জন্মদিনে ‘বহুরূপী’ শম্ভু মিত্র
১৯৪৯ সালের ‘পথিক’ থেকে ১৯৭১ সালের ‘চোপ, আদালত চলছে’— বাংলা থিয়েটারকে আকাশছোঁয়া উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন ‘বহুরূপী’ শম্ভু মিত্র।
সুদীপ দে: ১৯৪৯ সালের ‘পথিক’ থেকে ১৯৭১ সালের ‘চোপ, আদালত চলছে’— বাংলা থিয়েটারকে আকাশছোঁয়া উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন ‘বহুরূপী’ শম্ভু মিত্র। ১৯১৫ সালের ২২ অগস্ট শম্ভু মিত্রের জন্ম হয় কলকাতায়। বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে বিদ্যালয় শিক্ষার পাঠ শেষ করে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। ১৯৩৯ সালে রংমহলে বাণিজ্যিক নাট্যমঞ্চে যোগ দেন তিনি। পরে যোগ দিয়েছিলেন মিনার্ভায়। এই সময় কিংবদন্তি নাট্যব্যক্তিত্ব শিশিরকুমার ভাদুড়ীর সঙ্গে আলাপ হয় শম্ভু মিত্রর। তাঁরই প্রযোজনায় আলমগীর নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। যদিও তখন থেকেই নাট্যজগতে শিশিরকুমারের থেকে আলাদা ঘরানা তৈরিতে উদ্যোগী হন শম্ভু মিত্র। ১৯৪৩ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক পি সি যোশির অনুপ্রেরণায় ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগ দেন। ওই সময়ই তাঁর সঙ্গে তৃপ্তি মিত্রের কাছাকাছি আসা। ১৯৪৫ সালের ১০ ডিসেম্বর তৃপ্তি মিত্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
১৯৪৯ সালে তুলসী লাহিড়ীর ‘পথিক’ প্রযোজনা করেই বাংলা থিয়েটারের দুনিয়ায় পথচলা শুরু ‘বহুরূপী’র। এর পর নিজে কলম ধরেন শম্ভু মিত্র। লিখেছেন ‘উলুখাগড়া’ (১৯৪৯), ‘বিভাব’ (১৯৫১)-এর মতো নাটক। ১৯৫১ সালেই শম্ভু মিত্র হাত দেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চার অধ্যায়’-এ। সাধারণ দেশবাসীকে লুঠ করে স্বরাজ আনার ধারনাকে কঠিন প্রশ্নচিহ্নের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছিলেন এই ‘চার অধ্যায়’-এর মাধ্যমেই। তাঁর নির্দেশনায় ১৯৫৪ সালে ‘বহুরূপী’র ‘রক্তকরবী’ তো বাংলা থিয়েটারে নতুন ইতিহাস রচনা করেছিল। হয়ে উঠেছিল কিংবদন্তি বাংলা নাটক।
বাংলা থিয়েটারে নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছেন শম্ভু মিত্র। ক্ল্যাসিক্যাল গ্রিক ট্র্যাজেডির আঙ্গিককে বাংলার মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। শুধু বাংলায় নয়, ভারতীয় থিয়েটারের ইতিহাসেও সেই প্রথম। বাঙালি পরিচিত হয়েছিল ক্ল্যাসিক্যাল গ্রিক ট্র্যাজেডির মোহময় বেদনার সঙ্গে। ১৯৬৭ সালে ‘বাকি ইতিহাস’-সময় থেকেই বিষয়গত বাস্তবতা থেকে খানিকটা সরে এসে কিছুটা ‘অ্যাবসার্ড থিয়েটার’-এর দিকে বাঁক নেয় ‘বহুরূপী’। এর পর শম্ভু মিত্র বাংলা থিয়েটারকে শুধুমাত্র বাংলার নাট্যব্যক্তিত্বদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখতে চাননি। সত্যদেব দুবে, শ্রীরাম লাগু, গিরীশ কারনাড, বিজয় তেন্ডুলকরের মতো অভিনেতা, নাট্যব্যক্তিত্বদের নিয়ে এসেছিলেন ‘বহুরূপী’র প্রযোজনায়।
আজ শম্ভু মিত্রের ১০৩তম জন্মদিনে যদি তাঁকে আধুনিক ভারতীয় নাটকের পথিকৃত্ বলা হয়, তবে তা মোটেই অত্যুক্তি করা হবে না।