বাঙালি বাবার খোঁজে কল্পেশ্বর
ছয় ঘণ্টা লেটে হরিদ্বার স্টেশনে পৌঁছল স্পেশাল ট্রেনটি। স্পেশালই বটে। কারণ স্টেশনের আউটারেই দাঁড়িয়ে রইল দেড়ঘণ্টা। স্পেশাল অভ্যর্থনা বলে কথা! স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় আগের স্টেশনে অতি প্রাচীন পদ্ধতিতে পাশের লাইন দিয়ে ট্রেন পাস করানোও দেখেছি। আগের দিন দুপুরে হাওড়া থেকে যাত্রা করেছিলাম পাঁচ জন। ডানকুনি পৌঁছতেই থমকে গেল ট্রেন। কারণ ইঞ্জিন বিকল। হাওড়া থেকে নতুন ইঞ্জিন এনে ফের যাত্রা শুরু। মে মাসের দুপুরে বাইরে তখন আগুন জ্বলছে। স্পেশাল ট্রেন কোন স্টেশনে থামবে তার কোনও ঠিক নেই। ফলে পরদিন স্টেশন থেকে খাবার-দাবারও ঠিকঠাক পাইনি। তার ওপর জল নেই সকাল থেকেই। দুপুরে এক গ্রামের মধ্যে ট্রেন দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ। রোদ ঝলসানো মাঠের পাশে ছোট্ট কুঁড়ে ঘর। চোখে পড়ল কুয়ো থেকে জল তুলে স্নানে ব্যস্ত গৃহকর্তা। ট্রেন থেকে নেমে দলের চারজন সেই গৃতকর্তার বদান্যতায় কিছুটা গা ভেজালাম।
চিত্ররূপ চক্রবর্তী
ছয় ঘণ্টা লেটে হরিদ্বার স্টেশনে পৌঁছল স্পেশাল ট্রেনটি। স্পেশালই বটে। কারণ স্টেশনের আউটারেই দাঁড়িয়ে রইল দেড়ঘণ্টা। স্পেশাল অভ্যর্থনা বলে কথা! স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় আগের স্টেশনে অতি প্রাচীণ পদ্ধতিতে পাশের লাইন দিয়ে ট্রেন পাস করানোও দেখেছি। আগের দিন দুপুরে হাওড়া থেকে যাত্রা করেছিলাম পাঁচ জন। ডানকুনি পৌঁছতেই থমকে গেল ট্রেন। কারণ ইঞ্জিন বিকল। হাওড়া থেকে নতুন ইঞ্জিন এনে ফের যাত্রা শুরু। মে মাসের দুপুরে বাইরে তখন আগুন জ্বলছে। স্পেশাল ট্রেন কোন স্টেশনে থামবে তার কোনও ঠিক নেই। ফলে পরদিন স্টেশন থেকে খাবার-দাবারও ঠিকঠাক পাইনি। তার ওপর জল নেই সকাল থেকেই। দুপুরে এক গ্রামের মধ্যে ট্রেন দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ। রোদ ঝলসানো মাঠের পাশে ছোট্ট কুঁড়ে ঘর। চোখে পড়ল কুয়ো থেকে জল তুলে স্নানে ব্যস্ত গৃহকর্তা। ট্রেন থেকে নেমে দলের চারজন সেই গৃতকর্তার বদান্যতায় কিছুটা গা ভেজালাম।
রাত সাড়ে নটায়, হরিদ্বার স্টেশন জমজমাট। যাত্রীরা ঘরে ফেরার অপেক্ষায়। তাঁদের পাশ কাটিয়ে স্টেশনের বাইরে এসে দাঁড়ালাম। কোনও ধর্মশালায় উঠলেই হয়ে যেত। কিন্তু প্রতিবারের অভ্যেস মতো চেপে বসলাম অটোয়। গন্তব্য হৃশিকেষ। ভোর থাকতেই পাহাড়ে ওঠার প্রথম বাসটা ধরতে হবে যে। দলের অন্যান্যরা কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও মেনে নিলেন আগামিদিনের কথা ভেবে। