পুজো উদ্বোধনে তন্ময় ভট্টাচার্য! পার্টি লাইন নির্ধারণে ‘দ্বিধাবিভক্ত’ আলিমুদ্দিন
দুর্গোত্সবে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও জনসংযোগ ধরে রাখতে বুক স্টলের আয়োজন করে সিপিএম। পুজো মণ্ডপে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপাচারিতা করেন বাম নেতারা
মৌমিতা চক্রবর্তী: দুর্গাপুজো উদ্বোধনে সিপিএম! অবাক হলেও জনসংযোগের এমন মঞ্চ কে-ই বা হাতছাড়া করতে চায়। জানা যাচ্ছে, নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে পুজো উদ্বোধনের আমন্ত্রণ পেয়েছেন দমদম উত্তরের বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য। এবং তা সাদরে গ্রহণও করেছেন তিনি। আর তাতেই অস্বস্তি বেড়েছে আলিমুদ্দিনের। প্রশ্ন উঠছে, পার্টি কংগ্রেসের সংশোধিত লাইন অনুযায়ী সরাসরি পুজো উদ্বোধন করতে পারেন কিনা সিপিএম-এর নেতারা?
সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যের যুক্তি, পুজো উদ্বোধন করা যাবে না খাতায় কলমে কোথাও লেখা নেই। বাঙালির এই উত্সবে অংশগ্রহণ করলে সমস্যাই বা কোথায়? তবে, সিপিএম-এর একাংশ পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রের মতো প্রথম সারির নেতৃত্বের কাছেও প্রতিবছর এমন অফার আসে। কিন্তু তাঁরা সন্তর্পণে এড়িয়ে যান। পার্টি কংগ্রেসের সংশোধিত লাইন অনুযায়ী অন্যের ধর্মীয় ভাবাবেগকে অসম্মান না করে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলে সিপিএম।
দুর্গোত্সবে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও জনসংযোগ ধরে রাখতে বুক স্টলের আয়োজন করে সিপিএম। পুজো মণ্ডপে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপাচারিতা করেন বাম নেতারা। এই ট্র্যাডিশন কোনও নতুন নয়। তবে, সুভাষ চক্রবর্তীর পরবর্তী পর্যায়েও খুব বেশি হেরফের দেখা যায়নি। তারাপীঠে পুজো দিয়ে সিপিএম-কে চরম বিতর্কে মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন সুভাষ চক্রবর্তী। এ দিন তন্ময়বাবুর পুজো উদ্বোধনের প্রসঙ্গে সেই উদাহরণই টেনে নিয়ে আসছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
আরও পড়ুন- দেবযানীকে জেরার পর রাজীব কুমারের আপ্ত সহায়ককে ডেকে পাঠাল সিবিআই
কী বলছেন যাদবপুরের বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী? তিনি বলেন, “আমার কাছেও এমন পুজো উদ্বোধনের আমন্ত্রণ আসে। এ বিষয়টি দায়িত্ব নিয়ে এড়িয়ে যাই। আমার থেকে বেশি বয়স্ক মানুষদেরকে এই ভার দিতে বলি।” সুজনবাবুর যুক্তি, ব্যক্তিগত বিশ্বাস আলাদা কথা। উত্সবে সব মানুষ অংশগ্রহণ করেন। বিবেচনা বোধ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তবে, তন্ময় ভট্টাচার্যের পাশে দাঁড়িয়েছেন কামারহাটির সিপিএম বিধায়ক মানস মুখার্জি। পুজো উদ্বোধন তিনি না করলেও, তাতে যে কোথাও বাধা নেই কট্টর সিপিএম নেতাদের এ কথা বুঝিয়ে দেন।
পুজো উদ্বোধনে এত দিন একচেটিয়া দখল ছিল তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের। এ বছর তাতে ভাগ বসাতে চলেছে বিজেপি। খোদ অমিত শাহ এসে পুজো উদ্বোধন করতে পারেন। ২০২১-এর নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই জনসংযোগে নামতে চাইছে গেরুয়া শিবির। আর ‘ভেন্টিলেশনে’ থাকা সিপিএম কি এখনও শুধুই ‘বুক স্টলে’ সীমাবদ্ধ থাকবে, না কি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গা ভাসাবে, এই সিদ্ধান্তে আলিমুদ্দিনের কোর্টেই বল ঠেললেন তন্ময়-মানসবাবুরা। উল্লেখ্য, এ মাসের শেষেই রাজ্য কমিটির বৈঠক। তন্ময় বাবুর এই সিদ্ধান্ত বৈঠকে যে ঝড় তুলবে, এ কথা মেনে নিচ্ছেন আলিমুদ্দিনের অনেকেই।