তারুণ্যের স্পর্ধায় মোদীর জয়রথ, বার্ধক্যের জরায় ধুঁকছে বঙ্গ সিপিএম

বৃদ্ধতন্ত্র থেকে কি মুক্তি পাবে আলিমুদ্দিন? 

Updated By: Mar 4, 2018, 09:34 PM IST
তারুণ্যের স্পর্ধায় মোদীর জয়রথ, বার্ধক্যের জরায় ধুঁকছে বঙ্গ সিপিএম

নিজস্ব প্রতিবেদন: ত্রিপুরা বিজয়ের পর নিজের ভাষণের তারুণ্যের জয়গান করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। গর্ব করে বলেছেন, ''ত্রিপুরায় বিজেপির বেশিরভাগ বিধায়কই তরুণ। এমনকি কয়েক জনের তো বয়স ২৫ কিনা, তা নিশ্চিত করতে জন্মের শংসাপত্র দেখা হয়েছে।'' তরুণদের নিয়ে যখন একের পর এক শৃঙ্গ জয় করছে গেরুয়া শিবির, তখন বার্দ্ধক্যের ভারে জরাজীর্ণ রাজ্যের সিপিএম। পশ্চিমবঙ্গ তো হাতছাড়া হয়েছে। শুক্রবার সিপিএমের হাত সাতরাজার ধন মানিকও হারিয়ে গিয়েছে। আছে বলতে, কেরল।

নিজের রাজ্যে ভোটবাক্সে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ চলছেই। পড়শি রাজ্যেও গেরুয়া ঝড়ে ধূলিসাত্‍ ২৫ বছরের লালদুর্গ। শিবরাত্রির সলতের মত টিমটিম করছে সিপিএমের কেরল। সঙ্কটকালে ঘুরে দাঁড়াতে কাদের ওপর নেতৃত্বের গুরুভার দেওয়া হবে? সিপিএমের বৃদ্ধতন্ত্র নিয়ে এই প্রশ্ন বহুদিনের। পোড় খাওয়া পক্ককেশ নাকি তরুণ ব্রিগেড? তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।   

 কার্যকর হলে, পঁচাত্তরের গেরোয় দল থেকে বাদ পড়বেন বিমান বসুর মতো নেতারা। তা এনিয়েই সরগরম হতে চলেছে কাল থেকে শুরু হতে চলা সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন। কথায় কথায় সংস্কারের বুলি আওড়ানো সিপিএমে তরুণ প্রজন্ম কই? 

শনিবার সকাল থেকে ত্রিপুরার ভোটের ফল নিয়ে যখন টেনশন বাড়ছে, তখন আলিমুদ্দিনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর বৈঠক শুরু হয় এই বিষয়টিকে সামনে রেখে। সূত্রের খবর, বৈঠকে দলের একটা বড় অংশ বয়স্ক নেতাদের গুরু দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পক্ষে জোর সওয়াল করেন। ৭৫ বছর বয়স হলে আর রাজ্য কমিটিতে থাকা যাবে না। দলে বৃদ্ধতন্ত্র হটাতে কলকাতা প্লেনামে এই সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএম। কলকাতা প্লেনামের পর এটাই বঙ্গ ব্রিগেডের প্রথম রাজ্য সম্মেলন। ৭৫ এর সীমারেখার নিয়ম লাগু করা হবে কিনা তা নিয়ে এখন জোর বিতর্ক। সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৭৫। এদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি সদস্যের বয়স ৫০ থেকে ৭০ এর মধ্যে প্রায় ১০ জন রয়েছেন পঁচাত্তরের ওপরে।

এই তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন বিমান বসু। সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক এবং দীর্ঘদিনের বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর বয়স এখন ৭৭। পঁচাত্তরের কোটায় রয়েছেন দীপক দাশগুপ্ত, দীপক সরকারের মতো বর্ষীয়ান নেতারা। ৭৫ না হলেও একেবারে বর্ডার লাইনে রয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী। 

বয়স পচাত্তরের কোঠা ছুলেই আর রাজ্য কমিটিতে থাকা যাবে না। এই নিয়ম সিপিএমে কার্যকর হলে বিমান বসু, দীপক সরকার, দীপক দাশগুপ্তের মতো নেতারা সরাসরি রাজ্য কমিটির সদস্যপদ খোয়াবেন।  সোমবার সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন। সেখানে যে এই বিতর্ক উঠবে, দলের সাধারণ সম্পাদকের কথায় তা স্পষ্ট। 

আরও পড়ুন- ৩৬০ ডিগ্রি! মোদীর 'মন কি বাত' নিয়ে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে

আডবাণী-মুরলী মনোহর থেকে মোদী-অমিত শাহ, সনিয়া থেকে রাহুল। সময়ের দাবি মেনে ব্যাটন বদল হয়েছে বিজেপি-কংগ্রেসের মতো দলগুলিতে। খাদের কিনারায় চলে যাওয়া সিপিএম কী সেই সাহস দেখাতে পারবে? উঠছে প্রশ্ন। দলের তরুণ নেতাদের দায়িত্ব না নিলে আগামী প্রজন্ম উঠে আসবে কীভাবে? সেই প্রশ্নও উঠছে। সংস্কারবাদীরা নজির হিসেবে তুলে ধরছেন গেরুয়া শিবিরকে। মহারাষ্ট্রে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীস তরুণ নেতা। ত্রিপুরার সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের বয়স ৪৮। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, যোগ্য নেতা তুলে আনতে না পারলে সামনের দিনে আরও ভয়ঙ্কর পরিণতি অপেক্ষা করে রয়েছে, সেটা আলিমুদ্দিনের মাথায় কবে ঢুকবে? নাকি দলের চেয়েও বড় গদি?    

আরও পড়ুন- ত্রিপুরায় বিজয় উত্সবের আবহেই আলাদা রাজ্যের দাবিতে চাপ বাড়াল বিজেপির শরিক

  

.