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর পৌঁছলাম হৃশিকেষ বাসস্ট্যান্ডে। এখন যাত্রার মরশুম। এত রাতে টিকিট কাউন্টারও বন্ধ। অনেক চেষ্টা করে সকাল ছটার বদ্রীনাথগামী বাসে সিট মিলবে বলে প্রতিশ্রুতি পেলাম। তখনও পেটে কিছু পড়েনি। ঘড়িতে প্রায় রাত এগারোটা। আবার সকালের বাস শুনে, এক সদস্যের মন্তব্য, রাতটা বাইরেই কাটালে হয় না! বুঝলাম চটেছেন। সঙ্গে সঙ্গে পাশের হোটেলে খাবারের অর্ডার দিয়ে দিলাম। অন্যদের বসিয়ে চলে গেলাম ওপরের লজের ঘরে মালপত্র তুলতে। বাস ছাড়তে কয়েক ঘণ্টা বাকি। একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। স্নান সেরে বিছানায় আসতেই সারাদিনের ধকল উধাও। বরং চোখের সামনে ভাসতে থাকে, পাহাড়ি পথ দিয়ে উঠে যাচ্ছে বাসের দৃশ্য। কতোবার তো এপথে এসেছি। কিন্তু প্রতিবারই যাত্রার আগের দিন রাতে ঘুম আসে না। চোখের সামনে পাহাড়ের বাঁক, বাসের জানলা থেকে দেখা গভীর খাদ, ওপরের পাহাড়ের গায়ে আটকে থাকা দেশলাই বাক্সের মতো ছোট ছোট বাড়ির সারি।
ভোর পাঁচটায় লজের বারান্দায় এসে দেখি, বাসের মাথায় মালপত্র তোলা হচ্ছে। স্যাক আর রসদের বস্তা নিচে নামাতে না পারলে, বাসের মাথায় তুলতে সমস্যা হবে। সৌভাগ্যক্রমে বারান্দার নীচেই বাসের ছাদ। সুদেবদাকে বাসের মাথায় তুলে, ওপর থেকেই মালপত্রগুলো বাসের মাথায় তুলে দিলাম। ততক্ষণে অন্য সদস্যরাও তৈরি। নিচে চা খেতে পাঠিয়ে আমরাও প্রস্তুত হয়ে নিলাম। যাত্রার সময় বাসে সিট পাওয়া একটা দুরূহ ব্যাপার। অগ্রীম টিকিট সত্বেও অনেকসময় নির্দিষ্ট সিট মেলে না। কোনও রকমে চারটে সিট মিলল। কিন্তু আর একটা দলে বয়স্করা রয়েছেন। দলের প্রবীণ ব্যক্তির ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে হয়ত মন গলল গম্ভীর কণ্ডাক্টরের। বাবুজিকে নিজের সিটটা ছেড়ে দিয়ে, গেটে দাঁড়িয়ে হুইসিল বাজিয়ে দিলেন। জয় বদ্রী, জয় কেদার ধ্বনিতে যাত্রা হল শুরু।
ভোর রাতের প্রথম দুটি বাস দিনের দিন বদ্রীনাথ পৌঁছয়। বাকিরা যোশিমঠে রাত কাটিয়ে পরের দিন বদ্রীনাথ যায়। আমরা যোশিমঠের আগেই হেলংয়ে নেমে যাব। পাহাড়ি বাঁকের ছোট্ট হল্ট হেলং। বাসের মাথা থেকে মাল নামাতেই, একরাশ কালো ধোঁয়া ছেড়ে পাহাড়ের বাঁকে মিলিয়ে যায় বদ্রীনাথ এক্সপ্রেস। এবার বিরতি চায় সেও। রাস্তার ধারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে স্যাক, রসদের বস্তা। পাশের চায়ের দোকানের সামনে এনে রাখি। কিন্তু সুদেবদা কোথায়? দেখি