্ভবকে সম্ভব করবার একটা জেদ। একটা স্বপ্নকে পূরণ করবার প্রবল ইচ্ছে। সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার স্বপ্ন। সারে যাঁহা সে আচ্ছা হিন্দুস্থান কাঁহা হ্যায়? পরিচালক যেটা সাহস করে সহজ ভাষায় বললেন। এই “সহজ” ব্যাপারটাই কাঞ্চির সবচেয়ে বড় ইউএসপি।

.