বিনয় বনাম বিমল! একুশের আগে পাহাড়ের চাবিকাঠি কার হাতে?
এই ঘটনাক্রমের উপরেই নির্ভর করছে বিধানসভা ভোটে পাহাড়ের জনাদেশ।
নিজস্ব প্রতিবেদন: কে বিমল গুরুং? আমাদের সিলেবাসে ওই নামটাই নেই! মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক ঘণ্টা বৈঠক সেরে বেরিয়ে একথাই বললেন বিনয় তামাং। দীর্ঘ ৩ বছর গা ঢাকা দেওয়ার পর বিমল গুরুং ফিরতেই পাহাড়ে এখন জটিল অঙ্ক! জটিল অঙ্ক নয়, বলা ভালো, ক্ষমতার দখল। বিমল বনাম বিনয়ের এই লড়াইয়ের কারণ বলতে গেলে এটাই।
৩ বছরের অজ্ঞাতবাস কাটিয়ে পঞ্চমীর সন্ধেয় কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেছেন বিমল গুরুং। একুশের ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে পাহাড়ে ঘাসফুল ফোটানোর শপথ নিয়েছেন সেদিনই! আস্থা রেখেছেন মমতার নেতৃত্বে। স্বাভাবিক পাহাড়ে ফিরে যাওয়ার কথা তাঁর। কিন্তু বিমল পাহাড়ে ফিরলে বিনয় তামাঙের কী হবে? মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিনয় তামাং, অনীত থাপাদের বৈঠক ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। কারণ, এই ঘটনাক্রমের উপরেই নির্ভর করছে বিধানসভা ভোটে পাহাড়ের জনাদেশ। গুরুংয়ের এই কামব্যাক রাজনীতির পারদ চড়ালেও বিনয় তামাং-অনীত থাপারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, গুরুংকে পাহাড়ের একচুল জমিও ছাড়বেন না তাঁরা! মঙ্গলবার পাহাড়-পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন জিটিএ-র বোর্ড অফ অ্যাডমিনের চেয়ারম্যান অনীত থাপা এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রেসিডেন্ট বিনয় তামাং। বৈঠক শেষে আবারও কড়া ভাষায় তাঁরা জানিয়ে দিলেন, বিমল গুরুং-রোশন গিরিরা তাদের সিলেবাসেই নেই! বিনয় বলেন,"বিমল কে? কেন তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন? রোশন কে? ওর ব্যাপারে কোনও আলোচনা হয়নি। ওর নামে ১৬০টি মামলা আছে। কোর্ট বলেছে অপরাধী। তাই এব্যাপারে বিচারব্যবস্থাকে সম্মান করতে হবে। আমরা মাঠে-ময়দানে আছি, ওরা নয়।"
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এদিন প্রায় ৫০ মিনিট বৈঠক করেন পাহাড়ের দুই নেতা। সেখানে ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী ও প্রশাসনিক কর্তারা। সূত্রের খবর, এদিন বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা হয় তামাংয়ের। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তামাং বলেন,''শুধু প্রশাসনিক বিষয়েই কথা হয়েছে!''
একদিকে গুরুং বলছেন তিনি মমতার নেতৃত্বেই পাহাড়-জয় করবেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গুরুংয়ের সিদ্ধান্তকে স্বাগতও জানায় শাসকদল। যদিও তামাং বলছেন, সেই টুইট তো আর মুখ্যমন্ত্রী করেননি! পাহাড়ের রাজনীতিতে পারদ চড়াচ্ছে বিমল বনাম বিনয়ের লড়াই। গুরুংয়ের কামব্যাকের প্রতিবাদে দফায় দফায় পাহাড়-তরাইয়ে মিছিল করেছেন তামাংপন্থীরা। এদিনও তামাং যখন কলকাতায় বসে, তখন দার্জিলিংয়ে গুরুং-গো-ব্যাক স্লোগানে শান দিয়েছেন জিটিএ সমর্থকদের একাংশ!
ভোটের মুখে ফের সরগরম পাহাড়-রাজনীতি। অনেকেই বলছেন, পাহাড়ের মানুষের 'গোর্খাল্যান্ড' আবেগই পুঁজি বিনয় ও বিমলের। আর তা নিয়েই চলছে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি। যে রাজনীতি খুন-খারাপিও দেখেছে পাহাড়ে। আবেগ নয়, আসলে দিনের শেষে তাই সবটা ক্ষমতার ভাগ।
আরও পড়ুন- ক্ষমতার দম্ভে ২৩৫ উঠে গিয়েছিল, মানুষই শেষ কথা: শুভেন্দু