বেঞ্চিতে বসে দলের বয়স্ক সদস্য কাজলদা তাঁকে রাস্তার এই বাঁকের কারিগরি প্রযুক্তি বোঝাচ্ছেন। আসলে অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার কতক্ষণ আর পাহাড় দেখে কাটাবেন। চা খেয়ে একটানা বাস যাত্রার ধকল কিছুটা কাটল। চায়ের দোকানের লালার অনুরোধে উল্টো দিকের একটি বাড়ির দোতলার দুটি ঘর আমাদের জন্য খুলে দেওয়া হল। সন্ধেয় ফের একবার চা সহযোগে পরবর্তী যাত্রা নিয়ে আলোচনায় বসলাম। ঠিক হল এখানে অতিরিক্ত মালপত্র রেখে আমরা কল্পেশ্বর ঘুরে আসব। তারপর এখান থেকে মণ্ডল হয়ে রুদ্রনাথের পথে যাত্রা করব। রাস্তার ধারের একটা ধাবায় গিয়ে রাতের ডিনার সারা হল। লরি চালকদের সঙ্গে গল্পে গল্পে বদ্রীনাথের পথের নানা হদিশ মিলল।
পরদিন সকালে প্রাতরাশ সেরে পথে নামলাম। রাস্তা পেরিয়ে সোজা নীচে নেমে যাওয়া। কল্পেশ্বর থেকে বয়ে আসা কল্পগঙ্গা পেরিয়ে আমরা কিছুটা ওপরে উঠতে লাগলাম। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পরই পথের ধারে বসে পড়লেন কাজল দা। পা মুচকে একাকার অবস্থা। কিছুক্ষণের চেষ্টাতেও হাঁটতে পারলেন না তিনি। পা ফেলতেই পারছেন না। তাঁকে হাত ধরে ওপরের বাস রাস্তায় পৌঁছে দেওয়া হল। হেলংয়ের ঘরের চাবি দিয়ে দিলাম। বাকিরা এগিয়ে চললাম কল্পেশ্বরের দিকে। কিন্তু মনটা ভারাক্রান্ত। বয়সের কারণে রুদ্রনাথ তাঁর পক্ষে যাওয়া অসম্ভব, নিজেও জানেন। শুধু একবার কল্পেশ্বর দর্শনের ইচ্ছে ছিল তাঁর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতেও বাধ সাধল। যাই হোক বাকি চারজন কখনও একসঙ্গে, কখনও একা একা সামনের দিকে এগিয়ে চললাম। নহর গ্রামে সাময়িক বিরতি। পথের ধারে ছোট্ট চায়ের দোকান। চারপাশে রামদানার ক্ষেত। একটা পাহাড়ের পাদদেশে সাজানো নহর গ্রাম। চা পানের পর ফের পথ চলা। বারগিন্ডা, উরগম গ্রাম পেরিয়ে দুপুর দেড়টায় পৌঁছলাম দেবগ্রাম। এখান থেকে কল্পেশ্বর মাত্র দেড় কিলোমিটার। গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে পঞ্চায়েতের তৈরি ফরেস্ট রেস্ট হাউস। তার বারান্দাতেই এসে বসলাম। উল্টোদিকে চৌকিদার নগেন্দ্র সিং নেগীর বাড়ি। রাতে এখানেই থেকে যাওয়ার অনুরোধ জানালেন। আমাদেরও তাই ইচ্ছে। সামনে পিছনে পাহাড়ের সারি। এই জায়গায় একটা রাত না থাকলে হয়? তবে কাজলদাকে নিয়ে আমাদের সমস্যার কথা দেবেন্দ্রকে জানালাম। আরও দুজন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। বুঝলাম, তাঁরা রুদ্রনাথ পথের গাইড-পোর্টার। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে নগেন্দ্র একটা পথ বাতলে দিল। দুটো ঘোড়া নিয়ে তাঁরা এখনই কল্পেশ্বর চলে যাবে। কাজলদা ও মালপত্র নিয়ে ফিরে আসবে। সেইমতো কাজলদাকে একটা চিঠিও দিয়ে দেওয়া হল। সঙ্গে আমাদের একজনের পরিচয় পত্র। ঘোড়া দুটো নিয়ে ওরা রওনা হয়ে গেল।
