Uttam Kumar Birthday: সৌমিত্রকে সেদিন ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন উত্তম, হতবাক সকলে...
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তর্কাতীত ভাবে সবচেয়ে সফল ও সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃত। বাণিজ্যিক সাফল্য পাওয়ার পাশাপাশি সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে তাঁর কাজ। বাংলা ছবির 'ম্যাটিনি আইডল' তিনি।
সৌমিত্র সেন
৩ সেপ্টেম্বর বাঙালির রেড লেটার ডে। এদিন তাঁদের অতি প্রিয় নায়কের জন্মদিন। তিনি মহানায়ক উত্তমকুমার। ১৯২৬ সালের এই দিনে আহিরিটোলায় মামারবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন উত্তমকুমার। উত্তমকুমারকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিবেচনা করা হয়। তিনি বাংলা চলচ্চিত্র ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ও সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃত। বাণিজ্যিক সাফল্য পাওয়ার পাশাপাশি সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে তাঁর কাজ। তাঁকে বাংলা ছবির 'ম্যাটিনি আইডল' ধরা হয়। উত্তম তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা সিনেমায় কাজ করেছেন। ১৯৪৮ সালে তাঁর প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'দৃষ্টিদান'। ১৯৮০ সাল পযর্ন্ত কাজ করেছেন তিনি। তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা ২০২, যার মধ্যে ১৫টি হিন্দি ছবি। তাঁর 'অগ্নিপরীক্ষা', 'হারানো সুর', 'সপ্তপদী', 'ঝিন্দের বন্দী', 'জতুগৃহ', 'লাল পাথর', 'থানা থেকে আসছি', 'রাজদ্রোহী', 'নায়ক', 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি', 'চৌরঙ্গী', 'এখানে পিঞ্জর', 'স্ত্রী', 'অমানুষ', 'অগ্নীশ্বর', 'সন্ন্যাসী রাজা' ছবিগুলি কোনওদিনই ভুলতে পারে না বাঙালি। 'চিড়িয়াখানা' (১৯৬৭) ও 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি' (১৯৬৭)-র জন্য উত্তম ১৯৬৮ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার পান। ভারতের নায়কদের মধ্যে তিনিই প্রথম যিনি এই পুরস্কার পান।
আরও পড়ুন: Pradip Mukherjee Passes Away: জন অরণ্য ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
এহেন উত্তমের সঙ্গে সর্বদাই বাঙালির আর এক অনন্য নায়কের তুলনা হয়। তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায়। তাঁরা প্রায় ৮/৯টি ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন। তবে এর মধ্যে 'ঝিন্দের বন্দী', 'স্ত্রী', 'দেবদাস' খুবই জনপ্রিয়। এ ছাড়াও 'যদি জানতেম', 'দর্পচূর্ণ' ছবিতেও তাঁদের যৌথ কাজ নানা ভাবে সমালোচকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। উত্তমকুমার সৌমিত্রকে তাঁর ডাক নামেই ডাকতেন-- 'পুলু'।
যদিও তৎকালীন বাঙালি মনে করত (এখনও অনেকে করেন), এই দুজনের মধ্যে নাকি সাংঘাতিক প্রতিযোগিতা। আর তার হাত ধরে বেশ কিছুটা তিক্ততাও। প্রতিযোগিতা হয়তো ছিল। তবে তা পর্দায়, নিজেদের কাজে। দু-একটি ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া আগাগোড়া তাঁরা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার সম্পর্কেই আবদ্ধ ছিলেন। দুজনেই দুজনের কাজের প্রতি যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করতেন। তাঁদের মধ্যে সেই অর্থে কোনও তিক্ততা ছিল না। অথচ, তাঁদের নিয়ে গল্প-কাহিনি, সত্য-মিথ্যের শেষ নেই, শেষ নেই তাঁদের ঘিরে তৈরি হওয়া মিথেরও। তবে এক সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের মধ্যে নানা কিছু ঘটেছে। যা পরবর্তী কালে জেনে আনন্দিতই হয়েছেন ফিল্মরসিকেরা।
যেমন 'দেবদাস' ছবির শ্য়ুটিংয়ে একটা ঘটনা ঘটেছিল। যা পরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এক জায়গায় বলেন। বেশ মজার ঘটনাটি। শোনা যায়, সেদিন ডায়ালগ রেকর্ডিং চলছে। উত্তমের লম্বা ডায়ালগ। কিন্তু বারবার তিনি একটি বিশেষ শব্দে এসে আটকে যাচ্ছেন, ভালো ভাবে উচ্চারণ করতে পারছেন না। রেকর্ডিংরুমে সেদিন সৌমিত্রও ছিলেন। হঠাৎই উত্তম বলে উঠলেন, 'পুলু, তুই একটু বাইরে যা তো!' সকলেই খুব অবাক। কী ব্যাপার? স্বয়ং সৌমিত্রও খুব বিস্মিত। উত্তম তখন একগাল হেসে নাকি বলেছিলেন, 'না, আসলে তোর উচ্চারণ তো খুব ভালো...'! তাতে সৌমিত্র ততোধিক বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন, তাতে কী? আমি থাকলে তোমার টেনশন হবে নাকি? সেদিন অবশ্য উত্তমের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত রেকর্ডিংরুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সৌমিত্র। আর রেকর্ডিংয়ের কাজও ভালো ভাবে উতরে দিয়েছিলেন উত্তম।