Lata Mangeshkar Passes Away: লতাকে সঙ্গে নিয়েই সেদিন উত্তমের ঠোঁট থেকে হেমন্তকে সরিয়ে দিলেন মান্না দে!

উত্তম-হেমন্তের কণ্ঠ একেবারে যেন পরস্পরের পরিপূরক ছিল।

Updated By: Feb 6, 2022, 07:44 PM IST
Lata Mangeshkar Passes Away: লতাকে সঙ্গে নিয়েই সেদিন উত্তমের ঠোঁট থেকে হেমন্তকে সরিয়ে দিলেন মান্না দে!

সৌমিত্র সেন

'কে প্রথম কাছে এসেছি'! বাংলা রোম্যান্টিক গানের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গান বললে কি কোনও তর্ক উঠবে? উঠুক, ক্ষতি নেই। কিন্তু ঐতিহাসিক এই গান বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বা বাংলা গানের বৃহত্তর জগতের পরস্পরছেদী অনেক ঘটনার সঘন গহন সংযোগে এক অনন্য ইতিহাসের সামগ্রী হয়ে স্রেফ ভিন্টেজে উত্তীর্ণ।

সুধীন দাশগুপ্তের সৌজন্যে ১৯৬৬ সালের 'শঙ্খবেলা' ছবির এই গানেই প্রথম উত্তমের লিপে মান্না দে'কে সার্থক ভাবে ব্যবহার করা হল (প্রসঙ্গত, 'গলি থেকে রাজপথ' ছবিতেই দেখতে গেলে উত্তমের লিপে প্রথম কণ্ঠ দেন মান্না দে। কিন্তু সেই গান জনমনে খুব ছাপ ফেলেনি। তাছাড়া ওই ছবির গল্পটাও অন্যরকম ছিল বলে উত্তমের রোম্যান্টিক ইমেজের সঙ্গে মান্নাদের রোম্যান্টিক মিউজিক্যাল অ্যাপ্রোচের মণিকাঞ্চন যোগ এ গানে সম্ভব হয়নি)।

আরও পড়ুন: Lata Mangeshkar Passes Away: বাংলা গানের চৌধুরী-বাড়িতেই কি মঙ্গেশকর-ম্যাজিকের চূড়ান্ত?

এর আগে উত্তম মানেই হেমন্ত। তার যথেষ্ট সঙ্গত কারণও আছে। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ সম্ভবত উত্তম-হেমন্তের কণ্ঠ একেবারে যেন পরস্পরের পরিপূরক ছিল। দুই কণ্ঠের 'টোনাল কোয়ালিটি' এতটাই সমধর্মী ছিল যে, পর্দায় উত্তমের লিপে হেমন্তকে গাইতে শুনেও দর্শক যেন বিশ্বাস করত, বিশ্বাস করতে চাইত যে, গানটি উত্তমই গাইছেন! এ ছাড়া আরও কারণ ছিল। তা হল কণ্ঠশিল্পী হিসেবে হেমন্তের অনন্য স্বরসৌকর্য, অতুলনীয় কণ্ঠ-ঔদার্য ও অসামান্য রোমান্টিকতা। সবটাই উত্তমের ইমেজে দারুণ ভাবে মিশে গিয়েছিল।