নগেন্দ্র সিংয়ের বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। সামনের ঘরটি হোটেলের মতো সাজিয়েছে। ছোট্ট একটা মুদি খানার দোকানও রয়েছে। গরম গরম রামদানার রুটির ওপর ঘরে তৈরি ঘিয়ের ডেলা। সঙ্গে পাহাড়ি সব্জির তরকারি। খাওয়া শেষে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে কল্পেশ্বরের দিকে পা বাড়ালাম। কিছুটা গিয়ে একটা ঝরনা পেরিয়েই কল্পেশ্বর। পঞ্চকেদারের এক কেদার। দুটো তিনটে মন্দির। আর কয়েকটি সাধুর কুঠিয়া। এখানেই বাঙালি বাবার দর্শন মিলল। একসময় কলকাতার নামী কলেজের ছাত্র, পরবর্তী কালে সাধু হয়ে যান। নানা তীর্থ ঘুরে ঘুরে শেষপর্যন্ত কল্পেশ্বরে এসে স্থিত হন। সারাদিনই যাত্রী সেবায় ব্যস্ত। সকাল চারটের মধ্যে স্নান সেরে পূজা-পাঠ। তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায়, আগত যাত্রীদের চা করে খাওয়ানো। যাত্রীদের পুজোর ব্যবস্থা করা। কথার ফাঁকেই দেখি চা তৈরি। সঙ্গে একটা বাটিতে ছোলার তরকারি। যত বলি খেয়ে এসেছি। কিছুতেই শোনেন না। একটু খেতেই হল। এক কথায় অমৃত। অনেকক্ষণ গল্প করার ফাঁকে সময়ের দিকে খেয়াল নেই। ঘরিতে দেখি ছটা বাজে। বাঙালি বাবার অনুমতি নিয়ে ফিরে আসি দেবগ্রামে। এখনও কাজলদা আসছেন না। কিছুটা চিন্তা তো হচ্ছেই। সামনেই পূর্ণিমা। পাহাড়ে পাহাড়ে রূপোলি আলোর খেলা। অনেকক্ষণ বারান্দায় বসে সেই রূপ উপভোগ করে ঘরে চলে এলাম। চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে নিলাম। ঠাণ্ডাটা এবার মালুম হচ্ছে। সময় যেন কাটতে চাইছে না। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ হঠাত্ই বাইরে ঘণ্টার আওয়াজ। দেখি ঘোড়ার ওপর সোজা হয়ে বসে রয়েছেন কাজলদা। মুখ দেখেই বোঝা যায়, বেশ কষ্ট হয়েছে। একে পায়ের ওই অবস্থা, তারওপর ঘোড়ায় চেপে আসার ধকল কিছু কম নয়। সবাই আবার এক জায়গায় হওয়ায় চিন্তার অবসান হল। তবে দেবেন্দ্রর মতো পাহাড়ি বন্ধুর সাহায্য ও সহযোগিতা কিন্তু ভোলার নয়।
