প্রবল বিতর্কের মুখে পরিবহন সচিবের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন আলাপন
প্রবল চাপের মুখে ব্যাকফুটে সরকার। নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব গ্রহণের পর শেষপর্যন্ত পরিবহন সচিবের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সংবিধান বিশেষজ্ঞদের ধারনা, বিতর্ক আদৌ তাঁর পিছু ছাড়ল না।
সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়ের ইস্তফার পর মঙ্গলবার তড়িঘড়ি অস্থায়ী নির্বাচন কমিশনার হিসাবে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। একইসঙ্গে পরিবহণ সচিবের দায়িত্বও তিনি সামলাবেন বলে নবান্ন সূত্রে জানানো হয়। এরপরই বিতর্ক দানা বাধে। রাজ্য সরকারের মুখ্য কার্যালয় নবান্নে আসেন না রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। প্রয়োজনে আলোচনার জন্য মুখ্যসচিব বা স্বরাষ্ট্রসচিবকে যেতে হয় কমিশনারের দফতরে। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হলে তাঁর কাছে রিপোর্ট করতে যেতে হবে রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র বা স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত সিনিয়র আইএএস অফিসারকে। কমিশনারের অফিসে গিয়ে আলাপনবাবুর মত জুনিয়র আইএএসকে 'স্যার' বলে সম্বোধন করতে হবে।
আবার সেই আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ই যখন পরিবহণ দফতরের প্রধান সচিব হিসাবে নবান্নে বসবেন, তখন মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে 'স্যার' বলে সম্বোধন করতে হবে আলাপনবাবুকে। এমনকী মন্ত্রীদেরও 'স্যার' বলে সম্বোধন করতে হবে তাঁকে। বুধবার দুপুরেই অস্থায়ী কমিশনারের হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। বিতর্ক এড়াতে পরিবহণ সচিবের পদ থেকে ইস্তফাও দেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনারের পদে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়োগ অস্থায়ী। সূত্রের খবর, ভবিষ্যতে প্রশাসনের আরও গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁকে বসাতে চায় সরকার। আলাপনবাবু নিজেও সরকারের কাজেই ফিরতে আগ্রহী বলেও সংশ্লিষ্ট মহলের খবর। অর্থাত্ আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি কাজে ফিরে যাওয়া একরকম নিশ্চিত। সরকারি পদে ফিরে যেতে আগ্রহী আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় কি আদৌ সেই প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে সংঘাতে যাবেন?
নিরপেক্ষ কিন্তু সরকারের পক্ষে অস্বস্তিকর কোনও সিদ্ধান্ত কি তাঁর পক্ষে আদৌ নেওয়া সম্ভব হবে? সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, না। সম্ভব নয়। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কারণেই অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের নির্বাচন কমিশনার পদে বহাল করাটাই অঘোষিত রীতি। কিন্তু কর্মরত আমলা আলাপন বন্দ্য়োপাদ্যয়কে অস্থায়ীভাবে কমিশনারের পদে বসিয়ে সেই রীতি ভাঙা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আলাপনবাবু সাংবিধানিক পদে বসলেন ঠিকই। কিন্তু কমিশনের রাশ আসলে রইল নবান্নর হাতেই। তাঁদের মতে, সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়কে পদ ছাড়তে একরকম বাধ্য করা হয়েছে। আপাতত আলাপনের হাতে স্টিয়ারিং থাকলেও রিমোট থেকে গেল সেই নবান্নেই।