আন্নার আন্দোলনকে ফালতু বলেছিলেন মমতা! এপিডিআর-এর অভিযোগ চিঠিতে উল্লেখ এমনই
লোকসভা ভোটের প্রচারে আন্না হাজারেকে পাশে পেতে তত্পর তৃণমূল। আন্নার দুর্নীতি বিরোধী ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে ভোটবাক্সে ফায়দা তুলতে চায় এরাজ্যের শাসকদল। আজ দুই শিবিরের বৈঠক।
লোকসভা ভোটের প্রচারে আন্না হাজারেকে পাশে পেতে তত্পর তৃণমূল। আন্নার দুর্নীতি বিরোধী ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে ভোটবাক্সে ফায়দা তুলতে চায় এরাজ্যের শাসকদল। আজ দুই শিবিরের বৈঠক।
ঠিক তার আগে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জানিয়ে আন্না হাজারেকে চিঠি দিয়েছে এপিডিআর। মানবাধিকার সংগঠনের লেখা ওই চিঠির ছত্রে ছত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে।
একটি চিঠি। এবং তা মোক্ষম সময়ে। লোকসভা ভোটের প্রচারে আন্না হাজারেকে পাশে পেতে, তৃণমূল শিবির যখন চরম ব্যস্ত, ঠিক তখনই রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা করে চিঠি দিয়েছে এপিডিআর। ওই চিঠিতে রাজ্যে নাগরিক অধিকারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। চিঠিতে লেখা হয়েছে,
নতুন সরকারের ৩২ মাস হলেও, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে লোকায়ুক্ত নিয়োগে এখনও কোনও উদ্যোগ নেননি। লোকপাল ইস্যুতে সরকার ও শাসকদল পুরো নীরব।
আন্না-মমতা সাক্ষাতের মুখে অতীত টেনে এনেছে এপিডিআর। চিঠিতে লিখেছে, লোকপাল ইস্যুতে অতীতে আন্না হাজারেকে এড়িয়ে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি আন্না সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, একসময় তাঁর মন্তব্য ছিল, আন্না আর না।
এপিডিআরের দাবি--
১) লোকপাল ইস্যুতে আন্না যখন শিরোনামে, তখন তাঁর সঙ্গে একফ্রেমে ছবি তুলতে আপত্তি জানিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী
২) প্রবীণ সমাজকর্মীর আন্দোলন সম্পর্কে মমতার মন্তব্য ছিল, যত্ত সব ফালতু
এপিডিআরের চিঠির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি। সেখানে লেখা হয়েছে, অশোক গাঙ্গুলির অপসারণের পর থেকে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন পুরো নিষ্ক্রিয় মুখ্যমন্ত্রী ও সরকার সচেতন ভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
কামদুনি, মধ্যমগ্রাম, লাভপুরের ঘটনার উল্লেখ করে চিঠিতে এপিডিআর লিখেছে, নারী নির্যাতনে রাজ্য দেশের মধ্যে শীর্ষে। অথচ এধরনের ঘটনায় যাঁরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছেন, সরকার তাঁদের বিরুদ্ধেই কড়া অবস্থান নিচ্ছে।
পলাতক দেখিয়ে নাগরিক আন্দোলনের কর্মীদের নামে চার্জশিট ধরানো হচ্ছে। রাজ্যে তথ্যের অধিকার আইন প্রায় শিকেয় উঠেছে বলে চিঠিতে অভিযোগ করেছে এপিডিআর। লেখা হয়েছে,পশ্চিমবঙ্গে তথ্য কমিশন কার্যত নিষ্ক্রিয় কোনও সরকারি দফতর সময়মতো তথ্যের অধিকার সংক্রান্ত আবেদনের জবাব দেয় না।
আন্নার ইউএসপি তাঁর দুর্নীতি বিরোধী ভাবমূর্তি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কেও একই দাবি করে তৃণমূল শিবির। কিন্তু সারদা কাণ্ডের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এপিডিআর লিখেছে,এপিডিআর আশা করে, আন্নাজি সারদা প্রতারণা নিয়ে সরব হবেন। কারণ মন্ত্রীমহল এবং তঋণমূলের ওপরতলার একটা অংশ এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত রাজ্য সরকার যাতে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে যথাযথ ভূমিকা নেয়, তার জন্য আন্না কাছে পাঁচ দফা আর্জি জানিয়েছে এপিডিআর। এগুলি হল,
রাজ্যে কবে লোকায়ুক্ত নিয়োগ হবে এবং আদৌ শক্তিশালী লোকায়ুক্ত আইন তৈরি করা হবে কিনা, মুখ্যমন্ত্রীকে তা জনসমক্ষে ঘোষণা করতে হবে
রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে যাতে চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয় এবং কমিশন যাতে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে, তার আবেদন জানানো হয়েছে
তথ্য কমিশন যাতে ঠিকমতো কাজ করতে পারে, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্যোগী হওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে
রাজ্যে চিটফান্ড ব্যবসা নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে সারদা প্রতারণায় যুক্ত নেতামন্ত্রীদের সরকার থেকে সরানোর আবেদন জানানো হয়েছে
এর পাশাপাশি, জঙ্গলমহল থেকে অবিলম্বে যৌথবাহিনী প্রত্যাহার এবং রাজনৈতিক বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে এপিডিআর। এপিডিআরের আবেদন, মুখ্যমন্ত্রী যাতে এই পদক্ষেপগুলি নেন, তার জন্য তাঁকে পরামর্শ দিন আন্না হাজারে।