পরদিন সকালেই চারজনে চলে গেলাম কল্পেশ্বরে। কাজলদার পায়ে কিছুটা ব্যাথা রয়েছে। কিন্তু লাঠি নিয়ে কোনও রকমে হাঁটছেন। কল্পেশ্বর দর্শনের জন্য এটুকু কষ্ট করতেও রাজি। আধ ঘণ্টার পথ প্রায় দেড় ঘণ্টায় পৌঁছলেন কাজলদা। দেখি কুঠিয়া থেকে বাইরে বেরিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন বাঙালি বাবা। কাজলদাকে ধরাধরি করে একপাশে বসানো হল। কুঠিয়ায় ঢুকে দেখি চা তৈরি করে রেখেছেন বাঙালি বাবা। কি করে বুঝলেন মনটা একটু চা-চা করছিল। চা পানের পর শুরু হল পুজোর কাজ। নিচে কল্প গঙ্গা থেকে জল তুলে আনা হল। কল্পেশ্বরের মূল মন্দিরে কোনও বিগ্রহ নেই। একটি পাথরের খণ্ডকেই বিগ্রহ রূপে পুজো করা হয়। পুজোর শেষে প্রসাদের পালা। বাঙালি বাবার তৈরি হালুয়া। আমাদের জন্য কত পরিশ্রম করতে হচ্ছে, ভেবে সংকোচ বোধ করি। কিন্তু না খেয়ে উপায় নেই। এত সুস্বাদু হালুয়া বোধহয় কখনও খাইনি। খেতে খেতে বাঙালি বাবার সঙ্গে গল্প চলে। হঠাত্ বৃষ্টি নামে। চারজনই এসে ঢুকি বাঙালি বাবার কুঠিয়ায়। ভিতরে সবসময় উনুন জ্বলছে। দেখি প্রেসার কুকারে রান্নার আয়োজন করছেন। বুঝতে অসুবিধা হয়না, আমাদের দ্বিপ্রাহরিক আয়োজন। বারন করলেও শোনেন না। দেশের লোককে নাকি না খাইয়ে ছাড়বেনই না। শ্রদ্ধায় মাথা নিচু হয়ে যায়। এক দুর্ঘটনায় বাঙালি বাবার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। আরেকটি চোখেও ভালো দেখতে পান না। শীর্ণকায় চেহারা। কিন্তু অন্তরটি পরম মমতায় পরিপূর্ণ। বৃষ্টির মধ্যেই পরিবেশন করেন গরম গরম খিচুড়ি আর আলু ভাজা। পাশে বসিয়ে খাওয়ান। এতেই নাকি তাঁর পরম প্রাপ্তি।
বৃষ্টি ধরলে ঠাণ্ডাটা একটু বাড়ে। সঙ্গে হাওয়ার দাপট। পায়ের ব্যাথায় কাজল দা এতটাই কাতর যে গরম জামা আনতে ভুলে গেছেন। এতক্ষণ তো বাঙালি বাবার দেওয়া কম্বলের ভিতর ছিলেন। কম্বলটি ফেরত দিতে গেলে কিছুতেই নিলেন না বাঙালি বাবা। দেবগ্রাম ফিরে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন। সঙ্গে আগামিকালের পথের জন্য টিফিন করে দেবার প্রতিশ্রুতি। এবার তো যাওয়ার পালা। বাঙালি বাবার থেকে চলে আসতে মন চায়না। ইচ্ছে হয়, এই পরম মমতার মাঝে আরও কিছুক্ষণ থাকি। কিন্তু সন্ধে হয়ে আসছে। এবার ফিরতেই হবে। বাঙালি বাবাকে বিদায় নমস্কার জানাতে গেলে তিনি বুকে জড়িয়ে ধরেন। দেখি চোখের কোলে জলের ধারা। হয়তো তাঁরও কোনও প্রিয়জনের কথা মনে পড়ে যায়। হয়ত আমার মতই কেউ ছিলেন বাঙালি বাবার খুব কাছের কেউ। কিন্তু জিজ্ঞেস করতে সাহস হয়না। ফিরে চলি দেবগ্রামের পথে। পিছনে ফেলে আসি বাঙালি বাবার স্মৃতি। মনে হয়, এক দৌড়ে চলে যাই বাঙালি বাবার কাছে। দুদিনেই খুব আপন মনে হয়। কিন্তু ততক্ষণে নেমে এসেছি অনেকটা পথ। আর ফেরা হয় না।