ফলে, এই সাজানো গোছানো স্থির সংসারের নিটোল তন্ত্রীকে কেউ ব্যাহত করতে চাইত না। চাইতেন না স্বয়ং উত্তমও। তিনিও নাকি প্রথমে তাঁর লিপে মান্না দে গাইতে আসছেন শুনে কিঞ্চিৎ ধন্দে পড়েছিলেন। কিন্তু তিনি জাতশিল্পী। চ্যালেঞ্জ নিতে পিছপা হন না। তবে সব চেয়ে বড় বাধা এসেছিল ছবির প্রযোজক-পরিচালকের তরফ থেকে। তাঁরা কোনও ভাবেই উত্তমের লিপে হেমন্তের জায়গায় মান্না দে'কে মেনে নিতে চাননি। কিন্তু সেদিন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন একজনই। তিনি গানটির সুরকার সুধীন দাশগুপ্ত। তিনি সটান বলে দেন, গানটিতে তিনি যে ট্রিটমেন্ট রেখেছেন তা হেমন্তের গলার সঙ্গে যায় না এবং তিনি মান্না দে'কে ভেবেই গানটা তৈরি করেছেন। গাওয়ালে মান্নাকে দিয়েই গাওয়াতে হবে, না হলে ছবি থেকে সরে দাঁড়াবেন তিনি। সঙ্গীত পরিচালকের এ হেন দৃঢ়তায় অবশেষে নরম হল সব পক্ষই। রেকর্ড হল গান। গাইলেন মান্না। সঙ্গে নায়িকার লিপে রইলেন লতা মঙ্গেশকর। সৃষ্টি হল এক ইতিহাস! 

শোনা যায়, মানুষ এত বিপুল ভাবে নিয়েছিল এই গান, উত্তমের লিপে মান্নাকে এত একান্ত ভাবে গ্রহণ করেছিল তারা যে, তারপর থেকে স্বয়ং উত্তমও তাঁর ছবির গানের শিল্পী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নায়কের ঠোঁটের জন্য ক্রমশ হেমন্ত-অক্ষ থেকে মান্না-কোটিতে সরে-সরে যাচ্ছিলেন। পরবর্তী কালে যে জুটি থেকে বাংলা ছবি পেতে থাকল স্মরণীয় সব গান আর সেই গানের সঙ্গে উত্তমের স্মরণীয় সব লিপ-ওয়ার্ক ও আনুষঙ্গিক অভিনয়ের মধুর সুষমা।

কিন্তু এ কথা থাক! আপাতত, বলা থাক এ গানে লতার যুক্ত হয়ে পড়া। শোনা যায়, গানটি মুম্বইয়ে রেকর্ড হয়েছিল অনেক বাধা টপকে। কিছুতেই লতার 'ডেট' পাওয়া যাচ্ছিল না। গানটি গাইবার জন্য লতাকে প্রাথমিক ভাবে রাজি করিয়েছিলেন মান্নাই। পরে রেকর্ডিং ডেট ঠিক করা, স্টুডিয়ো ঠিক করা ইত্যাদি নানা ঝকমারি মান্নাকেই পোয়াতে হয়েছিল। কিন্তু কী সুধীন দাশগুপ্ত, কী মান্না দে কেউই একবারের জন্যও সে সময়ে ভাবেননি, লতাকে বাদ দিয়ে এ গানের জন্য অন্য কোনও 'ফিমেল ভয়েস'কে নেওয়া হোক। বরং অনেক সংশয়, অনেক বাধা, অনেক অপেক্ষা, অনেক সমঝোতা, অনেক ঝক্কি পেরিয়ে রেকর্ড করা হয়েছিল সেই গান। এবং রেকর্ডের পরে যে-গান পর্দায় শোনা গেল, যে-গান পরে ডিস্ক হয়ে বেরল তা বাংলা গানের বদলে-দেওয়া ইতিহাসের এক অন্যতম মাইলফলক হয়ে রয়ে গেল। 

এই ছবিতে 'কে প্রথম কাছে এসেছি' ছাড়াও ছিল 'আজ মন চেয়েছে'র মতো লতার 'সোলো'ও। গান লিখেছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই ছবির গানের মধ্যে দিয়েই বাংলা গানের বৃহত্তর আসরে সুধীন-মান্না-পুলক-উত্তমের এক সোনালি চতুর্ভুজ রচিত হয়েছিল। যে চতুর্ভুজের কর্ণ বা 'ডায়াগোনাল' (diagonal) হয়ে সেদিন রয়ে গেছিলেন সুরের রানি লতা মঙ্গেশকর।

Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

আরও পড়ুন: Lata Mangeshkar Passes Away: লতা-কণ্ঠে নিজেদের গহন আত্মাকে যেন মেলে ধরে এই সব রবীন্দ্রগান

.