নিঃসঙ্গ সম্রাট ও দেউলিয়া কোম্পানি
শর্মিলা মাইতি ছবির নাম: সম্রাট অ্যান্ড কোম্পানি রেটিং: **
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম: সম্রাট অ্যান্ড কোম্পানি
রেটিং: **
বাঙালি চরিত্রগতভাবে স্বভাবকৌতূহলী ও রহস্যপ্রবণ। গ্রীষ্মের ঠাঠা অলস দুপুর বা কনকনে শীত, একখানি মোহন, এক চটি দীপক-রতন কিংবা, এক সমগ্র ফেলুদা ব্যোমকেশ পেলে সহজে বিছানা ছেড়ে উঠবে না বাঙালি! কাজেই কেবল শার্লক হোমসে খিদে-তেষ্টা মেটে না। মেটেনি। পরিচালক কৌশিক ঘটক (ঋত্বিক ঘটকের কেউ নন, কিঁউকি সাঁস ভি কভি বহু থি-খ্যাত) প্রবাসী বাঙালি হওয়ায়, এবং দীর্ঘদিন হিন্দি বলয়ে থাকার জন্যেই বোধকরি এঁদের কথা বিস্মৃত হয়েছিলেন।
সিনেমা সিরিয়াল নয়। ভুল হলে শুধরোনোর জায়গা নেই। মিসকাস্ট মনে হলে রাতারাতি নায়ক বদলে, প্লাস্টিক সার্জারির গল্প ফাঁদা যায় না। মেরে ফেলার পর আবার স্মৃতিভ্রষ্ট ভবঘুরে হিসেবে ফিরিয়ে আনা যায় না। কিন্তু কী আশ্চর্ষ সাহস পরিচালকের, এই বাজারেও তিনি এমন রিস্ক নিয়ে দিব্যি সিরিয়ালের টেকনিকে একটা আস্ত ফিল্ম বানালেন, তা-ও ডিটেকটিভ!
ছবির শুরুতেই শার্লক হোমসকে প্রচুর শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। ফুলমালাচন্দনে ভূষিত হয়েছেন আর্থার কোনান ডয়েল। ঠিক কী কারণে এমনটা করা হল, তা ছবির শেষে গিয়েও ঠাহর করতে পারবেন না। কারণ ডিটেকটিভ সম্রাট রহস্য সমাধানে চূড়ান্ত ব্যর্থ। ছবির শেষেও তিনি সমাধান করতে পারেন না।
নায়ক যখন রাজীব খান্ডেলওয়াল, একটা ম্যাজিকের প্রত্যাশা ছিলই। সেই ব্যক্তিত্ব, যিনি এখন এ দেশের প্রায় আশিভাগ মেয়ের মনের লুকনো কথা। পড়ার বইয়ে লুকিয়ে রাখা পেপার কাটিং। রাজীব সুজল খান্ডেলওয়াল, যিনি একই রকম জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন সচ কা সামনা টক শো হোস্ট হিসেবে। চমকে দিয়েছিলেন ডেবিউ বলিউড ফিল্ম আমির দিয়ে। কিংবা গত বছরের গোড়ার দিকে রিলিজ হওয়া টেবিল নাম্বার ২১। ডিটেকটিভ সম্রাটের ভূমিকায় তাঁকে বড় অসহায়, একাকী, নিঃসঙ্গ মনে হল। মিস্ট্রি সলভ করতে গিয়ে এত সলিলকি বিড়বিড় করেন যে, তাঁর আগেকার পারফরম্যান্সকে নেহাতই হিস্ট্রি মনে হয়। অতিকথনের প্যাঁচে নিজেই যেন পড়ে গেলেন। শেষ দিকটায় এমন রা-ওয়ান স্টাইলের বেমানান অ্যাকশন, দেখে মনে হল, এঁর কোম্পানি এবার দেউলিয়া হতে বসল। পুরো দোষ রাজীবকে দেওয়া যাবে না, যেটা তাঁর স্ট্রং পয়েন্ট, মানে অভিনয়, তিনি সর্বশক্তি দিয়ে করেছেন। তবুও শক্তিমান হয়ে উঠতে পারল না সম্রাট দ্য ডিটেকটিভ। অবান্তর স্ক্রিপ্ট আর অতিনাটকীয় সিকোয়েন্সের জন্য।
মদালসা শর্মা নতুন নায়িকা। ফুরফুরে মলয় বাতাস। সুন্দর একটি সং সিকোয়েন্সে তাঁকে বেশ লাগে। ওইটুকুই। গোটা ছবিতে বলার মতো কিছুই করতে পারেননি নবাগতা হিসেবে।
তবু বলি, একটা ছবির সবকিছু খারাপ হতে পারে না। রাজীবের অভিনয়ের পাশাপাশি আর একটি বিষয় নজর এড়িয়ে যাবে না। অসাধারাণ সেট পরিকল্পনা। এত অবিশ্বাস্য নিখুঁত সেট হাল আমলে কোনও ছবিতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। যথাযোগ্য পুরস্কারে ভূষিত হলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই!